নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসী হামলা

স্বামীকে মসজিদে খুঁজতে গিয়ে প্রাণ দিলেন তাজমিন

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ, ২০১৯ ১০:২৫:২৮

স্বামীকে মসজিদে খুঁজতে গিয়ে প্রাণ দিলেন তাজমিন

প্যারালাইসিসে আক্রান্ত স্বামী ফরিদ উদ্দিন আহমদকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে মসজিদে নিয়ে গিয়েছিলেন হুসনে আরা তাজমিন। প্রথমে স্বামীকে পুরুষদের মসজিদের ভেতরে রেখে নিজে যান লাগোয়া নারীদের মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করতে। প্রায় আধ ঘণ্টা পর হঠাৎ গুলি ও চিৎকার শুনে আরও কয়েকজনের সঙ্গে দৌঁড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। অসুস্থ স্বামীর খোঁজে পুরুষদের মসজিদের দিকে দৌঁড় দেন তাজমিন। কিন্তু স্বামীকে খুঁজে পাওয়ার আগেই গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি।

এই মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় বেঁচে গেছেন তাজমিনের অসুস্থ স্বামী। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত তাজমিনের গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের জাঙ্গালহাটা গ্রামে। ওই গ্রামের প্রয়াত নুর উদ্দিনের তিন মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে তাজমিন সবার ছোট ছিলেন। তাজমিনের আরেক বোন ও ভাই নিউজিল্যান্ডে থাকেন। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার দিকে নিউজিল্যান্ড থেকে তাজমিনের মৃত্যু সংবাদ দেশে জানানো হয়।

তাজমিনের শ্বশুরবাড়ি সিলেটে বিশ্বনাথের মীরেরচক গ্রামে। প্রায় ২৫ বছর ধরে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ফরিদ-তাজমিন দম্পত্তির ১৬ বছরের এক মেয়ে রয়েছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাজমিনের বড় ভাই নাজিম উদ্দিন বলেন, জুম্মার নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমার ছোট বোন সন্ত্রাসীর গুলিতে মারা গেছে। নিউজিল্যান্ড থেকে আমার ভাইয়ের বউ টেলিফোনে খবর দিয়েছেন। সবার ছোট বলে তাজমিন সকলের আদরের ছিলেন। আরেক ভাই আগেই মারা যাওয়ায় এখন তিনি ও দুই বোন রইলেন বলে জানান নাজিম উদ্দিন।

শুক্রবার সকালে মৃত্যুর সংবাদ আসার পর আর নিউজিল্যান্ডে যোগাযোগ করতে পারেননি নাজিম উদ্দিন। নিউজিল্যান্ড পুলিশ কখন লাশ হস্তান্তর করবে তা বলতে পারেননি তিনি। তাজমিনের স্বামী-সন্তানের সঙ্গে দাফন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানান তিনি। সিলেট মহানগর কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ আর শাকিলের চাচাতো বোন তাজমিন। শাকিল  বলেন, নিউজিল্যান্ড পুলিশের পক্ষ থেকে হুসনা আপার (তাজমিন) মৃত্যুর খবর ওখানে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপর তারা দেশে ফোনে জানিয়েছেন।

তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাজমিনের লাশ পুলিশ হস্তান্তর করেনি বলে জানান শাকিল।তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে পারিবারিকভাবে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে তাজমিনের বিয়ে হয়। তারপর তিনি স্বামীর সঙ্গে নিউজিল্যান্ড চলে যান। প্রায় ১০ বছর আগে তারা সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন।এদিকে তাজমিনের ভাগনে মাহফুজ চৌধুরী নিউজিল্যান্ড প্রবাসী স্বজনদের বরাত দিয়ে জানান, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। জুম্মার নামাজের জন্য তার খালা (তাজমিন) অসুস্থ খালুকে (ফরিদ উদ্দিন) হুইল চেয়ারে বসিয়ে মসজিদে নিয়ে যান।

সেখানে খালুকে প্রথমে পুরুষদের মসজিদের ভেতরে রেখে খালা নারীদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে চলে আসেন। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুরুষদের মসজিদের ভেতর থেকে গুলির শব্দ শুনে খালা (তাজমিন) দৌঁড়ে বেরিয়ে পুরুষদের মসজিদের দিকে যান। এ সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। এদিকে গুলিবর্ষণ শুরু হলে মসজিদের কয়েকজন মুসল্লী অসুস্থ ফরিদ উদ্দিনকে নিরাপদে বাইরে বের করে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তিনি নিউজিল্যান্ডে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানান নিহত তাজমিনের চাচাতো ভাই শাকিল।

তাজমিনের আপন চাচাতো ভাই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফুড ইনচার্জ নিজাম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ফরিদ উদ্দিন অনেক দিন ধরে অসুস্থ। প্রায় ২৫ বছর আগে তিনি নিউজিল্যান্ড চলে যান। তার আগে গোলাপগঞ্জে শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সিলেট পলিটেকনিকের ছাত্র থাকাকালে তিনি ইন্সটিটিউট সংসদের জিএস ছিলেন। এইচএসসি পড়ার সময় তাজমিনের বিয়ে হয়ে যায়।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ