আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন এটিএম শামসুজ্জামান

প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৫:২৩:১৯ || পরিবর্তিত: ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০৫:২৩:১৯

আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন এটিএম শামসুজ্জামান

বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার। গত কয়েক দশকে সুঅভিনয়ে অগণিত দর্শকের প্রিয় একজন অভিনেতা। ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি। এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে-

কেমন আছেন?

ভালো আছি। গত কয়েক মাস অসুস্থতায় দিন কাটছে। তবে এখন আগের চেয়ে সুস্থ বোধ করছি। হাসপাতালে [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপতাল] শুয়ে-বসে দিন কাটছে। পেটে একটু সমস্যা ছিল। ক্রমেই তা দূর হচ্ছে। হাসাপাতাল থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরতে চাই।

এখন অভিনয় থেকে দূরে। অবসর কাটে কী করে?

বই পড়েই সময় কাটে। হাসপাতালেও আমার নিত্যসঙ্গী বই। কোরআন-হাদিসের বই, নজরুল-রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সাহিত্যের বই পড়তে ভালোবাসি। হাসপাতালে যারা আমাকে দেখতে এসেছেন; অনেকেই বই নিয়ে এসেছেন। প্রিয় উপহার পেয়ে আমিও মহাখুশি।

শিগগিরই কি অভিনয়ে ফিরবেন?

আমি অভিনয়ের মানুষ। অভিনয়ই আমার সব। এ ভুবনে তো ফিরতেই চাই। কয়েক সপ্তাহ আগে অসুস্থতা নিয়েও হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় 'ইত্যাদি' ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলাম। হাসপাতাল থেকে ছুটি মিললেই এবার আর বাসায় থাকা হবে না। ভাবছি, আবার পুরোদমে অভিনয়ে মনোনিবেশ করব। অভিনয় থেকে আমার পক্ষে দূরে থাকা অসম্ভব। প্রতিদিন ক্ষণ গুনছি, কবে আবার অভিনয় আঙিনায় যেতে পারব! আশা করছি, অভিনয়ে ফেরার দিন খুব কাছেই।

কোনটা দিয়ে কাজের খাতা খুলবেন?

আমি অসুস্থতার আগেই এসএ হক অলিকের পরিচালনায় 'জায়গীর মাস্টার' ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছিলাম। অনেক দিন হয়েছে, এ নাটকের শুটিং করিনি। এ নাটকটি দিয়েই কাজে ফেরার কথা ভাবছি। এ ধারাবাহিকে দর্শক আমার চরিত্রটি বেশ উপভোগ করছে। এতে আমিও সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। দর্শককে নিরাশ করতে চাইনি বলেই জীবনের এ বয়সে এসে শুধুই অভিনয় নিয়ে ভাবছি।

এবার একটু শুরুর দিকের কথা জানতে চাই...

মায়ের সঙ্গে ছবি দেখতে দেখতে অভিনয়ের প্রেমে পড়ি। সেই তাড়না থেকে হয়তো আমার অভিনয়ে আসা। প্রথম ছবি দেখেছিলাম 'নিউ পিকচার হাউস'-এ। ছবির নাম ছিল 'ঝুলা', পরে দেখলাম 'দাসী'। তবে আমি অভিনয় করি- এটা পরিবারের কেউ চাইতেন না। তারা আমাকে উকিল বানাতে চেয়েছিলেন। শুরুর দিকে নাটকের প্রম্পটার হলাম। ২০ টাকা করে পেতাম। সূত্রাপুরের এক হোটেলে তিন বেলা খেতাম। যখন অভিনয় শুরু করি তখন বাবা আমাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা শুরু করলেন। বাড়ি থেকে বেরই করে দিলেন। অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছে। আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে পাশের গলির জাফরান ভাইয়ের বাসায় থাকতাম। তার মা আমাকে অনেক পছন্দ করতেন। তিনি আমাকে অভিনয়ের ব্যাপারে অনেক সাহায্য করেছিলেন।

মন্দ মানুষ, কৌতুক অভিনেতাসহ নানা চরিত্রে দর্শকদের সামনে হাজির হয়েছেন। আপনার স্বাচ্ছন্দ্য কোথায়?

দর্শকের ভালোবাসাই আমার অভিনয়ের অনুপ্রেরণা। নায়ক হিসেবেও দুটি ছবি করেছিলাম। দুটোই ছিল ব্যবসাসফল। 'দায়ী কে' ছবিতে আমার গল্পের আমি হিরো। এতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাই। তারাশঙ্করের 'চাঁপাডাঙ্গার বউ' ছবিতে সেতাব মণ্ডল চরিত্রেও দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছি। কৌতুক অভিনেতা, ভিলেন ছাড়াও আমি নায়ক হিসেবে সফলতা পেয়েছি। তবে 'মন্দ মানুষ' হিসেবেই মানুষ আমাকে বেশি চিনেছে।

চলচ্চিত্রের একজন গুণী শিল্পী হিসেবে 'আজীবন সম্মাননা' পেতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রীয় এই স্বীকৃতিতে আপনার অনুভূতি কী?

একজন শিল্পীর জীবনে দর্শকের ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় সম্মাননা। দর্শকরা আমাকে এ সম্মাননা দিয়ে রেখেছে। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছি। তারপরও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমার কাছে বিশেষ এক সম্মান বলে মনে করি। এ প্রাপ্তির অনুভূতি অসাধারণ। সম্মাননা কাজের প্রতি ভালোবাসা, উৎসাহ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

আপনার কাছে জীবনের সংজ্ঞা কী?

জীবনকে ব্যাখ্যা করা অনেক কঠিন। তবুও ব্যাখ্যা দিতে হয়। এক কথায় যদি বলি তাহলে বলব, জীবন অনেক সুন্দর। ক্ষুদ্র জীবনে মানুষের ভালোবাসাই আমার কাছে বড়। মানুষকে ভালোবেসে জীবনকে অর্থবহ করে তুলতে হবে সবাইকে।

প্রজন্মনিউজ২৪/জাহিদ

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ