চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে-প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫ মার্চ, ২০১৯ ০২:৫৮:২১

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে-প্রত্যাশা অর্থমন্ত্রীর

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক অর্জিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার মতে, অর্থবছর শেষে এবার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত: চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে নিজ দপ্তরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম আল মুতাইরি’র সঙ্গে মত বিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

 

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে এবং গত বছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা চলতি বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি।’ উল্লেখ্য, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ এবং চলতি বাজার মূল্যে মোট জিডিপি’র আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৫ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মূল বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হচ্ছে ২২ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু চলতি অর্থবছরে একটি ধারাবাহিক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিধায় এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না। চলতি নির্বাচনী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে শিল্প ও সেবা খাত। দ্বিতীয়ত: চাহিদার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ ও ভোগকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় গতি সঞ্চার হলে এটা বিনিয়োগকে আরও ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া সময়মতো কৃষি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত থাকায় চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছে সরকার।

 

গত অর্থবছরে প্রধান তিনটি ফসল আউস, আমন ও বোরোর উৎপাদন বেড়েছে যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ২ দশমিক ৫ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মত বিনিময়কালে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ বাড়ানোর আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই দেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউট সোর্সিং-এর একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এই শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে। আমরা সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করেছি। বিনিয়োগকারীরা নিজস্ব চাহিদা মোতাবেক এসব জমি তারা ব্যবহার করতে পারবেন।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়েছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ বিলিয়ন ডলার। এ বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগগুলোর পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিত প্রাণ জনশক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের রয়েছে বৃহৎ শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, জ্বালানি, টেলি-কমিউনিকেশন, তথ্য প্রযুক্তি, পেট্রো কেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের মত বাংলাদেশের বিভিন্ন উদীয়মান খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

 

সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ এইচ এম আল মুতাইরি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর সৌদিতে প্রচুর সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গমন করে। শুধু এ বছরেই ওয়ার্ক ভিসা দেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৩০০, ওমরা ভিসা ৮০ হাজার এবং ১ লাখ ২৮ হাজার হজ্জ ভিসা দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে দুদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণে দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ ও সহযোগিতার ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আগামী ৭ মার্চ সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করবে বলে জানান তিনি।

 

প্রজন্মনিউজ২৪/তারেক আজিজ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ