নুসরাত হত্যার রায়কে ঘিরে আদালতে কড়া নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:৪৯:৫১ || পরিবর্তিত: ২৪ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:৪৯:৫১

নুসরাত হত্যার রায়কে ঘিরে আদালতে কড়া নিরাপত্তা

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নৃশংসভাবে পুড়িয়ে হত্যার আলোচিত মামলার রায় হওয়ার কথা আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পিপি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদের আদালতে রায় ঘোষণা করা হবে।

এ উপলক্ষে  ফেনীর জজ কোটসহ আদালত চত্বর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে আদালতে প্রবেশ করতে হচ্ছে। পুরো ফেনী শহরেই পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী সতর্ক অবস্থানে আছে।  সরেজমিনে দেখা যায়, আদালত প্রাঙ্গণ ও প্রবেশপথে কড়া পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের কয়েকজন আইনজীবীও হাজির হয়েছেন।

ফেনী আদালতে কড়া নিরাপত্তা ফেনীর এডিশনাল  এসপি কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালতের আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। জেলা করাগার থেকে বেলা ১১টার মধ্যে ১৬ আসামিকে  আদালতে হাজির করা হবে।’

এ  মামলার  ১৬ আসামি হলেন−সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।

ফেনী আদালতে কড়া নিরাপত্তা আদালতের ভেতরে সাদা পোশাক ও ইউনিফরম পরা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও দেখা গেছে। আদালত ভবনের বাইরের প্রাঙ্গণে র‍্যাব ও পুলিশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আদালত এলাকায় ঢুকতে প্রত্যেককে তিন স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশি পার হতে হচ্ছে। শুরুতে ঢাকা চট্টগ্রাম পুরতন সড়কে, এরপর আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার মূল গেট ও আদালত ভবনে ঢোকার সময় তল্লাশি করা হচ্ছে।

শহরের ট্রাংক রোড় ও পাগলা মিঞা সড়কেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের মোড়ে নিরাপত্তা তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। আদালত পাড়ার  আশপাশে রাস্তাতেও পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। আদালত প্রাঙ্গণের আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফেনী আদালত গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ  রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন।

নুসরাত হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয় ৮ এপ্রিল। নুসরাতের ভাই নোমান এই মামলার বাদী। ১০ এপ্রিল থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মোট ৩৩টি কার্য দিবসে ১৬ জন আসামিকে অভিযুক্ত করে এই মামলার চার্জশিট দেয় পিবিআই। পরবর্তীতে ২০ জুন চার্জ গঠন এবং ২৭ জুন সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। চার্জশিটে মোট ৯১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে এর আগে ওই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের ভাগ্নি পপি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।

প্রজন্মনিউজ২৪/মামুন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন