এখনো যে দেশে বেঁচে আছেন সম্রাট

প্রকাশিত: ১৪ মে, ২০১৯ ০৪:২৬:৩৬

এখনো যে দেশে বেঁচে আছেন সম্রাট

সম্রাটদের আমল তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে কেবল জাপানেই ‘সম্রাট’ পদবী রয়েছে। জাপানের রাজপরিবারই বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো রাজকীয় পরিবার। বিস্তারিত জানাচ্ছেন খায়রুল বাশার-

সম্রাট, সিংহাহন, রাজা, রানী, যুবরাজ শব্দগুলো একবিংশ শতাব্দীর পুঁজিবাদের যুগে, কালের স্রোতে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ‘রাজার রাজত্বের’ কোন স্থান নেই। প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র ইত্যাদি ব্যবস্থা রাজকীয় পদ্ধতির স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু এরপরও কিছু কিছু দেশে রাজতন্ত্র বিদ্যমান আছে, এরকমই একটি দেশ হলো জাপান।

জাপানের সম্রাটের রাজনৈতিক কোন ক্ষমতা নেই, তবে তিনি দেশের সর্বোচ্চ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন, অনেকটা ইংল্যান্ডের রানীর মতো। বিশ্বে কোন কোন দেশে রাষ্ট্রপ্রধানকে রাজা বা রানী কিংবা বাদশাহ নামে ডাকা হয়, যেমন- সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ ইত্যাদি।

জাপানিজ পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়, যিশু খ্রিষ্টের জন্মের ৬০০ বছর আগে থেকে নাকি এই রাজতন্ত্র চলছে। আর একসময় জাপানের সম্রাটদের ‘ঈশ্বর’ ভাবা হতো। জাপানের সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ছেড়ে দিয়েছেন। নতুন সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন তার ছেলে যুবরাজ নারুহিতো।

নতুন সম্রাট সিংহাসনে বসেছেন গত ১ মে। এর মধ্যদিয়েই জাপান প্রবেশ করেছে নতুন যুগ ‘রেইওয়া’তে। জাপানি ‘রেইওয়া’ অর্থ ‘শৃঙ্খলা এবং শান্তি’। জাপানে একেক সম্রাটের শাসনকাল মানে হলো একেকটি যুগের শুরু। অনেকটা আগেকার দিনে যেমন ‘মোঘল যুগ’ বা ‘পাল যুগ’ ছিল, ব্যাপারটা অনেকটা সে রকম। জাপানে প্রত্যেক সম্রাটের সময় যুগের একটি নাম থাকে। সেই নাম ওই সময়ের মুদ্রায়, সংবাদপত্রে, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং দাফতরিক সব কাগজপত্রে মুদ্রিত হয়।

প্রায় প্রত্যেক সম্রাটের শাসনামলে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করা হয়। যেমন- নতুন যুগ উপলক্ষে জাপানে বদল হতে যাচ্ছে জাতীয় কাগুজে মুদ্রায় মুদ্রিত প্রতিচ্ছবি, যা ২০২৪ সালে বাজারে আসবে। অনেক দেশের মুদ্রায় দেখা যায়, শুধু রাজনৈতিক নেতাদের বা রাষ্ট্রপ্রধানদের ছবি। কিন্ত জাপান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ দেশের নোটে কোথাও সম্রাটের বা রাষ্ট্রপ্রধানদের ছবি নেই।

বর্তমানে এ দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমান নোট ১০০০০ ইয়েনের নোটে ছবি আছে ইউকিচি ফুকুজাওয়ার (১৮৩৫-১৯০১), যিনি একজন বড় মাপের শিক্ষাবিদ, দার্শনিক ছিলেন। এবার একই নোটে ছবি দেওয়া হবে শিবুসাওয়া এইইচির (১৮৪০-১৯৩১), তিনিও ছিলেন একজন বড়মাপের শিল্পপতি, শিল্প উদ্যোক্তা ও সমাজ সংস্কারক।

কবি, লেখক, বিজ্ঞানীদেরও এ দেশ সম্মান জানিয়েছে তাদের মুদ্রা ও বিভিন্ন মাধ্যমে। যেমন- ৫০০০ ইয়েনের নোটে বর্তমানে ছবি আছে বিখ্যাত কবি ও লেখক ইচিয়ু হিগুচির (১৮৭২-১৮৯৬), ১০০০ ইয়েনের নোটে ছবি আছে হিদিও নোগুচির (১৮৭৬-১৯২৮), যিনি একজন বিখ্যাত ব্যাক্টেরিয়া বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

আগামীর ১০০০ ইয়েনের নোটেও একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর ছবি থাকছে। আসলে জাপানে ক্ষমতায় যে-ই থাকুক না কেন, তারা তাদের সেরা সন্তানদের ঠিকই মূল্যায়ন করেছে। আর এ কারণেই হয়তো এখানে সেরা বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্প উদ্যোক্তারা জন্ম নেয়।

সে যা-ই হোক, সম্রাট আকিহিতোর যুগের নাম ছিল ‘হেইসেই’, যার অর্থ ‘শান্তি অর্জন’। বিগত সম্রাটের শাসনামলে জাপান বিশ্বে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। আশা করা হচ্ছে- বর্তমান সম্রাটের যুগেও জাপান তার কাক্ষিত শৃঙ্খলা এবং শান্তি অর্জন করবে।

জাপানের নতুন যুগকে জানাই স্বাগতম। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক হোক আরও বন্ধুত্বময়।

লেখক: পিএইচডি গবেষক, সাগা ইউনিভার্সিটি, জাপান।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত



ব্রেকিং নিউজ