চীনে চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১২:৪৩:৪৫

চীনে চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

চীন প্রতিনিধি: চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশা শহরে অবস্থিত “চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে” অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণাঢ্য এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চীন এবং বিদেশি সংস্কৃতির মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মাধ্যমে “সাংস্কৃতিক বিনিময়” ছিল অনুষ্ঠানটির মূল উদ্দ্যেশ।মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে স্টেজ পারফরমেন্স মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির য়ুনথাং ক্যাম্পাসের থিয়ান শিয়াং ক্যান্টিনের সামনের মাঠে অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়েছে।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আন্তর্জাতিক কলেজের ডীন, পরিচালক, ডেপুটি পরিচালক, সচিব, শিক্ষক সহ অন্যান্যরা। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে আন্তর্জাতিক কলেজ কর্তৃপক্ষ।“কালচারাল কার্নিভ্যাল অব ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ - গ্লোবাল ভিলেজ ইন সিসাস্ট” শিরোনামে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়েই ছিল মূল অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে প্রত্যেক দেশের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে আসে।

জমকালো এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয় ৩২টি দেশ। ২৫টি স্টলে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তুলে ধরে নিজেদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য; যেখানে কয়েকটি দেশ একত্রে স্টল নিয়ে বসে। স্টলের সামনে সাজিয়ে রাখা হয় মুখরুচক, বাহারি সব খাবার। এসব স্টলে অনুষ্ঠান দেখতে আসা অতিথিদের পরিবেশন করা হয় ঐতিহ্যবাহী সব খাবার। বিদেশি স্টল ছাড়াও চীনের প্রদেশ এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য ভিত্তিক আরো বেশ কিছু স্টল ছিল।

যেসব স্টলে চীনা ক্যালিগ্রাফি, পেপার কাটিং ইত্যাদি বিষয়ের মতো দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।চাংশা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক কলেজের ডেপুটি ডিন গণ হাইয়িং বলেন, কলেজটিতে বর্তমানে ৬২ টি দেশ থেকে ৪৮০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে এবং সব দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগাযোগ ও শিক্ষার প্রচারের জন্য প্রতিটি সেমিস্টারে কার্নিভাল ইভেন্টগুলি করা হবে।স্টেজ পারফরমেন্স শুরু হয় একটি চীনা ড্যান্স দিয়ে। তারপর একের পর এক দল আসতে থাকে।

ঐসময় চীনা ড্যান্স দল ছাড়াও চারটি আন্তর্জাতিক ড্যান্স গ্রুপ নৃত্য পরিবেশন করে। বাংলাদেশ যখন নাচতে নামে, দর্শকরা তখন হইহুল্লরে মেতে উঠে। বাংলাদেশ অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশি বিদেশি শিক্ষার্থীরা নেচে গেয়ে মুখরিত করে রাখে পুরো প্রাঙ্গণ। চাংশায় সপ্তাহব্যাপী কনকনে ঠাণ্ডার পর রোদের উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানের আমেজও বাড়তে থাকে। যা পরিণত হয় ছাত্র-শিক্ষকের খুশির মিলন মেলায়।প্রায় ২০০ বাংলাদেশী শিক্ষার্থী অধ্যুষিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রছাত্রী খুব পাকাপুক্ত ভাবেই নিজেদের অবস্থান জানান দেয়। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে মাসব্যাপী প্রস্তুতি নেয়।

নাচ, গান, আবৃত্তি, খাবারদাবার এবং কারুকার্য শিল্পের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি দল। যা আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।একদল চৌকশ চারুশিল্পীদের হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি হতে থাকে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুলা, একতারা, ঢুল, বাঁশি সহ বিভিন্ন তৈজসপত্র। শিল্পীর তুলিতে ফুটে উঠে আবহমান গ্রাম বাংলার চিত্র। যা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে পুরো স্টল জুড়ে শোভা পাচ্ছিল। কারুকার্যে ছিলেন- অয়ন বড়ুয়া (কম্পিউটার সাইন্স ২য় বর্ষ), জিহাদ বিন তাজ (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), তৌহিদুল ইসলাম সোহান (কম্পিউটার সাইন্স ১ম বর্ষ) এবং মোহাম্মদ আজমাইন সালিম আলভী (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ স্টলে সাজিয়ে রাখার জন্য রাতভোর চলে রান্নার প্রস্তুতি।

তৈরি করা হয় অনেক পদের খাবার। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিঙ্গারা, সমুচা, পাটিসাপটা, বেগুনি, কয়েক রকরের পিঠা, পায়েশ ইত্যাদি। এসব প্রস্তুতিতে যারা ছিলেন,  তারা হলেন অনিক খান, আসাদুজ্জামান (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্নাতকোত্তর ২য় বর্ষ), আরিফ হোসাইন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), আরমান হোসাইন (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), উদ্দিন এএমএস বুরহান, একরামুল হক তামজিদ (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), কামাল, মোঃ জিসান, মোহাইমিনুল ইসলাম, (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), মোঃ রাহিমুল ইসলাম (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ২য় বর্ষ), মোঃ হাবিবুর রহমান (কম্পিউটার সাইন্স ১ম বর্ষ), মেহেদি হাসান, রফিকুল, সজিব শেখ, সাইদুল ইসলাম নয়ন (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), সানাউল্লাহ সানি (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), সাকিব রেজা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ) এবং সেলিম রেজা (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ)।

স্টল ডেকোরেশন এবং খাবার পরিবেশন করেছেন নওশাদ আনোয়ার (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), সাকিব ইলিয়াস ( সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), আশরাফ গালিব, মো: আরাফাত, তন্ময় বিশ্বাস এবং সুমাইয়া সহ প্রমুখ।গানের শেষাংশে যারা বাংলাদেশী সংস্কৃতি তুলে ধরেন, তারা হলেন মোঃ আল আমিন সরকার, মোঃ মির হোসাইন বাবলু, রাফি আলি এবং রিতপ চন্দ্র দাস (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ)।

বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে কবিতা আবৃত্তি করেন আজমাদ এবং অনুষ্ঠানের শেষের বক্তৃতা দেন।অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মিডিয়া এবং ফটোগ্রাফিতে ছিলেন- আতিকুল ইসলাম (পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থার্মোফিজিক্স, স্নাতকোত্তর ১ম বর্ষ), মুন রাজ (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ) এবং সিয়াম (কম্পিউটার সাইন্স ২য় বর্ষ)।সুন্দর এবং সাফল্যমণ্ডিত করে অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য ড্যান্স গ্রুপ প্রায় একমাস রিহার্সাল করে। বাংলাদেশী ক্লাসিক্যাল ড্যান্সের সাথে আধুনিক ড্যান্সের সমন্বয় ঘটিয়ে নৃত্য পরিবেশন করা হয়।

ড্যান্সের কোরিওগ্রাফি করেন- পূর্ণতা মেহজাবিন (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ)  এবং সাব্বির। ড্যান্সের মধ্যে আরো যারা ছিলেন আবু সাঈদ (ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), আবদুল আজিজ, তরিকুল তাজ (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ), প্রত্যয় কুমার রায়, মোঃ আবরার ইয়াজদানী, মোঃ ইকবাল হোসাইন, মোঃ রবিউল ইসলাম মুবিন, মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসাইন এবং সুমাইয়া তুল সুহি (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষ)।তাজাকিস্তান, 

উজবেকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান, ঘানা, মোজাম্বিক্যু, জামবিয়া, নামিবিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, টোগো,  সুদান, ইয়মেন, সোমালিয়া, আলবানিয়া, মন্টেইনগ্রো, মালাউই, গিনি, নাইজেরিয়া, জিম্বাবুয়ে, বুরুন্ডি সহ অন্যান্য দেশ অংশগ্রহন করে।

প্রজন্মনিউজ২৪/সাইদুল/নাজিম উদ্দীন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ