প্রকাশিত: ১৩ অগাস্ট, ২০১৯ ০৪:৪৭:১৯
কোরবানির পশুর চামড়ার ব্যাপক দরপতন হয়েছে। লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা দরে, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ কম। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যারা কোরবানি দিয়েছেন তারা কাঁচা চামড়া বিক্রির লোক খুঁজে পাচ্ছেন না। যারা বিক্রি করতে পেরেছেন তারাও নামমাত্র দাম পেয়েছেন। আবার অনেকে কাঙ্ক্ষিত দাম ও ক্রেতা না পেয়ে মাদরাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বিনা পয়সায় দিয়ে দিচ্ছেন।
রাজধানীর মানিক নগরের বাসিন্দা কবির হোসেন জানান, ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়া দাম বলছে ৩০০ টাকা। এতো কম দামে চামড়া বিক্রি করে কী করবো? তিনি বলেন, সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করেছে যদি এই দামে চামড়া বিক্রি করা যেত, তাহলে আমার কোরবানির গরুর চামড়ার দাম কম হলেও ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা হতো। কিন্ত দাম বলেছে মাত্র ৩০০ টাকা। তাই বিক্রি না করে এলাকার এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছি।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকার বাদশা মিয়া বলেন, কোরবানির চামড়ার টাকা গরিবের হক। এই চামড়া যারা কম দামে কিনে নিচ্ছে তারা গরিবের হক মেরে খাচ্ছে। আমি এক লাখ টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। ওই গরুর চামড়া বিক্রি করেছি মাত্র ৪০০ টাকা। এটি সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৪-৫ গুণ কম। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা সুযোগ পেলেই মানুষের পকেট কাটে।
কোরবানির চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়ে তারা গরিবের হক মারছে। আর সরকার এসব দেখে চুপ করে বসে আছে, কিছুই বলছে না। উল্টো বিভিন্নভাবে মুনাফাখোর ও লুটেরাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। এদিকে রাজধানীর মান্ডা এলাকার বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকা পঞ্চায়েতভুক্ত। কোরবানির পশুর চামড়া পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তার ডাক উঠিয়ে বিক্রি করা হয়।
এ বছর চামড়ার ডাক উঠেছে মাত্র ৪০০ টাকা। তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহ করতে শ্রমিকসহ বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। চামড়া বিক্রি করে আয় হবে ২ লাখ টাকা। তার মানে গরিবরা পাবে মাত্র ৮০ হাজার টাকা। গত ২০-২৫ বছরে কোরবানির চামড়ার দাম এতো কম হয়নি বলে জানান তিনি। এদিকে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী রাব্বি বলেন, এলাকা থেকে কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করে তা বিক্রি করব পোস্তায় নিয়ে।
গতকাল পোস্তার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে ৬০০ টাকার বেশি দামে চামড়া কিনবে না। তাই আমরা গড়ে একটা চামড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনেছি। প্রতি চামড়ায় এক দেড়শ টাকা খরচ আছে। এরপরও বিক্রি করছি। লাভ থাকবে কিনা জানি না। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ চামড়ার দর পতনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কোরবানির সময় কাঁচা চামড়া কেনে পোস্তা ও আড়ৎদাররা।
এরপর লবণযুক্ত চামড়া পোস্তা থেকে আমরা সংগ্রহ করি। তিনি বলেন, এবার চামড়ার দাম কম এটা সত্য। বিভিন্ন কারণে চাহিদা কম। একটি চামড়া ৬০০ টাকা কিনলে তা ৮০০ টাকায় বিক্রি করবে। পোস্তার লোকজন লবণ দিয়ে পরে আমাদের কাছে বিক্রি করবে। একটি চামড়া লবণ দিতে খরচ পড়ে ৩০০ টাকা। এরপর পোস্তার লোকজন আমাদের কাছে চামড়া বিক্রি করবে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।
সাখাওয়াত উল্লাহ আরও বলেন, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়ায় এখন আমাদের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কম। তাই আমরা কম চামড়া কিনছি। তবে যারা সঠিক সময়ে চামড়ায় লবণ দিয়ে ভালোভাবে সংরক্ষণ করবে আমরা তাদের চামড়া বেশি দামে কিনবো। এ বছর ৮৫ হাজার চামড়া কেনার লক্ষ্য রয়েছে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা হবে। গত বছর প্রতি বর্গফুটের দাম একই ছিল। ২০১৭ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ঢাকায় ৪৫-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা।
এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৩-১৫ টাকায় সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। গতবার খাসির চামড়ার দামও ছিল একই। তবে ২০১৭ সালে খাসির চামড়ার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ২০-২২ এবং বকরির চামড়া ১৫-১৭। সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর, রফতানি আদেশ কমে যাওয়া ও অর্থ সংকটের কারণে এ বছর চামড়ার দাম কমানোর সুপারিশ করেছিল কাচা চামড়ার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা।
এসব বিবেচনায় সরকার দাম না বাড়িয়ে আগের মূল্য নির্ধারণ করেছে।
ঢাবির ২৩-২৪ সেশনে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ
নোয়াখালীতে ১২ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম
বাংলা কলেজের ছাত্র না হয়েও তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি
তালাকের হার গ্রামে বেশি, বড় কারণ পরকীয়া
৮ বছর পর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা