বগুড়াতে ধানের শীষের ভোট বেশি থাকায় ইভিএমের সিদ্ধান্ত: রিজভী

প্রকাশিত: ১৭ জুন, ২০১৯ ০৩:৫৬:২৯

বগুড়াতে ধানের শীষের ভোট বেশি থাকায় ইভিএমের সিদ্ধান্ত: রিজভী

সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল দুর্বৃত্তপনার অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বগুড়াতে ধানের শীষের ভোট বেশি থাকায় মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেখানে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন।

আজ সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, মধ্যরাতের নির্বাচনের পরেও সরকারের ভেতর থেকে শঙ্কা দূরীভূত হচ্ছে না। সুষ্ঠু ও সর্বজনমান্য নির্বাচনকে পাথরচাপা দেয়ার পরেও তারা নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করছে না। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে ডিজিটাল দুর্বৃত্তপনার কোনো শেষ নেই।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পরিত্যক্ত ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিকে নিয়ে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এটি নিয়ে আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার প্রমাণ বগুড়ায় আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। ভোটাররা এই ইভিএম প্রক্রিয়ার জটিলতায় বেশি ভোট দিতে সক্ষম হয় না। অতীতে দেখা গেছে যে, ইভিএম জটিলতার জন্য ভোটাররা ভোট দিতে এসে লাইনে দিনভর দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছে। যেহেতু বগুড়াতে ধানের শীষের ভোট বেশি সেহেতু প্রতিটি কেন্দ্রেই পরিকল্পিতভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন।

রিজভী বলেন, ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকলে ইভিএম প্রক্রিয়ায় আরও বেশি জালিয়াতি করা সম্ভব। এর আগে ভোটারের বদলে প্রিজাইডিং অফিসার ইভিএম মেশিনের বোতাম চেপে ভোট চুরি করেছে। ইভিএম-এর কোনো পেপার ট্রেইল না থাকায় ভোট দেয়া বা না দেয়ার কোনো প্রমাণ থাকে না। ভারতের অনেক জায়গায় ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ হলেও সেখানে সকল বিরোধী দল এটির তীব্র প্রতিবাদ করেছে, হাইকোর্টে মামলাও আছে। যদিও সেদেশের ইভিএম-এ পেপার ট্রেইল ছিল। বাংলাদেশে ইভিএম পদ্ধতি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো-এই ইভিএম মেশিন দ্বারা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দূরবর্তী স্থানে থেকেও ভোট ডাকাতি করা সম্ভব।

তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে সরকারের আগ্রহের আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে এই মেশিন ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে লাভবান করা। একটি ইভিএম মেশিনের দাম ৪০ হাজার টাকার মতো পড়ে, অথচ নির্বাচন কমিশন সেই মেশিন কিনছে ২ লক্ষ টাকায়। অর্থাৎ কৌশলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ঘুষ দিয়ে মিডনাইট নির্বাচনকে সফল করা। আমি এই ইভিএম পদ্ধতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বিষয়ে বেশি চর্চা করে সেটি হলো মিথ্যা ও অসত্য বিবৃতি। মিথ্যা প্রচারে এরা অক্লান্ত ও বিরামহীন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও হত্যার পরেও সরকার সন্তষ্ট হতে না পেরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কলঙ্ক লেপন করে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনকে গত পরশু রাতে র‌্যাব বাসা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অদৃশ্য করে রাখে এবং ২০ ঘণ্টা পর গতকাল পটুয়াখালী সদর থানাতে হস্তান্তর করে।

রিজভী বলেন, হাসান মামুনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে নাটকীয় ও ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়েই করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মধ্যরাতের নির্বাচন প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়ে এখন পরবর্তী এজেন্ডা বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রচনা করছে। যে অভিযোগ হাসান মামুন এর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে তা শুধু হাস্যকরই নয় সেটি রীতিমতো যে সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট তা অবুঝ শিশুরও বুঝতে কষ্ট হবে না।

তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হাসান মামুনকে ফাঁসাতেই তার নাম জড়ানো হয়েছে। সরকারী কোনো বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় সামগ্রিক তত্ত্বাবধানতো থাকে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে। তাহলে সেখানে বিরোধী দলের ওপর বর্তমান জুলুমবাজ সরকারের এতো নিপীড়ণ-নির্যাতনের মধ্যে বিরোধী দলের কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতার কাহিনী নিঃসন্দেহে হাসির খোরাক জোগায়।

র‌্যাব কর্তৃক হাসান মামুনকে গ্রেফতারের একমাত্র কারণ হলো-ক্ষমতাসীনদের কুৎসিত মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সে উপযুক্ত জবাব দেয়। তাই তাকে কলঙ্কিত করার জন্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো একটি মামলায় জড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে শোনা যাচ্ছে-এমনিভাবে সরকারকে সমালোচনামুক্ত রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মর্জি ও প্রয়োজনমাফিক নানা মিথ্যা কাহিনী রচনা করে বিএনপি’র আরও অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীদের নামে কলঙ্কলেপনের উদ্দেশ্যে নানাধরণের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হবে।

রিজভী বলেন, এভাবে রক্তপায়ী দৈত্যরা ওত পেতে বসে আছে, ইঙ্গিতের অপেক্ষায়। জুলুমশাহীর হিংস্র আঁচড়ে জর্জর এখন বিরোধী মত, পথ ও দলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী নাৎসীবাদের বিভৎস দৃষ্টান্ত হাসান মামুনের গ্রেফতার। আমি হাসান মামুনকে গ্রেফতার ও তার বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। ক্ষমতাসীনদেরকে বলতে চাই, পরিবর্তনের ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করেছে। সংগ্রামী দেশবাসীর মিলিত মিছিল নির্দ্বিধায় সরকার পতনের দিকে ধেয়ে আসছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাবিল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ