সিরাজগঞ্জের যমুনার গর্ভে স্কুলটি

প্রকাশিত: ০৫ মে, ২০১৯ ১২:৩৫:১১

সিরাজগঞ্জের যমুনার গর্ভে স্কুলটি

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ডিগ্রি তেকানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষপর্যন্ত ধসে যমুনা গর্ভে বিলীন হল ।এ বিদ্যালয়টি রক্ষায় পাউবোর গৃহীত পদক্ষেপ কোনো কাজেই আসলো না।

যমুনার ভাঙন রোধে শুষ্ক মৌসুমে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিয়ে বর্ষার শুরুতে তড়িঘড়ি বালির বস্তা ফেলেও ঠেকানো গেল না বিদ্যালয়টি।যমুনা নদী তীব্র ভাঙন শুরু হলে স্থানীয়দের পাশাপাশি অভিভাবক, গণমাধ্যমকর্মীরা পাউবোর প্রকৌশলীদের বার বার অবগত করেন।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গত মাসে ঝুকিপূর্ণ বিদ্যালয়টির বাস্তব অবস্থা জেনে জরুরি পদক্ষেপ নিতে পাউবোকে তাগিদ দেন। সে সময় বালির বস্তা ফেলে বিদ্যালয়টি ভাঙন থেকে রক্ষারও প্রতিশ্রুতি দেন পাউবোর প্রকৌশলীরা।

শেষ পর্যন্ত দেরীতে হলেও বালির বস্তা ফেলে বিদ্যালয়টির পাশে নদীর পাড় সুরক্ষার উদ্যাগ নেওয়া হয়। বিন্তু সেটাও অনেকটা দায়সারা ও লোক দেখানো। পাউবোর উদাসীনতায় শেষ পর্যন্ত শনিবার বিলীন হলো বিদ্যালয়টি।

জানা গেছে, ১৯৩৫ সালে টিনের ঘরে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। গত ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে প্রায় ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় একতলা পাকা ভবন। এরপর ২০১৫ সালে পিইডিপি-৩’র আওতায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এলজিইডি থেকে ভার্টিকাল বা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত করা হয়। ৩ তলা ভবনটি পেয়ে যমুনা পাড়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও বেশ আনন্দিত ছিলেন।

তেকানী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়টির পাশে যমুনা নদী চলে আসায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতেন অভিভাবকরা। ইউএনও ও শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি আমরা অবগত করেও কোনো লাভ হয়নি।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রাশেদা বেগম জানান, 'উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা বারবার পাউবোকে অবগত করেছি বিষয়টি।'

কাজিপুর উপজেলা প্রকৌশলী বাবলু মিয়া জানান, ভাঙন ঝুঁকির বিষয়টি ইউএনওর মাধ্যমে পাউবোকে জানানো হয়েছে।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, বিদ্যালয়টির ঝুঁকির বিষয় জেনে পাউবো শেষ মুহূর্তে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা অপ্রতুল ছিল।

উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী বলেন, দুই মাস আগে পাউবোকে ভাঙনের বিষয়টি অবগত করা হয়। তারা ৫ হাজার বালির বস্তা ফেলে। ভাঙন রোধে আরও প্রায় ১৫ হাজার বস্তার প্রয়োজন ছিল। সেটা শেষ পর্যন্ত ফেলা হয়নি।

পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, 'সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুরোধে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা সেখানে সুরক্ষার চেষ্টা করি। প্রায় ৫ হাজার জিও ব্যাগে বালি ভরে সেখানে ফেলা হয়। কিন্তু সুরক্ষা স্থানের অদূরে আকস্মিক ব্যাক হুইল বা ঘূর্ণাবর্তের কারণে বিদ্যালয়টিকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি টাস্কফোর্স টিমও বিষয়টি পরিদর্শন করেছে।'

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিদ্যালয়টির পাশে ভাঙন ঠেকাতে পাউবো থেকে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগে থেকেই সেখানে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন ঝুঁকি ছিল। আমরা তা ঠেকাতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছি।'

নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাঙনের ব্যাপকতা পুরো ১ কিলোমিটার অংশেই। কিন্তু সুরক্ষার পদক্ষেপ নেওয়া হয় মাত্র ১০০ মিটার এলাকায়। নদীর কিনারে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এলজিইডির এ ধরনের বিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণের আগে পাউবোর মতামত নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এখানে সেটি নেওয়া হয়নি। পাউবোর পূর্ব মতামত নিলে হয়তো এ ধরনের ধসে সরকারি অর্থের অপচয় হতো না।

সিরাজগঞ্জ এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, জনপ্রতিনিধের চাপের কারণে তাদের নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন বা স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। যমুনার পশ্চিম পাড়ে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের আগে পাউবো কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার ঘুরেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কাছ থেকে সেরকম সহযোগিতা পাওয়া যায় না।  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা বলেন, কাজিপুর ও সদরসহ জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ১৩৩টি ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ১০টি বিদ্যালয় যমুনা তীরবর্তী হওয়ায় বিলীন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ