বিলুপ্তির পথে খেজুর ও তাল গাছ

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর, ২০১৯ ১১:৩৮:১৫

বিলুপ্তির পথে খেজুর ও তাল গাছ

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি : বনবিভাগের উদাসীনতা, অযত্ন অবহেলা আর চারা রোপনে অনিহা এবং ইটভাটায় খেজুর ও তাল গাছ পোড়াঁনোর ফলে রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে বিলুপ্ত হতে চলছে রসাঁলো খেজুর ও তাল গাছ।

খেজুর ও তাল গাছ বিলুপ্তির ফলে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে তাল, তালের রস, তালের পিঠা, খেজুর, খেজুরের রস এবং রস কেন্দ্রিক নানা লোকাচার-সংস্কৃতি। খেজুর ও তালের রস সংগ্রহের কাজে জড়িত গাছিদের কাজ না থাকায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। সামান্য কিছূ রস পাওয়া গেলেও তার দাম আকাশচুম্বি।

এক সময় মিঠাপুকুর উপজেলার পথ ঘাটসহ পুকুরপাড়ে অসংখ্য খেজুর ও তাল গাছ শোভা পেলেও কালের বির্বতনে আজ বিলুপ্তির পথে খেজুর বাগান। শহুরে জীবনে এখন আর চোখে পড়ে না খেজুর ও তাল গাছের বুক চিরে প্রাচীন পদ্ধতীতে গাছিদের ফোটা ফোটা রস সংগ্রহের সেই ব্যস্ততা। শীতের শুরুতেই খেজুর ও তাল গাছে দেখা যেত গাছিদের বাদুর ঝোলার দৃশ্য। বাদুর ঝোলা হয়ে মাটির হাড়িতে ফোটা ফোটা রস সংগ্রহের সেই ব্যস্ত গাছিদের এখন আর দেখা যায় না। আগে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাটলেই চোঁখে পড়তো সারি সারি খেজুর ও তাল গাছ।

 শীতের সকালে গাছিরা খেজুর রসের হাড়ি নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতো এবং নিমিষেই শেষ হয়ে যেতো খেজুর ও তালের রস। এখন আর পূরা এলাকা ঘুরেও চোখে পড়ে না খেজুর ও তালের গাছ কিংবা গাছিদের খেজুর ও তালের রস নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। কিছু কিছু এলাকায় ২/১ টি খেজুর ও তাল গাছ দেখা যায় সেগুলো দাঁড়িয়ে আছে কালের স্বাক্ষী হয়ে। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্য খেজুর রসের যে প্রিয়তা ছিল তা ক্রমেই কমে যাচ্ছে আর হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর ও তাল রসের খ্যাতি।

গ্রামাঞ্চলে শীত মৌসুমের সকালে খেজুর ও তালের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। আর খেজুরের রসের পিঠা ও তালের পিঠা এবং পায়েস তো খুবই মজাদার। এ কারণে শীত মৌসুমের গ্রামাঞ্চলে রসের ক্ষীর, পায়েস ও পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। শুধু খেজুরের রসই নয়, এর থেকে তৈরি হয় গুড় ও প্রাকৃতিক ভিনেগার। রস আর গুড় ছাড়া আমাদের শীতকালীন উৎসব ভাবাই যায় না। এখন আর খেঁজুর ও তাল রসের স্বাদ সবার ভাগ্যে জোটে না।

খেজুর ও তাল গাছ বিলুপ্তির কারণে গাছিরা তাদের শীতকালের এই পেশা ছেড়ে জড়িয়ে যাচ্ছে অন্য কাজে। আগে খেজুর রসের হাড়ি হিসেবে বিক্রি করা হলেও এখন প্রতি গ্লাস রস ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে মিঠাপুকুর উপজেলার ৬নং ইউনিয়ন কাফ্রিখালের নারায়ণপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, নজরুল (৪০) নামের এক গাছি খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য গাছ ছিলাতে (খেজুর গাছ বিশেষ ভাবে কেটে রস প্রাপ্তির উপযোগী করা)। কাজ শেষ করে গাছ থেকে নিচে নেমে তিনি বলেন, শীতের আগমনে যখন গ্রামের বধুরা নবান্ন উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। ঠিক তখনি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করতো গাছিরা। নবান্ন উৎসবে গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরিতে খেজুর রসের যেমনি জুড়ি নেই তেমনি গাছিরাও ব্যস্ত থাকতো খেজুর গাছের বুক চিরে ফোঁটা ফোটা রস সংগ্রহ করতে।

 নজরুল (৪০) বলেন, আগে প্রচুর খেজুর গাছ ছিল, অনেক রস পাওয়া যেত। এমনকি দুপুর থেকে গাছ ছিলতে ছিলতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যেত। সেই রস বিক্রি করে ও গুড় তৈরি করে সংসার চালাতাম। এখন তেমন কোন গাছ না থাকায় ২/৪টি গাছ ছিলে যে রস বের হয় তা বিক্রি করে কোনরকম সংসার চালিয়ে আসছি। তবুও আমার মত কিছু গাছিরা নিজেদের অতীত পেশা টিকিয়ে রাখতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে খেঁজুর গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সম্পূর্ণ বিলুপ্তি হয়ে যাবে খেজুর ও তাল গাছ, খেজুর ও তালের রস। তাই স্থানীয় সচেতন মহাল মনে করেন খেজুর গাছ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা জরুরী।

খেজুর গাছ বিলুপ্তি সম্পর্কে বনবিভাগের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের কাছে এর সঠিক কোন তথ্য নেই বলে তারা জানায়।

প্রজন্মনিউজ২৪/রেজাউল/নাজমুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ