কাশ্মীরের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করবে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৪৩:১৮ || পরিবর্তিত: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৪৩:১৮

কাশ্মীরের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করবে পাকিস্তান

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু এখন কাশ্মীর। এ ঘটনা পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার বড় ঝুঁকি রয়েছে বলে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এমন যুদ্ধ হলে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত যুদ্ধ করবে পাকিস্তান।

তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, এ নিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হলে তাতে পুরো বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সীমিত পন্থা খোলা আছে পাকিস্তানের জন্য। তিনি আরো বলেন, আমরা এ ঘটনায় তেমন কিছুই করতে পারি না, শুধু সব আন্তর্জাতিক সংগঠনের কাছে যাওয়া ছাড়া। এসব সংগঠন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে উঠেছিল। এর মধ্যে প্রধান সংগঠন হলো জাতিসংঘ।

তিনি আরো যোগ করেন কাশ্মীর ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয়ান দেশগুলোর দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। ভারত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করার সিদ্ধান্তের পর বিশ্বজুড়ে এ ইস্যুতে হালকা যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে সে বিষয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন ইমরান খান।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো, সবকিছু বড় বাজার সংক্রান্ত, কিছু দেশ বড় বাজার দেখছে, তরা ভারতকে ১০০ কোটি মানুষের একটি বড় বাজার হিসেবে দেখছে। তারা এটা অনুধাবন করছে না যে, তারা যদি এখনই হস্তক্ষেপ না করে, তাহলে এতে যে করুণ পরিণতি বয়ে আনবে তাতে শুধু এই উপমহাদেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। পুরো বিশ্বের বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সম্ভাব্য পারমাণবিক যুদ্ধ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে যোগ দিতে গিয়ে বলেছেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘দুর্ঘটনাক্রমে যুদ্ধ’ শুরু হয়ে যেতে পারে। এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত কিনা তা জানতে চাইলে ইমরান বলেন, অবশ্যই একমত। এখন যা ঘটছে তা হলো, ভারত বড় মাপের অথবা ছোট মাপের গণহত্যা চালাচ্ছে।

জনগণের ওপর যে জাতিগত আক্রমণ করা হচ্ছে, আমার মনে হয় না নাৎসী জার্মানির পর তা প্রত্যক্ষ করা গেছে আর কোথাও। ৬ সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরে অবরুদ্ধ ৮০ লাখ মুসলিম। যে কারণে ইস্যুটি ভারত ও পাকিস্তানের উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে তা হলো, অবৈধ দখলদারিত্ব সম্প্রসারণ ও কাশ্মীরে গণহত্যার দিক থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে ভারত। তারা সন্ত্রাসে সমর্থন দেয়ার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে মনোযোগ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের একটি তরুণ আত্মঘাতীয় হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বহরে। ওই সময়ও এই একই কাজ করেছিল ভারত। এ জন্য তারা পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল এবং পাকিস্তানে বোমা মেরেছিল। তাই আমাদের আশঙ্কা, আবারও সেই একই ঘটনা ঘটবে। কারণ, তারা কাশ্মীরে যা করছে তার প্রতিক্রিয়া হবে। এরপর তারা দায়ী করবে পাকিস্তানকে। উদ্দেশ্য কাশ্মীরে গণহত্যা থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া।
 
কখন পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রথম ব্যবহার করা হবে এ বিষয়ে পাকিস্তানের নীতি সম্পর্কে ইমরান খান বলেন, কোনোই দ্বিধা নেই। আমি বলেছি, পাকিস্তান কখনো আগে যুদ্ধ শুরু করবে না। এ বিষয়ে আমি আবারও পরিষ্কার করে বলছি। আমি শান্তিকামী, যুদ্ধবিরোধী। তা সত্ত্বেও আমি পরিষ্কার করে বলছি, যখন দুটি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ যুদ্ধ করে- যদি তা প্রচলিত যুদ্ধও হয়- তবু তা একটি পারমাণবিক যুদ্ধে রূপ নেয়ার খুব বেশি সম্ভাব্যতা থাকে। যদি এমন প্রচলিত যুদ্ধ করতেই হয় তাহলে নিজেদের স্বাধীনতার জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করবে পাকিস্তান।

ইমরান খান বলেন, যখন পারমাণনিক অস্ত্রধর একটি দেশ মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে, তখন এ যুদ্ধের ফলে করুণ পরিণতির সৃষ্টি হয়। এ জন্যই আমরা জাতিসংঘ ও প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামের দ্বারস্থ হচ্ছি এবং তাদেরকে এখনই পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, এমন যুদ্ধ, বিপর্যয় ভারত উপমহাদেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে।

জাতিসংঘকে যে বার্তা দেবেন
এ মাসেই শেষের দিকে বসছে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন। তাতে যোগ দেবেন ইমরান খান। সেখানে কাশ্মীর ইস্যুটি তুলে ধরবেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমি জলবায়ুু পরিবর্তন নিয়ে কথা বলবো। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে যে কয়েকটি দেশ আছে তার মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। এরপরে কথা বলবো ইসলামভীতি নিয়ে। এই ইসলামভীতির কারণে মুসলিমরা দুর্ভোগের শিকার হন, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে এবং অবশ্যই ভারতে। কাশ্মীরে যা ঘটছে তাতে আমার আলোচনার প্রধান বিষয় হবে কাশ্মীর পরিস্থিতি।

সংলাপ
ভারতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তার মত জানতে চাইলে ইমরান বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকেই, সেটা গত আগস্ট, বলে আসছি, বার বার ভারতের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা সভ্য প্রতিবেশীর মতো বসবাস করার জন্য এমন আহ্বান জানিয়েছি। আমাদের মধ্যকার মতপার্থক্য দূর করার আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি আরো বলেছেন, একমাত্র কাশ্মীর সমস্যার সমধান হতে হবে রাজনৈতিকভাবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যের গুরুত্বটা এখানেই। দুই দেশই দারিদ্র্যের কারণে ভুগছে। জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্যোগ থেকে ভুগছে দুই দেশই। আমাদের উভয়ের রেেছ একই রকম সমস্যা। তাই আমি তাদের দ্বারস্থ হয়েছি এবং বলেছি, আসুন আলোচনা শুরু করি। আমাদের মতভেদ দূর করি। আমি বার বার এটা চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পেরেছি তা ভুলভাবে দেখা হয়েছে। এই ডানপন্থি বিজেপির বর্ণবাদী, ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদেরকে এমনভাবে দেখছে, মনে হচ্ছে আমরা তাদেরকে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছি। তারা এটাকে আত্মতুষ্টি হিসেবে দেখছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাব
৫ই আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে ভারত। এর আগেই কাশ্মীর সঙ্কট সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভারত বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় বলে তার সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, এ সঙ্কট সমাধান হতে হবে শুধু ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনায়।

তবে লক্ষ্য করার বিষয়, এখন ভারত বলছে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে শুধু পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীর ইস্যুতে। এসব ইস্যুতে আল জাজিরাকে ইমরান খান বলেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের ডনাল্ড ট্রাম্প। এমন প্রস্তাব দেয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। যদি তিনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, গুরুত্ব দিয়ে হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে এ সমস্যার একটি সমাধান হবে বলে নিশ্চয়তা দেয়া যায়।

ইমরান খান বলেন, দ্বিতীয়ত, যদি তারা সরাসরি হস্তক্ষেপও না করে, তবু জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তাদের ক্ষমতা  আছে।
এসএম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ