চার শর্ত পূরণে মিলবে এমপিও, হচ্ছে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের গ্রেড উন্নয়ন

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০৪:৩১:১৪ || পরিবর্তিত: ৩১ জুলাই, ২০১৯ ০৪:৩১:১৪

চার শর্ত পূরণে মিলবে এমপিও, হচ্ছে প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের গ্রেড উন্নয়ন

প্রায় আট বছর পর বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে একটি তালিকা তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে হিসাবে সারাদেশের প্রায় সাড়ে সাত হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

আগামী ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেই তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর যেকোনো সময় সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এদিকে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে মঙ্গলবার তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশোধিত সে প্রস্তাবনায় সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড, আর প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান ১৪তম গ্রেডের পরিবর্তে ১২তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের পরিবর্তে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।  তিনি আরও জানান, এখন শিক্ষা ও অর্থ এ দুই মন্ত্রণালয় সভা করে বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, গ্রেড উন্নয়ন বিষয়ে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষকরা। বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণির গ্রেড নিয়ে ১১তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা। যদিও দ্বিতীয় শ্রেণির অন্য সব চাকরিজীবী দশম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে প্রশিক্ষণবিহীন হওয়ায় যোগদানের পর সহকারী শিক্ষকদের বেতন প্রধান শিক্ষকদের থেকে তিন ধাপ পিছিয়ে ১৫তম গ্রেডে দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি মানতে নারাজ তারাও। এ দুই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের একাধিক সংগঠন আন্দোলন করে আসছেন। প্রায় চার বছর ধরে করা শিক্ষকদের এ দাবির বাস্তবায়ন হতে চলেছে বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এদিকে যখন শিক্ষকদের নতুন গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে তখনই বেসরকারি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পাওয়ার তদবিরে রোজই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা। এমপিওভুক্তির তালিকায় তাদের এলাকার কয়টি বিদ্যালয় রয়েছে সে বিষয়টি জানতে উদগ্রীব তারা। তবে যতই উদগ্রীব হোক না কেন ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় পড়বে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র। এর জন্য চারটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে পারলেই মিলবে এই ১০০ নম্বর। এ চারটি প্রধান শর্ত হলো- একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটির মান ধরা হয়েছে ২৫ নম্বর করে। এই ১০০ নম্বরের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা। যদিও অভিযোগ রয়েছে, অতীতে এমপিওভুক্তির নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করেও অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। আরও অভিযোগ রয়েছে, সেসময় কেবল এমপিওদের 'ডিও লেটারের' ভিত্তিতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। যে কারণে অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। তবে এবার এমপিওভুক্ত করতে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সব নিয়মনীতি মেনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তকরণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির নীতিমালা-২০১৮ এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এমপিও পেতে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি থাকার নম্বর ২৫। প্রতি দুই বছরের জন্য ৫ নম্বর এবং ১০ বা এর চেয়ে বেশি বছর হলে পাবে পূর্ণ ২৫ নম্বর। শিক্ষার্থী সংখ্যার জন্য থাকবে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকলে ওই প্রতিষ্ঠান পাবে ১৫ নম্বর এবং এর পরবর্তী ১০ শতাংশ বৃদ্ধির জন্য পাবে ৫ নম্বর। পরীক্ষার্থীর সংখ্যায়ও রয়েছে ২৫ নম্বর। কাম্যসংখ্যার জন্য ১৫ নম্বর, কাম্যসংখ্যার পরবর্তী প্রতি ১০ জনের জন্য ৫ নম্বর। পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পরিসংখ্যানেও স্বীকৃত পাওয়ার নম্বর ২৫। এর মধ্যে কাম্যহার অর্জনের ক্ষেত্রে ১৫ নম্বর, পরবর্তী প্রতি ১০ শতাংশের জন্য ৫ নম্বর। এই নীতি অনুসরণে এবারের যোগ্য তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ১৬ জুনে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ এমপিওভুক্ত করা হয়। সে সময় সারাদেশের এক হাজার ৬০৯টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হয়। সে হিসাবে সরকারি বেতনের আওতায় এসেছিল প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ