হাইকোর্টের বিচারক বলেন 'ব্যারিস্টার সুমন সমাজের দর্পণ’

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০৩:৫৪:১৮ || পরিবর্তিত: ২৩ জুলাই, ২০১৯ ০৩:৫৪:১৮

হাইকোর্টের বিচারক বলেন 'ব্যারিস্টার সুমন সমাজের দর্পণ’

আমি এতোতাই অসহায় ছিলাম যে আমার বাবার জানাজায় আসার জন্য আমার টিকিটের টাকাটা পর্যন্ত ছিলো না। সেই সময় মোবাইল ফোনে আমি ফোন দিয়ে বলি আপনি ফোন টা ধরে রাখেন আর আমাকে বলুন আমার বাবার লাশটা এখন কোথায় আছে?

প্রত্ত্যুতরে তিনি বলে,’এখন কবরের পাশে আছে ,নিচে নামাচ্ছি মাটি দিচ্ছি’ এ ভাবেই আমি আমার বাবার দাফনে অংশ নেই। এই ব্যাপারটা আমাকে অনেক নাড়া দিয়েছে । তখন থেকেই আমি সংকল্প করেছি যে টাকার পিছনে ছুটবো না। সমাজের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।

সম্প্রতি নুসরাত হত্যা মামলা নিয়ে হাই কোর্টে শুনানী চলাকালীন হাইকোর্টের বিচারক বলেন, 'সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ। ব্যারিস্টার সুমনও সমাজের দর্পণ।'

স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা-ব্রিজ নির্মাণ, ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন, এলাকার বিভিন্ন দুর্নীতি-অসঙ্গতি নিয়ে লাইভ প্রোগ্রামসহ ব্যতিক্রমী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনায় রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন।

সরেজমিন তার নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা যায়, এলাকার যুব সমাজকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাশ্রমে তিনি ২১টি ব্রিজ ও ৫টি রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ব্যক্তিগত অর্থ ও শ্রমের দ্বারা সংস্কার করেছেন আরো ৪০টি রাস্তা। এই হিসেব শুধু বিগত জাতীয় নির্বাচন আগ পর্যন্ত। এরপরের হিসেবে আরো বেড়েছে।

ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে তিনি  শিশুদেরকে ১ হাজার খেলার সামগ্রী বিতরণ, ৫টি খেলার মাঠ মেরামত ও বঙ্গবন্ধুর নামে  ৫টি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন সুমন। তিনি গ্রাম পুলিশদের বেতন-ভাতা ডিজিটালাইজেশনের স্বার্থে ১০০টি মোবাইল ফোন প্রদান করেন।

ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমন  জানান, ১৮ বছর ধরে আমি এলাকার উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করাকে আমি ইবাদত মনে করি। নিজের পেশা থেকে অর্জিত অর্থের সিংহভাগই আমি ব্যয় করি সাধারণ মানুষের কল্যাণে। আমার গন্তব্য নিজের সফলতা দিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জন্মভূমি ও এর বাইরের উন্নয়নে সর্বসাধ্য দিয়ে চেষ্টা করা। যেন একজন 'ওয়ান ম্যান আর্মি' সুমন।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের ছেলে সায়েদুল হক। নিজের উপজেলায়, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বাইরে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে আইনজীবী পেশায় আছেন। উপজেলার নিজের স্কুলে গিয়েও একটি লাইভ করেন। এই স্কুলের যে শিক্ষার্থী ব্যারিস্টার হবেন, তাঁকে একটি গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লাইভে।

পরবর্তী ব্যারিস্টার পেতে কমপক্ষে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সায়েদুল হক এই ফেসবুক লাইভ, মানুষের জন্য কাজে সময় বেশি দেন বলে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে মাঝেমধ্যে বিরক্ত হন। তবে মেনেও নিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা সদরের পাশে পীরবাজার নামক গ্রামে আমার জন্ম। আমার বাবা সাধারণ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা গৃহিনী। আমাদের ধান ভাঙানোর মিল ছিল, তারপর ট্রাক্টর ছিল। সাধারণ একজন ব্যবসায়ীর সন্তান আমি বলতে পারেন। বাবা-মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট আমি। ছোট বেলা কেটেছে চুনারুঘাটেই।

স্থানীয় কেজি স্কুলে আমার শিক্ষার হাতে খড়ি। তারপর ডিসিপি হাইস্কুলে ভর্তি। এখান থেকেই এস এস সি পাশ করি। তারপর ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। এইচ এস সি পাশ করি ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মার্কেটিং এ ভর্তি হই। বিবিএ, এমবিএ পাশ করি।

সুমন বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর কোন চাকরিতে ঢুকে যেতে পারতাম। কিন্তু ছোটবেলা থেকে আমি স্বাধীনচেতা। বিবিএ, এমবিএ পড়ার পরও আমার মনে হয়েছে দেশের জন্য কাজ করতে গেলে স্বাধীন একটা পেশা প্রয়োজন। আইন পড়ার মধ্যে আমি সেই স্বাধীনতা খুঁজে পাই।

এছাড়া চিন্তা করে দেখলাম ব্যারিস্টার হলে বাংলাদেশে এর গ্রহণযোগ্যতা একটু বেশি। এদেশে ব্যারিস্টারদেরকে এখনও পজেটিভলি নেওয়া হয়। এজন্য মনে মনে ভাবলাম, চেষ্টা করে দেখি ব্যারিস্টার হতে পারি কি না। আল্লাহর রহমতে আমি শেষ পর্যন্ত ব্যারিস্টার হয়ে গেলাম।

তিনি বলেন, 'ইংল্যান্ডের লাইফটা ছিল আমার কঠিনতম। ইংল্যান্ডে আমার যে আত্মীয় স্বজন, আমি সেখানে যাওয়ার কিছুদিন পর তারা কেউ আমার পাশে ছিল না। সিলেটি হিসেবে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল তা পাইনি। যার কারণে বাস্তবতার মুখোমুখি হই।

আমি একজন ট্রলিম্যান হিসেবে কাজ শুরু করি। আমাদের দেশে যাদেরকে আমরা কুলি বলি। সেই কুলির কাজও করেছি। বিমানবন্দরে যখন ভিআইপিরা ট্রলি ফেলে রেখে যেতেন, ট্রলিগুলো নিয়ে এসে এক জায়গায় রাখতাম। আমি কুলির কাজ করেছি- এটা সবসময় স্বীকার করি।

আমার কাছে মনে হয়, আমি যদি চুরি না করি, কারো হক নষ্ট না করি তাহলে কোন কাজই ছোট না। আবার ড্রাইভারি করতাম। এসব কাজ করে কিছু টাকা জমাই। ২০০৮ সালে বার অ্যাট ল করতে শুরু করি।' লন্ডনে বার অ্যাট ল’ সম্পন্ন করার পর অনেকেই সুমনকে সেখানেই থেকে যেতে বলেন। কিন্তু দেশের জন্য এক অভাবনীয় অনুভূতির টানে তিনি ফিরে আসেন।

তার মনে হচ্ছিল, বাংলাদেশের সঙ্গে তার যে প্রেম হয়েছিল, সেটি কেন যেন হচ্ছে না ব্রিটেনের সঙ্গে। হয়তো এমন আরও অনেকেরই হয় না। সুমনের মনে হতো, লন্ডনে অনেক ব্যারিস্টার আছেন সেখানে কাজ করার জন্য। কিন্তু তার মাতৃভূমিতে যদি আরেকজন ব্যারিস্টার ফিরে ন্যূনতম হলেও কিছু করতে পারেন, তাতে দেশ উপকৃত হবে।

সুমন মনে করেন, বার অ্যাট ল’ করা পর্যন্ত তিনি দেশ-জাতি-সমাজ থেকে নিয়েছেন। এরপর বিশেষ করে ৪০ বছরের পর দেশ-জাতিকে তার দেওয়ার পালা। সেই দৃষ্টিভঙ্গিই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান।

প্রজন্মনিউজ২৪/শেখ ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন