নির্মল বায়ু আইন

দূষণের শাস্তি ২ বছর জেল

প্রকাশিত: ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১২:০৪:৩২

দূষণের শাস্তি ২ বছর জেল

বায়ুদূষণের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হবে। তবে এ অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা কমপক্ষে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় শাস্তি পেতে হবে। এমন বিধান রেখে ‘নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯’ পাস হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আইনের খসড়া প্রণয়ন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।

বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’ (এসওজিএ) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে এক লাখ ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ু দূষণে। প্রথম চারটি দেশের মধ্যে আছে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া। এর পরেই আছে বাংলাদেশ অর্থাৎ বিশ্বে বায়ু দূষণে মৃত্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু দক্ষিণ এশিয়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মাত্রা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নেপালে সবচেয়ে দূষিত বায়ু ছিল। এরপর রয়েছে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। এ অঞ্চলে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর বায়ু ভুটানের। ডব্লিউএইচওর নিচের মাত্রাটির খুব কাছে তাদের অবস্থান। অঞ্চল ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষণে দক্ষিণ এশিয়ার পরে আছে সাব সাহারা আফ্রিকা।

এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশ সরকার ‘নির্মল বায়ু আইন, ২০১৯’ পাস করতে যাচ্ছে। আইনের খসড়া অনুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতরই হবে আইন প্রয়োগের ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা। অধিদফতর দূষণ নিয়ন্ত্রণে বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেবে। সরকার বায়ুদূষণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ও কাজের তালিকা প্রকাশ করতে পারবে। এছাড়া বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কেউ অসামান্য অবদান রাখলে তাকে সরকার পুরস্কৃত করবে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন অংশে বায়ুমান সন্তোষজনক অবস্থায় রাখা এবং পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য এবং নাগরিকের জীবন ও বিশুদ্ধ বায়ু সেবনের অধিকারের নিশ্চয়তার জন্য একটি আইন প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। সেজন্য বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিশুদ্ধ ও লাগসই প্রযুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া, অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন এবং পরিবহন ব্যবস্থা উৎসাহিত করার মাধ্যমে বায়ুদূষণ রোধ ও প্রশমনে নির্মল বায়ু আইন করা হচ্ছে।

Clean-air-02

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নির্মল বায়ু আইনের খসড়া করেছে পরিবেশ অধিদফতর। এখন খসড়ার বিষয়ে আরও মতামত নেয়া হবে। মতামত নেয়ার পর আমরা সবার সঙ্গে বসব খসড়াটি চূড়ান্ত করার জন্য।’

সচিব আরও বলেন, ‘আমরা এ বছরের মধ্যেই আমাদের পর্যায়ে চূড়ান্ত করে আইনটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর চেষ্টা করছি।’

খসড়া আইন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুমানের উন্নতি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের সুরক্ষায় পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক যা প্রয়োজনীয় মনে করবেন সেসব কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবেন।

বায়ুদূষণ রোধে মহাপরিচালক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বায়ুমান পরিবীক্ষণ যন্ত্রপাতি বা পদ্ধতি স্থাপন, ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও উপাত্ত সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দিতে পারবেন। কোন উপায়ে বায়ু দূষিত করলে বা করতে পারে- এমন আশংকা সৃষ্টি হলে দূষণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্ৰণ ও উপশমের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তিকে আদেশ বা নির্দেশ দিতে পারবে।

বায়ুদূষণ ঘটাতে পারে এমন সব উৎপাদন প্রক্রিয়া, দ্রব্য ও বস্তু নিয়ন্ত্রণ বা পরিহার করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিতে পারবে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক।

বায়ুদূষণের মাধ্যমে কোনো ক্ষতি হলে মহাপরিচালক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে তা পরিশোধ এবং যথাযথ ক্ষেত্রে সংশোনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা উভয় প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিতে পারবেন। এ নির্দেশ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পালনে বাধ্য থাকবেন বলে খসড়া আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ না দিলে মহাপরিচালক আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা বা নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার জন্য ফৌজদারি মামলা বা উভয় মামলা দায়ের করতে পারবেন। লিখিত নোটিশ দেয়ার পর মহাপরিচালক বায়ুদূষণকারী যে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে পারবেন।

মহাপরিচালকের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কোনো নোটিশ না দিয়ে দূষণের উৎসস্থলে প্রবেশ করে তল্লাশি করতে পারবেন। এমনকি কোনো সরঞ্জাম, শিল্প-প্ল্যান্ট, রেকর্ড, নথি, রেজিস্ট্রার, দলিল বা এ সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষা এবং যাচাই ও জব্দ করতে পারবেন।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সময়ে সময়ে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন বা বিধিমালার মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বায়ুদূষনের তালিকা, বায়ুর মানমাত্রা, পদ্ধতি, প্রক্রিয়া, নির্দেশিকা ও নির্ণায়ক বা মানদণ্ড নির্ধারণ করতে পারবেন। এটা সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হবে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ