দিনাজপুরে জমে উঠছে শীতের কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা

প্রকাশিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:৩৮:৩৮ || পরিবর্তিত: ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:৩৮:৩৮

দিনাজপুরে জমে উঠছে শীতের কাপড়ের জমজমাট ব্যবসা

দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুর শহরে সবচেয়ে বেশি ভীড় শীতের কাপড়ের দোকানে। শহরের বাইরে গ্রামের বাজারগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে। শুধু দিনাজপুর শহরে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার গরম কাপড়। শীত শুর সাথে সাথে মানুষ তাই ছুটছে শীতের গরম কাপড়ের দোকানে।

দিনাজপুর শহরে কাচারি মার্কেটে সবচেয়ে বেশি কাপড় বিক্রি হয়। এই মার্কেটে ছোট-বড় প্রায় ১০০ টি দোকান রয়েছে।  শীতকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের বাহির থেকেও অনেকেই এখানে ব্যবসা করতে আসেন। স্বল্প আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের পদচারনায় মুখরিত দিনাজপুরের পুরাতন কাপড়ের বাজার।

শীতের নতুন কাপড়ের চেয়ে বিদেশি পুরনো কাপড়ের চাহিদা বেশি বলে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বিদেশি পুরনো শীতের কাপড়ের দাম তুলনামুলক কম। তাছাড়া এই কাপড়গুলো দেখতে সুন্দর, মানসম্পন্ন ও টেকসই হওয়ায় ক্রেতাদের এসব কাপড়ে আগ্রহ বেশি।

আশে-পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ শহরে আসছে গরম কাপড় কিনতে। পুরাতন শীতবস্ত্রের দাম গতবারের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তারপরও নতুনের চেয়ে তুলনামূলক কম দাম বলে শহর-গ্রামের সব শ্রেণীর মানুষ এখান থেকে শীতের পোশাক কিনছে।

কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, ট্রাউজার, ওভারকোট, হাফ ও ফুল হাতা গেঞ্জি, কম্বল, মেয়েদের কার্টিগান, হাতমোজা ও পা মোজার ক্রেতার সংখ্যা বেশি। এখানে প্রতিদিনই শত শত মানুষ শীতের গরম কাপড় কিনতে ভীড় জমাচ্ছে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর পুরাতন কাপড়ের দাম অনেক বেশি বলে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। প্রতিবছরেই দাম কিছুটা বাড়ে বলে তারা মনে করেন।  

ব্যবসায়িরা আভিযোগ করেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর পুরাতন কাপড়ের দাম ব্যবসায়িরা বেশি করে নিচ্ছেন। ফলে তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতাদেরও অভিযোগ, দাম বেশি দিতে হচ্ছে।

পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ীরা প্রতি বছর শীতের সময় মহাজনদের কাছ থেকে গরম কাপড়ের গাইড নিয়ে তা খোলা বাজারে খুচরা বিক্রি করেন । গত বছর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় একটি কাপড়ের গাইট বা বেল কেনা যেতো। এ বছর একটি গরম কাপড়ের গাইড বা বেল কিনতে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা লাগে।

পুরাতন কাপড়ের পাইকারী ব্যবসায়ী আল মামুন (২৫) বলেন, “শীত উপলক্ষে চীন, তাইওয়ান, জাপান,  কোরিয়া ও রাশিয়া থেকে পুরাতন শীতবস্ত্র আসছে। পরিবহন খরচ, ব্যাংক ঋণের কারণে কাপড়ের বেলের দাম বেড়ে গেছে। আমরা পাইকারী বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম,ঢাকা ও রংপুর থেকে কাপড়ের বেল ট্রাকে করে আনি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। সবকিছুর দাম বাড়ে ফলে কাপড়ে দামও বাড়ে।”

তিনি বলেন, “আমরা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বাকিতে কাপড় দেই, তারা বিক্রি করে টাকা শোধ করে। আমরা ব্যাংক লোন নিয়ে ব্যবসা চালাই কিন্ত ব্যাংকগুলো বেশি টাকা লোন দিতে চায় না। আবার অনেক কিছু ম্যানেজ করতে আমাদের খরচ বেশি পড়ে। দিনাজপুরের বিক্রি বেশ ভালো।

আরেক ব্যবসায়ী মো: সুমন বলেন, “১০০ কেজি ওজনের এক বেল ছোটদের পুরনো শীত পোশাক চট্টগ্রামে সাড়ে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। বড়দের ১০০ কেজি ওজনের এক বেল পোশাকের দাম ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা। ৮০ থেকে ১০০ কেজি ওজনের জ্যাকেট ও সোয়েটারের এক বেলের দাম পড়ছে ১৩ হাজার টাকা। এখানে এনে পরিবহন খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে দাম বেশি পড়ছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম বাড়ছে।”

খুচরা ব্যবসায়ী আরিফ জানান, “একটি গাটে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকার কাপড়ও থাকে। দামাদামি করে সব দাম ঠিক করতে হয়। তবে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি শুরু হয়েছে নভেম্বর থেকে যতোদিন শীত থাকবে, ততোদিন বিক্রি কমবে না।”

কাচারি ঘুরে দেখা গেছে, গত বছর বাচ্চাদের যে কাপড় ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এবার ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়দের যে কাপড় ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কেনা গেছে, এবার তা কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। কাচারির পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটি শীতবস্ত্রের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।

 গত বছর যে সোয়েটার বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়, সে সোয়েটার এবার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। একইভাবে জ্যাকেট, ট্রাউজার, কম্বলসহ অন্য গরম কাপড়ের দামও বেশি।  কাপড় কিনতে আসা দিনাজপুর কলেজের ছাত্রী সুমনা আক্তার জানান,  পুরাতন কাপড়ের মধ্যে অনেক ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। তবে বেছে কিনতে হয়। গত বছরের চেয়ে এবছর প্রতিটি কাপড়ের দাম দ্বিগুন।”

প্রজন্মনিউজ২৪/আঃমান্নান/তাফহিমুল ইসলাম

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ