জাবিতে কোটি টাকা ভাগাভাগি

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১১:৩৮:২৯

জাবিতে কোটি টাকা ভাগাভাগি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ বলেছেন, ‘ঈদের আগে এক কোটি টাকার চাঁদা থেকে আমি ও সাদ্দাম ২৫ লাখ টাকার ভাগ পেয়েছি। এ টাকা আমরা কীভাবে পেয়েছি, সেটা জানি; কিন্তু বাকি টাকার কারা কত পেয়েছে, তা জানি না। এখন যেহেতু প্রশাসনের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই এটা তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসন কত টাকার দুর্নীতি করেছে, তা প্রমাণ হওয়া উচিত।

সোমবার সন্ধ্যায় যুগান্তরের সঙ্গে মুঠোফোনে এসব কথা বলেন শাখা ছাত্রলীগ নেতা তাজ। এ সময় তিনি ‘ঈদ সেলামি’ হিসেবে ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি ঈদে সেলামি পাই, এবারও পেয়েছি। তবে এবার বেশি পেয়েছি। কিন্তু এই সেলামির টাকা প্রশাসন কোথা থেকে দিয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। যদি এটি দুর্নীতির টাকা হয় তবে সেটি তদন্তের দাবি করছি।

এর আগে সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই দুর্নীতির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজ। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা (তাজ ও সাদ্দাম) ২৫ লাখ নিবা, শাখার সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল ২৫ লাখ নিবে আর সভাপতি মো জুয়েল রানা ৫০ লাখ নিবে। আমরা আমাদেরটা পেয়েছি। তবে অপ্রকাশ্যে এর বেশি কে কত পেয়েছে, তা আমরা জানি না।

কেউ এর বেশিও পেতে পারে।’ ১৩ সেপ্টেম্বর শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর কথোপকথনের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে রোববার। সেখানে সাদ্দাম ও তাজের ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। একই সঙ্গে লেনদেন হওয়া মোট এক কোটি টাকার দুর্নীতির হিসাব দেখান সাদ্দাম।

এছাড়া এই দুর্নীতির সঙ্গে ভিসির ছেলে, স্বামী, একান্ত সচিব ও প্রকল্প পরিচালকের সম্পৃক্ততা দেখানো হয়। শাখা ছাত্রলীগ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে ৯ আগস্ট ভিসির বাসভবনে প্রশাসনের সঙ্গে ৪ ছাত্রলীগ নেতার আলোচনা হয়। সেখানে এক কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়। তাদের মধ্যে নিয়ামুল হাসান তাজ ও সাদ্দাম হোসেন ছিলেন।

এরা দু’জন গোলাম রাব্বানীকে অনুসরণ করতেন। এদিকে ফাঁস হওয়া কথোপকথনে যে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে টাকা ভাগের কোনো আলাপ হয়নি।

তিনি কাউকেই অর্থ প্রদান করেননি। গোলাম রাব্বানী উপাচার্য মহোদয়কে বিতর্কিত করার জন্য ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ফোনালাপের গল্প তৈরি করেছেন। এ ধরনের পরিকল্পিত মিথ্যা গল্পের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।’ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পাঠক তথা দেশবাসী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে মিথ্যা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সমর্থন দেয়ারও আহ্বান জানানো হয় এই বিজ্ঞপ্তিতে।

প্রশাসনের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাদ্দাম হোসেন ২৫ লাখ টাকা পাওয়ার কথা আবারও স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রশাসন দাবি করছে আমরা মিথ্যা গল্প বলছি। তাই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ না করে প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কী কনভারসেশন (আলোচনা) হয়েছে, সেটি বের করলেই ক্লিয়ার (পরিষ্কার) হয়ে যাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, ভিসির ছেলের সঙ্গে আমার ও তাজের ৯ আগস্টের আগে ও পরে কী কনভারসেশন (মুঠোফোনে কথোপকথন) হয়েছে, সেগুলো বের করা হলে সবকিছু ক্লিয়ার হয়ে যাবে- এই দুর্নীতির সঙ্গে কে জড়িত এবং কে কত টাকা পেয়েছে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি চায় বিষয়টি উদ্ঘাটন করবে তবে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আন্দোলন দমাতে প্রশাসন শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয় বলে সংগঠনের সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, জাবিতে অপরিকল্পিত উন্নয়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। এটা ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয়।

এ বিষয়ে সোমবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ভিসি, তার স্বামী, ছেলে এবং প্রশাসনের মধ্যস্থতায় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেয়া হয়। আমাকেও ঈদ সেলামির নামে টাকা অফার করা হয়। কিন্তু আমার সন্দেহ হওয়ায় টাকা নিতে রাজি হইনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী ও ভিসিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’ রাব্বানী-সাদ্দামের ফোনালাপকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কল্পিত কাহিনী ও চক্রান্তমূলক দাবি করে।

সোমবার বিকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক বশির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, একটি গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল না হওয়ায় তারা ভিসির বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বছর ২৩ অক্টোবর ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ অনুমোদন দেয় একনেক। এই প্রকল্পের অধীন ১ মে ছয়টি হলের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। কিন্ত ৫টি হলের টেন্ডার চূড়ান্ত হয়। ৩০ জুন ছেলেদের ৩টি এবং মেয়েদের ২টিসহ ৫টি আবাসিক হলের কাজ শুরুর মাধ্যমে এই উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

প্রকল্পে কাজের শুরুতেই শাখা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে টেন্ডার ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। পরে নির্বিঘ্নে এই প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে ১ কোটি টাকা চাঁদা দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ উঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগ ঘিরে ঈদের পর থেকেই ক্যাম্পাসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান রয়েছে।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ