নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা

প্রকাশিত: ২৮ জুলাই, ২০১৯ ১১:২১:১৬

নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা

নাগরিকত্ব ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে আসা ১৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে এমনটি জানিয়েছেন উখিয়ার ক্যাম্পে অবস্থান করা নির্যাতিত রোহিঙ্গা নেতারা।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে করণীয় নির্ধারণে শনিবার উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে আসেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটি। রোহিঙ্গারা কোনো ভিত্তি ছাড়া মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় শনিবারের দুই দফা বৈঠকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়ালগ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও রোহিঙ্গারা।

এ ডায়ালগে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ছাড়াও বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। তবে কবে নাগাদ এ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মো. আবুল কালাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রত্যাবাসন একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই হঠাৎ এটি সমাধান হবে এমন আশা করা দুরূহ। শনিবার বৈঠকে যৌথ ডায়ালগের কথা উঠে এসেছে। রোববারও (২৮ জুলাই) বিষয়টি নিয়ে ফের বৈঠক হবে।

মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল শনিবার বিমানযোগে সকাল ১০টায় কক্সবাজার পৌঁছেন। বিমানবন্দরে প্রতিনিধি দলকে গ্রহণ করেন কক্সবাজার ত্রাণ প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এস এম সরওয়ার কামালসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এরপর প্রতিনিধি দলটি বিমানবন্দর থেকে হোটেল রয়েল টিউলিপে যান। সেখান থেকে দেড়টার দিকে যান উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন তারা। সেখানে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ৩৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল ছিলেন। তাদের মধ্যে সাত নারী ও ২৮ পুরুষ রোহিঙ্গা ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেয়া রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ঘণ্টা তিনেকের বৈঠকটি দু’দফায় চলে।

 আলোচনায় মিয়ানমার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে আহ্বান জানান। ফিরে গেলে সেখানে কী রকম সুযোগ-সুবিধা পাবেন সে সম্পর্কে ধারণা দেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। এ সময় রোহিঙ্গাদের পক্ষে নাগরিকত্বসহ নানা দাবি উত্তাপন করা হয়। বৈঠক যখন চলছিল ঠিক তখন বৈঠকস্থলের বাইরে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেন রোহিঙ্গারা।

বিক্ষোভে রোহিঙ্গারা বলেন, আমরা বাঙালি নই, আমরা রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে আমাদের ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আমরা ফিরে যাব না। আমাদের মা-বোনদের যে নির্যাতন করা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরও বিচার করতে হবে। বিকাল ৫টার দিকে বৈঠক শেষ হলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের কেউ।

বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকজন রোহিঙ্গারা এবং কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম জানান, বৈঠকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে যৌথ ডায়ালগে সম্মতি জানিয়েছে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধিদল রোববার রোহিঙ্গা হিন্দু ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে জানিয়েছেন আরআরআরসি আবুল কালাম।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। তবে, ২০১৭ সালে আসা রোহিঙ্গাসহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের ৩১টি ক্যাম্পে জড়ো করে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

এরপর কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া চালানো হয়। কিন্তু দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। গত বছরের শেষ সময়ে এবং চলতি বছরের শুরুতে প্রত্যাবাসন আরম্ভ হবার কথা দিলেও কথা রাখেনি মিয়ানমার।

অপর একটি সূত্রের মতে, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর আগে আন্তর্জাতিক সমালোচনা প্রশমন করতে চায় মিয়ানমার। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রতিনিধি দল পাঠাল তারা। গত বছরও মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কোনো গতি আসেনি। শনিবারে আসা দলটি ফিরে গেলে প্রত্যাবাসনে কী বার্তা আসে তা দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী।  

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ