পদ্মায় নৌফাঁড়ি ওসির বেপরোয়া চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ২১ জুন, ২০১৯ ১২:১৭:৪৬

পদ্মায় নৌফাঁড়ি ওসির বেপরোয়া চাঁদাবাজি

পদ্মায় বালুবাহী বাল্কহেড, ট্রলার, জেলে নৌকাসহ বিভিন্ন নৌযানে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি চলছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ওসির ব্যক্তিগত ট্রলারে চেপে একজন কনস্টেবল এই চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে ওই কনস্টেবল তুলে দিচ্ছেন ওসি আমিনুল ইসলামের হাতে।

সরেজমিনে গত বুধবার পদ্মা নদীতে গিয়ে মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ওসির বেপরোয়া চাঁদাবাজির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সকাল পৌনে ১১টার দিকে মাওয়ায় পুরনো ফেরিঘাট (নৌ পুলিশ ফাঁড়িসংশ্লিষ্ট) বরাবর মাঝ পদ্মায় গিয়ে দেখা যায় একটি ট্রলারে করে বালুবাহী বাল্কহেড থেকে চাঁদা আদায় করছেন ফাঁড়ির কনস্টেবল আক্তার হোসেন। ইউনিফর্ম খুলে গেঞ্জি পরে তিনি বিভিন্ন নৌযান থেকে দু-তিন শ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ইউনিফর্ম পরে নেন কনস্টেবল আক্তার হোসেন। তবে তাতে পুলিশের আইডি কার্ড ঝুলানো ছিল না। আইডি কার্ড দেখতে চাইলেও তিনি দেখাতে পারেননি। কী করছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ডিউটিতে আছি।’ তবে ডিউটির কমান্ড সার্টিফিকেট (সিসি) বা বৈধ কাগজ দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘অফিসার ঘাটে টয়লেটে গেছেন। তাঁর কাছে সিসি রয়েছে।’

কনস্টেবল আক্তার এ সময় ফোন করে ওসি আমিনুল ইসলামকে ঘাটে ডেকে আনেন এবং ট্রলারে করে এই প্রতিবেদককেও ঘাটে নিয়ে যান। ওসি এই প্রতিবেদককে ফাঁড়িতে নিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। এমনকি নিয়মিত মাসোয়ারা দেওয়ারও প্রস্তাব দেন।

এই প্রতিবেদক ওসি আমিনুলের কাছে জানতে চান—শুধু একজন কনস্টেবল মাঝপদ্মায় ডিউটিতে কেন? নৌ ডাকাত বা জলদস্যুদের দ্বারা তাঁর জীবনহানির শঙ্কাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না কেন? ওই কনস্টেবলের কাছে সিসি নেই কেন? ডিউটিতে ব্যবহার হওয়া ট্রলারটি পুলিশের নয়, তাহলে এটি কার? তাছাড়া নৌ পুলিশের টহল বোট বা ট্রলারে ব্যানার লাগানোর নিয়ম থাকলেও এটিতে তা নেই কেন? এমন সব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তবে টহলে একজন কর্মকর্তার সঙ্গে দুজন কনস্টেবল থাকার বাধ্যবাধকতা স্বীকার করে ওসি বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে।’

এর আগে পদ্মায় ট্রলারে কথা হয় নৌ পুলিশ ট্রলারের চালক স্থানীয় হারুনের সঙ্গে। তিনি জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে তিনি পুলিশের সঙ্গে ট্রলারটিতে চালক হিসেবে কাজ করছেন। এ জন্য প্রতিদিন তাঁকে ৮০০ টাকা দেওয়া হয়। একজন কনস্টেবলই প্রতিদিন বিভিন্ন নৌযান থেকে চাঁদা আদায় করে। সর্বনিম্ন ৫০ থেকে ৫০০ টাকা হারে দিনে চাঁদা আদায় হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। সে হিসাবে মাসে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম মাওয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে ওসির দায়িত্ব নিয়ে এসেছেন এক মাস আগে। এখানে যোগ দিয়েই তিনি ফাঁড়ির সদস্যদের নিয়ে পদ্মা নদীতে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। পদ্মায় টহল দিতে ফাঁড়ির নিজস্ব একটি ট্রলার রয়েছে। এটিতে নৌ পুলিশের ব্যানার লাগিয়ে প্রতিদিন শিমুলিয়া ঘাটের ভাটিতে পদ্মায় একজন কর্মকর্তাসহ দু-তিনজন কনস্টেবল সিসিসহ টহল দেন। এর বাইরে ওসি আমিনুল ইসলাম ব্যক্তিগতভাবে দুই লাখ টাকায় একটি ট্রলার কিনে সেটি ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন চাঁদাবাজি। তবে ওসি আমিনুল চাঁদাবাজির ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদ বা সদুত্তর দিতে না পারলেও ট্রলারটি তাঁর নয় বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, এটি ভাড়ায় চালানো হয়ে থাকে।

নৌ পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) ফরিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, কারো একার দোষ পুরো নৌ পুলিশ নিতে পারে না। এ ধরনের ঘটনার সত্যতা পেলে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ












A PHP Error was encountered

Severity: Core Warning

Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library '/opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so' - /opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so: cannot open shared object file: No such file or directory

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: