ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর, ২০১৯ ১২:৪৪:৫৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১৬

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী তূর্ণা এক্সপ্রেসের সঙ্গে সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ৩টার দিকে উপজেলার মন্দভাগ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী মারা গেছেন ১৬জন। তবে এ হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। হতাহত সবাই উদয়নের ট্রেনের যাত্রী। এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রেলওয়ে মহা পরিচালক, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-সিলেট রেলপথে সবধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আখাউড়া ও লাকসাম থেকে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সেনাবাহীনি, বিজিবি, ফায়ারসার্ভিস, পুলিশ, জেনেটিক কম্পিউটার একাডেমী মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, সিডিসি মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুব লীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধার কাজে সহযোগীতা করছে।

রেলওয়ে স্টেশন, প্রতক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃগর ট্রেন ঢাকাগামী তুর্ণা নিশিতা মঙ্গলবার ভোর রাত ২টা ৪৮মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওয়ানা করে। মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার স্টশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার জন্য লালবাতি জালিয়ে সংকেত দেয়। অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ পথে স্টেশন মাস্টার তাকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেয়।

ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার সময় ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অপর দিক থেকে আসা তুর্ণা নিশিতা ট্রেনের চালক সিগনাল (সংকেত) অমান্য করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালায়। এ সময় উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সাথে তূর্ণা নিশিতার ইঞ্জিনের সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। উদয়ন ট্রেনের ১৬জন যাত্রী মারা যায় এবং শতাধিক নারী পুরুষ যাত্রী আহত হয়েছে। নিহতদের পরিচয় জানতে বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. জাকের হোসেন চৌধুরী বলেন, নিশিতা ট্রেনটি আউটারে মেইন লাইনে থামার সংকেত দেয়া হয়েছিল। উদয়ন ট্রেনটিকে মেইন লাইন থেকে ১ নং লাইনে আসার সংকেত

দেয়া হয়েছিল। সেই হিসাবে উদয়ন ট্রেন ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করছিল। এ সময় নিশিতা ট্রেনের চালক সংকেত অমান্য করে উদয়ন ট্রেনের উপর উঠে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়।

কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে.এম হুমায়ুন কবির বলেন, কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন মারা গেছে। ২৯জনকে চিতিৎসা দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই-তিনজন ছাড়া বেশীর ভাগই গুরুতর আহত।

উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবন বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে উদ্ধার কাজ করছি এবং উভয় ট্রেনের যাত্রীদের নাস্তা-পানি দেয়া হচ্ছে ও যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বায়েক শিক্ষা সদন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে ও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে এবং নিহত পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগীতা প্রদান করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া রেল বিভাগের পক্ষ থেকে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/রেজাউল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ