প্রয়োজনে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করবো: খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০১:০৯:২৯ || পরিবর্তিত: ০৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০১:০৯:২৯

প্রয়োজনে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করবো: খালেদা জিয়া

কর্মসূচি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিঠি আদান প্রদান, আইনি লড়াই সর্বোপরি সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েও কাজ না হওয়ায় আন্দোলনের মাধ্যমেই খালেদার মুক্তির বিষয়টি ভাবতে বাধ্য হচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে প্যারোলে মুক্তি না নেয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছেন খালেদা জিয়া। দলীয় এমপিদের খালেদা জিয়া পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করবেন, তবুও প্যারোলে মুক্ত হবেন না।

এ জন্য আগামী জানুয়ারিকে আন্দোলনের জন্য টার্গেট করে নিয়েছে দলটি। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহের দু’দিনে দলীয় সাত এমপি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে সমঝোতার যে আলোচনা শুরু হয়েছে তা ঠিক নয়। প্রকৃত পক্ষে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়েই দলীয় এমপিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও তার মুক্তির বিষয়টি নতুনভাবে দলীয় এমপিদের মাধ্যমে ফোকাস করতেই এ সাক্ষাতের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিএনপি চাচ্ছে- নতুন করে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আগে দলীয় যেসব পথ খোলা আছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহলে বিএনপির যারা বন্ধু কিংবা শুভাকাঙ্ক্ষি রয়েছেন, তাদের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইসু্যটি তুলে ধরা হচ্ছে।

একই সঙ্গে কিছু কর্মসূচিও নেয়া হবে। যাতে করে সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি হয়। এসব করে কোনো কাজ হবে না জেনেও চলতি বছরের পুরো সময়টা কঠোর আন্দোলনের এ বিকল্প পথে থাকবে বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মুক্তি দিয়ে দেবে, তা কোনো অবস্থাতেই ভাবছে না বিএনপি।

প্যারোল না নিয়ে জামিন পেয়ে খালেদা জিয়া মুক্ত হলে তার আপসহীনতার কাছে ক্ষমতাসীনরা হেরে যাবেন। এজন্য আন্দোলন ছাড়া দলীয় প্রধানের মুক্তির আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো নেতা যাতে কোনো ধরনের কথা প্রকাশ্যে না বলেন সে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে গত ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। গত বছরের ৮ ফেব্রম্নয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজা হয় তার। পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ডাদেশ বাতিল চেয়ে করা আপিলে সাজা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে উচ্চ আদালত। বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা চলছে।

বন্দিদশায় নতুন-পুরনো নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন খালেদা জিয়া। ইতিমধ্যে তার স্বজন এবং দলের শীর্ষ কয়েক নেতা তার সঙ্গে দেখা করেছেন। চিকিৎসাসেবা ও সুস্থতা নিয়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও চিকিৎসকরা পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করেছেন। একপক্ষ বলছে, তিনি গুরুতর অসুস্থ, আরেক পক্ষের দাবি- তার উন্নতি ঘটছে, আবার আরেকটি পক্ষ বলছে, তার (খালেদা জিয়া) অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে দু’দিনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলীয় ৭ এমপির সাক্ষাৎ এবং তার মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এ সাক্ষাৎকে সমঝোতার অংশ হিসেবে বলার চেষ্টা করছেন। তবে এমপিদের দাবি, কোনো সমঝোতা করতে নয়, দলীয়প্রধানের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেওয়ার পাশাপাশি দলের জন্য দিকনির্দেশনা নিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন।

আর ক্ষমতাসীন দলের নেতার সঙ্গে দেখা করার কারণ হচ্ছে জামিনের বিষয়ে যাতে আদালতে ক্ষমতাসীনরা হস্তক্ষেপ না করেন। এর বেশি কিছু নয়। মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়া ও বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ৭ এমপি দু’দিনে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন দিকনির্দেশনা নিতে। যেহেতু একসঙ্গে চারজনের বেশি দেখা করার অনুমতি নেই, সে কারণে দুই ভাগে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়ার অবস্থান স্পষ্ট।

তা হচ্ছে, আপস শব্দটি খালেদা জিয়ার অভিধানে নেই। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ; কিন্তু তার মনোবল এখনো অটুট। আপস করে মুক্ত হতে চান না বিএনপি চেয়ারপারসন। তবে মুক্তির জন্য আইনি এবং বৈধ সব পথে থাকবে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা প্রথমে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্পিকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পার্লামেন্টে কথা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবেদন করতে বলেছেন। আবেদনে বিএনপির সব এমপির স্বাক্ষর রয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/তারেক আজিজ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ