তরুণীকে বিয়ের কথা বলে বাড়িতে এনে নির্যাতন

প্রকাশিত: ১২ মে, ২০১৯ ০৬:০০:৫৯

তরুণীকে বিয়ের কথা বলে বাড়িতে এনে নির্যাতন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বিয়ের কথা বলে বাড়িতে ডেকে এনে এক তরুণীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেছে প্রেমিক রাসেল ও তার পরিবারের সদস্যরা। নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী পরবর্তীতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে রক্ষা পেয়েছেন। ওই তরুণী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ উজানচরের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে।

প্রেমিক রাসেল মোল্লা (২২) সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের শ্যামের মোড় এলাকার শাজাহান মোল্লার ছেলে। ওই তরুণী জানান, তিনি গোয়ালন্দ কামরুল ইসলাম সরকারি কলেজ থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। সংসারে অভাব অনটনের জন্য আর পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে গত ২ মে তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গাজীপুরের সমসের ফ্যাশন নেট গার্মেন্টেসে কাজ নেয়।

এর আগে গত ৬ মাস ধরে তার সঙ্গে রাসেল মোল্লার প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। ৫ মে রাসেল তাকে বার বার ফোন করে বলে, আমার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, তুমি আজই সব কিছু নিয়ে চলে আসো। রাসেলের কথামতো তিনি ওইদিন সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে রওনা দিয়ে রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছায়। ওই সময় রাসেল তাকে নিয়ে খানখানাপুর এসে তাদের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। পথে নির্জন স্থানে রাসেল তাকে কয়েক দফা ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পড়ে রাসেলের বাড়িতে পৌঁছানোর পর রাসেল তাকে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর রাসেলের পরিবারের লোকজন তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে বাড়ির আঙিনায় একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। এসময় তার কাছ থেকে স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও নগদ টাকা নিয়ে নেয় তারা। ৬ মে সকালে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কয়েক যুবক তার অশ্লীল ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে একটি রিকসায় উঠিয়ে দেয়।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই তরুণী জানান, এখন রাসেলকে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। আমি আমার সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র ফেরত চাই এবং আমাকে নির্যাতন করার বিচার চাই। নির্যাতিত তরুণীর মা জানান, নির্যাতন করে তার মেয়েকে ওই দিন রিকশায় তারা ঠিকই তুলে দিয়েছিল। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তার মেয়ে বাড়িতে না এসে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়ির বাথরুমে থাকা হারপিক খেয়ে

আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ জানিয়েছে ঘটনাস্থল যেহেতু রাজবাড়ী সদর তাই সেখানেই অভিযোগ দিতে হবে। তাই তারা রাজবাড়ী সদর থানায় অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাসেলের বাড়িতে গিয়ে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়িতে থাকা তার মা সালেহা বেগম ও খালা সেলিনা বেগম নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে জানান, রাসেলের সঙ্গে ওই মেয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। অন্য কারও সঙ্গে ওই তরুণী এসে তাদের বাড়িতে ওঠে।

খানখানাপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. মোস্তাক জানান, তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর ওই তরুণীকে আর মারধর করা হয়নি। বরং তিনি ওই তরুণীকে উদ্ধার ও রিকশা ঠিক করে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নির্যাতিত তরুণীর পরিবার থানায় এসেছিল। ঘটনাটি যেহেতু রাজবাড়ী সদর থানার মধ্যে ঘটেছে তাই তাদেরকে সদর থানায় অভিযোগ দেয়ার পরমর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/মুজাহিদ

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ