স্বার্থপরায়ণতা সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য দায়ী

প্রকাশিত: ২২ জুন, ২০১৯ ০৪:৪৩:৪৯

স্বার্থপরায়ণতা সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য দায়ী

হাফিজুল ইসলাম লস্কর: সামাজিক সংস্কার বা নিয়ম তার জৌলস হারিয়ে মৃতপ্রায় নিয়মে পরিনত হচ্ছে। মানুষ এক সময় নিজেদের প্রয়োজনে সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এবং সামাজিক শান্তি, সাম্য, স্থিতিশীরতা ও নিরাপত্তার স্বার্থে তৈরী করেছিল বিবিধ নিয়মের। কিন্তু সেই মানুষই তার স্বার্থের জন্য সমাজের গলা টিপে ধরতে উদ্ধত হয়েছে। মানুষ সামান্য স্বার্থ এবং একঘোয়েমী মনোভাবের জন্য সামাজিক আদর্শগুলো মৃতপ্রায়।

আজ আমরা সমাজের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পায়, সামাজিক নীতি, আদর্শ, সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এমনকি মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক স্বার্থের নিরিখে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সমাজের মানুষ এক সেকেন্ডও স্বার্থ ছাড়া ভাবছে না। অথচ সমাজকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপদান করা হয়েছিল সৃষ্টি জগতের সামগ্রিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্বে। সমাজ  প্রতিষ্ঠার সূচনা লগ্নে সামাজিক সুবিধা থেকে সৃষ্টি জীবেরও সামগ্রিক কল্যাণ সাধিত হয়েছিল। কিন্তু মানুষ তার ক্ষণস্থায়ী জীবনের নশ্বর দেহের সামান্য সুখ, আভিজাত্য ও বিলাসিতার জন্য একের পর এক ধ্বংস করছে সামাজিক সৃজনশীলতাকে। যার ধরুন দুর্ভোগ বাড়ছে সমাজের অভ্যন্তরস্থ সৃষ্টি জীবের। মানুষের এই অতিমাত্রার স্বার্থপরায়ণতা বিরুপ প্রভাব পড়ছে প্রাকৃতির উপর। যেমন মানুষ তার স্বার্থের অধীন হয়ে প্রাকৃতিকে ধবংস করে নির্মাণ করছে বহুতল ভবন, নদ-নদী ভরাট করে, কৃষি জমি ভরাট করে ও বনাঞ্চল নিধন করে মানুষ নিজের স্বার্থস্বিদ্ধি করতে গিয়ে সমগ্র মানবজাতীকে মহাপ্রলয়ের দিকে ধাবিত করছে। 

মরার উপর খড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ডিশ কালচাল। সেই সাথে পশ্চাত্য প্রীতি, অন্ধ অনুকরণ ও ধর্মান্ধতা এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির দারপ্রান্তে আমরা। ডিশ কালচার, পশ্চাত্য প্রীতি, অন্ধ অনুকরণও ধর্মান্ধতার খারাপ দিকগুলো গ্রহণ করার ফলে মানুষের সাথে মানুষের ব্যবহারত দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বেড়েছে মানুষে মানুষে ঝগড়া, হানাহানি। মানুষের এ আচরনগত অস্তিরতা নষ্ট করছে সামাজিক স্থিতিশীলতা আর তার প্রভাবে জীবজগতের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। মানুষের এই স্থিরহীন অস্থিরতা আর স্বার্থপরায়ণতার  ফলে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। আজ সামাজিক সাম্য ও ন্যায়ের ভরসাস্থল সামাজিক বিচার আচার ব্যবস্থা স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থপরতার শিকলে আবদ্ধ।

মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ঢুকে পড়েছে বানিজ্যিক মনোভাব, ফলে শিক্ষার সামগ্রিক সৃজনশীলতা বিনষ্ট হয়ে শিক্ষাব্যবস্থা তার জৌলস হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অন্ধকারে দাবিত হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষার প্রবর্তনের সমাজে নৈতিকতার প্রবর্তন ঘটিয়ে ধার্মিক ও নৈতিক মানুষের সংখ্যা বাড়াতে হবে। নীতিবান মানুষের সংখ্যাধিক্য হলেই সমাজের উজ্জল ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।

সমাজস্থ মানুষকে ধার্মিক, সামাজিক, উদার ও কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে পারলে অনেকাংশে কমে যাবে সামাজিক অস্থিরতা। ফলে কমে আসবে সমাজের অপরাধ প্রবনতা, ঝগড়া-ফসাদ ও হানাহানির মাত্রা। আত্মকেন্দ্রিকতাকে পরিহার করে আত্মউদারতাকে লালন করতে হবে। সমাজ আপনাকে কি দিয়েছে সেই মনোভাবের পরিবর্তে আপনি সমাজকে কি দিয়েছেন সেই চিন্তা করতে হবে। সেই সাথে নিজেদের স্বার্থপরতা পরিহার করে সামগ্রিক কল্যাণের মানষিকতাকে লালন করতে হবে। তবেই সামাজিক সংস্কার বা সমাজ তার সামগ্রিক হারানো জৌলস ফিরে পাবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাবিল

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ