তিস্তা, যমুনাসহ ১৩ নদী পানিশূন্য, সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০৫:৩০:৪০

তিস্তা, যমুনাসহ ১৩ নদী পানিশূন্য, সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয়

উত্তরাঞ্চলে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে যমুনা, ঘাঘট, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক শুকিয়ে গেছে। মাইলের পর মাইল এলাকা বিরান বালুভূমিতে পরিণত হয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই অঞ্চলের ইরি-বোরো মৌসুমে নদীনির্ভর সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে।

তাছাড়া নদ-নদী ঘিরে জীবীকা নির্বাহ হয় এমন মানুষদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব এবং অর্থ সংকট।

স্বাভাবিকভাবে বৈশাখ মাস পর্যন্ত নদীগুলোতে পানি থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এ বছর ফাল্গুনের শুরু থেকেই অস্বাভাবিকভাবে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়াসহ ১৩টি নদী মূলত শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। চারদিকে চর জেগে উঠেছে। নদীর মূল গতিপথের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

নাব্যতা সংকটের কারণে কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, জামালপুর, সারিয়াকন্দিসহ কয়েক জেলার নদীপথ এখন বন্ধ। বর্তমানে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায়, ট্রলার বা নৌকা কোনো নৌযানই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।

এ অবস্থায় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও যোগাযোগের জন্য ঘোড়ারগাড়ি ব্যবহার করলেও বালু ভূমির উপর দিয়ে তাও আবার ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।

বালাসী ঘাটের ইজারাদার হাসু মিয়া বলেন, বর্তমানে ঘাট টিকে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। নদী শুকিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে, ফলে ঘাটের ব্যবসা শেষ। বর্ষাকালে নদীর নাব্যতা স্বাভাবিক থাকার সময় গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর, কর্তিমারী, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ ঘাট, ঘুটাইল, ইসলামপুর পর্যন্ত নৌ চলাচল অব্যাহত থাকে।

তিনি বলেন, এবছর বৈশাখ আসার আসার আগেই ফাল্গুনেনর মধ্য সময় থেকে নাব্যতা সংকটের কারণে গাইবান্ধার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ রুটেও নৌ চলাচল দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘুরে ঘুরে দীর্ঘ সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নৌযানগুলোকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হচ্ছে। আর তাই অনেক রুটে নৌযান চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে নৌরুটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বালসি ঘাটের ইজারাদার।

বাহাদুরবাদ চরাঞ্চলের কৃষক ফজলুল সরকার বলেন, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জমির সেচকাজে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া চরাঞ্চলের মানুষদের দূরবর্তী এলাকায় যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, এই নদীগুলোতে কখনও ড্রেজিং করা হয়নি। ফলে উজানে বালু আর নদী পাড় ভেঙে ভরাট হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, দহবন্দ, বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুরসহ ৬টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী এখন শীর্ণকায় নালার সাদৃশ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর ভূমিজুড়ে শুধু ধু ধু বালুচর।

কাপাসিয়া এলাকার জেলে আকবর মণ্ডল বলেন, যে নদীর বুকে নৌকায় চড়ে মানুষ এপাড় থেকে ওপাড়ে যাতায়াত করতো, এখন সেই নদীতে মানুষদের পাঁয়ে হেঁটে বিশাল চর অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছায়। এক সময় যারা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখন তারা বেকার। এমনকি যারা নৌকায় করে লোক পারাপার করতো তারাও এখন কাজ হারিয়ে অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/শরিফুল ইসলাম

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ