পানির অভাবে সোনালী আশ কৃষকের গলায় ফাঁসে পরিনত

প্রকাশিত: ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ১২:১৯:৩৪

পানির অভাবে সোনালী আশ কৃষকের গলায় ফাঁসে পরিনত

শাকিল আর সালাম, ঝিনাইদহ: ধানের লোকসান পোষাতে পাট চাষে ঝুঁকেছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। কিন্তু চলতি বছর এ উপজেলায় তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় অধিকাংশ মাঠ জুড়ে দন্ডায়মান রয়েছে কৃষকের পাট। বৃষ্টির পানির অভাবে অধিকাংশ কৃষক পাট জাগ দিতে পারছেন না। ফলে অনেক কৃষক ক্ষেতে পাট কেটে ফেলে রেখেছেন।

আবার অনেকে ক্ষেতের পাট এখনো কাটেননি। যার কারনে ক্ষেতেই কৃষকের দন্ডায়মান ও কেটে রাখা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে সোনালী আশ এখন কৃষকের গলায় ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি বছর ১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উপজেলার ৮৫০ কৃষক ১ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলে লক্ষমাত্রার চেয়ে এবার ৫হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে।

উপজেলার বুজরুখমুন্দিয়া গ্রামের কৃষক ইউনুচ আলী জমাদ্দার বলেন, তিনি বৈশাখ মাসে দেড় বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেন। বীজ, সার, কীটনাশক পরিচর্যাসহ তার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রায় এক থেকে দেড় মাস আগে পাট কাটার মত অবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে পাট কাটতে পারেননি।

কারন বৃষ্টি না হওয়ায় এলাকার পুকুর,খাল বিল,খানা গর্ত কোন স্থানেই পানি নেই। যার কারনে পাট জাগ দিতে পারছেন না। তিনি অর্ধেক জমির পাট কেটে ক্ষেতে ফেলে রেখেছেন আর অর্ধেক পাট এখনো জমিতে দন্ডায়মান রয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক সব্দুল হোসেন জানান, তিনিও ২ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর খাল বিল খানা গর্তে কোন স্থানে পানি জমেনি। যার কারনে পাট জাগ দিতে পারেননি। বর্তমানে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, বাজারে প্রথম দিকে ১৫শ থেকে ১৮শ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু এখন দাম কমে এসেছে।

বর্তমানে ১২শ থেকে ১৩শ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। অবশ্য গত বছর পাটের বাজার ভাল ছিল। আমরা আশা করেছিলাম ধানের লোকসান কিছুটা হলেও পাট থেকে তুলে নিব। কিন্তু পানির অভাবে এখন পাটই কাটতে পারছিনা। ভালভাবে পাট জাগ দিতে না পারলে তাতে পাটের রং ভাল আসবে না। দামও পাবো না। বর্তমানে পাট নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।

উপজেলার বুজিডাঙ্গা গ্রামের পাট চাষী আশাদুল ইসলাম জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর বাজারে পাটের দাম অনেক কম। এবার পাট চাষ করে বিপদে পড়েছি। ধানের দাম পায়নি, এবার পাটের দামও পাবো না। তিনি আরো জানান, ১০ কাটা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। তাতে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর খালে পানি জমেনি।

পানির অভাবে স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি ভর্তি করে পাট জাগ দিবো। ঘন্টা চুক্তিতে পানির দাম দিতে হচ্ছে। ১শ বান্ডিল (১২ থেকে ১৫টিতে একটি বান্ডিল) পাট চিকাতে (ছুলতে) ৩শ টাকা করে দিতে হবে। সব খরচ খরচা বাদে পাটে লোকসান গুনতে হবে।

আশাদুল, ইউনুচ, সব্দুলদের মত অনেক চাষী জানান, বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের কোন স্থানেই বৃষ্টি হয়নি। যার কারনে পুকুর, খাল-বিল, খানা গর্ত কোন স্থানেই পানি না জমার কারনে পাট জাগ দিতে পারছি না। পানির অভাবে এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষকের পাট ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে।

উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, এবার লক্ষামাত্রার চেয়ে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। কিন্তু পাট পঁচানোর জন্য গ্রামাঞ্চলে যে পরিমান পানি থাকার কথা সে পরিমান পানিই নেই। এখন কৃষকরা গর্তের মধ্যে স্যালোমেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে পাট পঁচাচ্ছে। তাতে পাটের মান নিম্নমানের হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ভাল পাট বাজারে ১৮শথেকে ১৯শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কোয়ালিটি খারাপ হলে সে পাটের দাম কম পাওয়া যাচ্ছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ