মসজিদে শিশু নিষিদ্ধের নোটিশে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১০ মে, ২০১৯ ১০:৫৫:৪৮

মসজিদে শিশু নিষিদ্ধের নোটিশে সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ

‘শিশু/বাচ্চাদের নিয়ে মসজিদে প্রবেশ নিষেধ- নির্দেশনায় উত্তরা ১০নং সেক্টর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ’ লেখা একটি দেয়াল নোটিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। নোটিশটি শেয়ার করে নেটিজেনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আলমগীর নিষাদ নামে একজন লিখেছেন, “নামাজ পড়ার সময় যদি পেছনের সারি থেকে বাচ্চাদের হাসির আওয়াজ না আসে তাহলে পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে ভয় করুন (তুরস্কের মসজিদের দেয়াল লিখন)।”

ক্ষোভ প্রকাশ করে রাশেদুজ্জামান রাসেল নামে একজন লিখেছেন, “যারা হারাম ইনকাম করে, ঘুষ খায়, দুর্নীতি করে তাদের মসজিদে প্রবেশ জায়েজ আছে, নির্দেশনায় মসজিদ কর্তৃপক্ষ...।”

রাশেদুজ্জামান রাসেলের পোস্টটি শেয়ার করে মোয়াজ্জেম হোসেন মজনু নামে একজন লিখেছেন, “আফসোস।” ফাতেমা (বিনতে) শরীফ নামে একজন এ সংক্রান্ত ঘটনা ও একাধিক হাদিস শেয়ার করেছেন। সেগুলো হলো-

রাসুল (সাঃ) একবার মসজিদে খুতবা দিচ্ছিলেন এবং তিনি লক্ষ্য করলেন, তার দুই নাতি মুসল্লিদের নানান ভাবে বিরক্ত করছেন এবং সেই পর্যায়ে তিনি খুতবা থামালেন। তারপরে দুই নাতিকে কোলে নিয়ে তিনি খুতবা শেষ করলেন কিন্তু তিনি তাদেরকে কোনো বকা দিলেন না।

বুখারী শরীফে এসেছে- রাসুল (সাঃ) তার নাতনি হজরত উমামা বিনতে যায়নাব (রাঃ) কে বহন করে (কোলে কিংবা কাঁধে) নামাজ আদায় করতেন। যখন তিনি দণ্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদাহ করার সময় নামিয়ে রাখতেন।

এছাড়াও রাসুল (সাঃ) এর খুতবা দেওয়ার সময় তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেওয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন, খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেওয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি। (নাসায়ী শরীফ)

এরপর স্ট্যাটাসটিতে মন্তব্য জুড়ে দিয়ে বলা হয়, মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে বাচ্চাদেরকে কোলে রেখে নামাজ পড়িয়েছেন। আমরা পোস্টার দিয়ে বন্ধ করছি বাচ্চাদের মসজিদে আসা। আহা!

আলী হুসাইন নামে একজন এনিয়ে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। এতে তিনি হাদিস, মসজিদে শিশু সন্তানকে নিয়ে যাওয়ায় তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং নিজের মতামত জানান। সেটা হলো-

মুসনাদে আহমাদের হাদিস। একবার রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নামাজের) জামাতের একটা সিজদাহ খুব দীর্ঘায়িত করলেন। এতই দীর্ঘায়িত করলেন যে, সাহাবাগণ (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) ভাবলেন হয়তো আল্লাহর রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সমস্যা হয়েছে, অথবা তাঁর ওপর ওহী নাজিল হচ্ছে। তাই তিনি সিজদাহ থেকে উঠতে পারছেন না।

সালাত (নামাজ) শেষে সাহাবাগণ দীর্ঘ সালাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে লাগলেন। কেউ বললেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আপনার কি তখন কোনো সমস্যা হচ্ছিল?” আবার কেউ বললেন, “জিবরাইল কি তখন আপনার ওপর ওহী নিয়ে এসেছিল?”

রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ রকম কিছুই হয়নি আমার। আসলে, আমি যখন সিজদায় ছিলাম, তখন আমার নাতি হাসান আমার কাঁধে চেপে বসেছিল। ওর মনের আশা পূরণ হওয়ার আগে ওকে ঘাড় থেকে নামাতে মন চাইছিল না আমার।”

মন্তব্য অংশে আলী হুসাইন বলেন, নবীজি যখন সালাত পড়ছিলেন, তখন তার দৌহিত্র হাসান গিয়ে ঘাড়ে চেপে বসলো। এতে করে কিন্তু নবীজি সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোটেও বিরক্ত হননি। সালাত শেষ করে হাসানকে ধমক দেননি। হাসানের পিতা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শাসিয়ে দেননি তাকে মসজিদে আনার জন্য। এমনকি, হাসান ঘাড়ে চেপে বসায় রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতেও মনোযোগে বিঘ্ন ঘটেনি। তিনি পরদিন মসজিদের ফটকে বিলবোর্ড টানিয়ে দেননি- ‘মসজিদে বাচ্চা নিয়ে প্রবেশ নিষেধ’।

মুহাম্মদ (সাঃ) নিজে বাচ্চাদেরকে কোলে রেখে নামাজ পড়িয়েছেন। রাজধানীর উত্তরার মসজিদ কর্তৃপক্ষের নোটিশটি দেখে খুব বেশি হতবাক হইনি, তাদের জ্ঞানের সীমানা এতটুকুই। অধিকাংশ মসজিদ কর্তৃপক্ষ এবং মুসল্লিদের ধারণা এমনই। ছেলেকে নিয়ে মসজিদে গিয়ে প্রায়শই এই ধরনের কিছু মানুষের মুখোমুখি আমাকে হতে হয়। সেদিন ছেলেকে নিয়ে মসজিদে বসে আছি, খাদেম উচ্চ স্বরে অনেক লোকজনের সামনে বললেন, “এ বাচ্চা কার?

অনেকটা অপরাধীর মতো করে বললাম, “আমার”। উনি শব্দের গতি ঠিক রেখে বললেন, “মসজিদে বাচ্চা নিয়ে আসেন কেন?” আলী হুসাইন আরও লিখেন, আমার ছেলে সব দেখল, সবই শুনল। শিশুরা তো সবই বুঝে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মুসল্লি নানান অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করে থাকেন এবং সেটা আমার ছেলের সামনেই। কোরআন, হাদিস আর রাসুল (সা.) এবং সাহাবীদের জীবন, আচরণ সম্বন্ধে পড়ালেখা এবং সঠিক ধারণা না থাকাই এর মূল কারণ।

মসজিদ হোক শিশুমেলা।

এ সম্পর্কিত খবর

দেশটা এখন আওয়ামী মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল

ছাত্রলীগ নেতার পর একই নারীর সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ভিডিও ভাইরাল

৩টি ড্রোন ধ্বংস করল ইরান, নিরাপদে আছে ইসফাহানের পারমাণবিক স্থাপনা

গাজা: বিমান হামলায় বেঁচে যাওয়া বালকের প্রাণ গেল সাহায্য নিতে গিয়ে

ভারতে নারী ভোটার বাড়ছে, ৫ বছরে ছাপিয়ে যেতে পারে পুরুষদের

পর্তুগালে বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের স্থাপত্য প্রদর্শনী

মাদক ব্যবসার মূল হোতা সোর্স শহীদ ধরা ছোঁয়ার বাইরে

মুস্তাফিজের আইপিএল খেলা নিয়ে দুই বোর্ড পরিচালকের ভিন্ন মত

১২ বছর ধরে ইমামতি করে বেতন দুই হাজার, সেটাও ঠিকমতো পান না

জৌলুশ হারাচ্ছে বাংলা নববর্ষের হালখাতা

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ