চট্টগ্রামের খুলশীতে চলছে কিশোর গ্যাংয়ের ত্রাসের রাজত্ব!

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০১:৩৬:০৯

চট্টগ্রামের খুলশীতে চলছে কিশোর গ্যাংয়ের ত্রাসের রাজত্ব!

শরীফ হায়দার,চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন আমবাগান ও টাইগারপাস এলাকায় সরকার দলীয় কিশোর গ্যাংয়ের চলছে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম। গত ৭/৯/২০১৯ তারিখ সন্ধ্যার পর সরকার দলীয় এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

এইঘটনায় বাবু চন্দ্র দাশ ও সন্দীপ নামে ২ জন গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে রাত ১০টার সময় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের অনুসারীরা অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমবাগান এলাকায় এসে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ও সাধারণ মানুষের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।

খবর পেয়ে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রনব চৌধুরীর নেতৃত্ব তিন প্লাটুন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে অপরাধীদের কাউকে আটক করতে পারেনি। একই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে গতকাল দুপুর ২টার সময় টাইগারপাস এলাকা থেকে সাইফুল আলম লিমনের ৩০/৩৫ জন অনুসারীরা আবারও পূর্ব আমবাগান রেলওয়ে কলোনিতে আগ্নেয় ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলাকার বিভিন্ন মহিলাদের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় এবং মারধর করে।

একই সময় তারা যুবলীগ নেতা নজরুলের সমর্থকদের দাওয়া করে তাদের না ধরতে না পেরে সেলিম নামে এক সেলুন ব্যাবসায়ীকে মাথায় ও হাতে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এই ঘটনার পর খবর পেয়ে খুলশী থানা পুলিশের টহলরত টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে খুলশী থানার ওসি প্রনব চৌধুরীরকে ঘটনা সম্পর্কে অবগত করলে তৎক্ষনাৎ ওসি প্রনব চৌধুরীর সহ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ২ প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে।

এসে আহত সেলুন দোকানদারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে টাইগারস এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমনের ৯ জন অনুসারীকে ধারালো অস্ত্র সহ আটক করে। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বয়স হবে ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।

এই ঘটনায় গতরাতে আহত বাবুর পরিবার যুবলীগ নেতা নজরুলের অনুসারীদের নামে একটি মামলা দায়ের করে এবং আহত সেলুন দোকানদার সেলিমের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আটক ৯ জনকে এজাহার ভুক্ত আসামী ও অজ্ঞাত ২৫/৩০ জনের নামে আরও একটি মামলা দায়ের করে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই কিশোর গ্রুপ গুলো ২/৩ দিন পরপর অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় প্রশাসনের কঠোর কোন নজরধারী না থাকায় তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে এলাকার সাধারণ মানুষকে। এই কিশোর গ্যাংয়ের একটি গ্রপের বড়ভাই যুবলীগ নেতা নজরুল এবং অপর গ্রুপের বড়ভাই বহিস্কৃত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন।

২০১৩ সালের ২৪ জুন লিমন অনুসারীদের সাথে রেলওয়ের টেন্ডার নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবর গ্রুপের সাথে রেলওয়ে সিআরবি অফিস এলাকায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে এক শিশু সহ ২ জন নিহত হয়। ঐ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এসআই মহিবুর রহমান বাদী হয়ে বাবর ও লিমনসহ দুই পক্ষের ৮৭ জনের বিরুদ্ধে একটি জোড়া খুনের হত্যা মামলা দায়ের করেন এবংসাইফুল আলম লিমনকে অস্ত্র সহ আটক করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মামলার তদন্তে নিয়োজিত ছিলো পুলিশের ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনক (পিবিআই)।

যুবলীগ নেতা নজরুল স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী আফসারুল আমিনের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং সাইফুল আলম লিমন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আজম নাছিরের অনুসারী হিসবে পরিচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মচারী বলেন, এসব ছোট ছোট ছেলেরা প্রতিনিয়ত এলাকায় দাঙ্গা হাঙ্গামায় লিপ্ত হয় এদের ভয়ে এলাকার মানুষ সবসময় আতংকে থাকতে হয়।

তিনি আরও বলেন প্রশাসন যদি এসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা না নেয় তাহলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! এব্যাপারে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরনের কাছ থেকে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার এলাকায় যে কোন অপরাধে সঙ্গে যে কেউ জড়িত থাকুক আমি প্রশাসনকে সাফ জানিয়ে দিয়েছি দ্রুত যেন অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়।

তিনি আরও বলেন বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছেন এই সরকারের আমলে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যে কেউ অপরাধের সাথে জড়িত হবে তাকেই আইনের আওতায় আনা হবে এবং প্রশাসন আন্তরিক হয়ে কাজ করলে এসব কিশোর গ্যাংয়ের মুল হোতা যেই হোক তারা আইনের হাত থেকে ছাড় পাবেনা।

বর্তমানে খুলশী থানা পুলিশ আমবাগান ও টাইগারস এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করেছে। এইসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ২ টি মামলা দায়ের হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি প্রনব চৌধুরী বলেন, এসব কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আমার থানার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল টিমকে মাঠে নামানো হয়েছে অপরাধী যেই হোক তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ