অশনাক্ত ২১ লাশ বিভিন্ন হাসপাতালের ফ্রিজে বার্ন ইউনিটের ৯ জনই ঝুঁকিতে

৩০ স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ১০:১৭:৩০

৩০ স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

চকবাজারে অগ্নিকান্ডে নিহত হওয়া ৬৭ জনের লাশ উদ্ধার করা গেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে ৪৬ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বাকী ২১ লাশের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় সনাক্তে ৪০ জনের ডিএনএর স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া গতকালও নিহত অনেককে খুজতে তাদের স্বজনরা ঢামেক হাসপাতালের সামনে এসে জড়ো হয়েছেন। সেখানে স্বজন হারাদের কান্নায় এক হৃদায়বিদাক পরিস্থিতির তৈরি হয়। শনাক্ত হওয়াদের দাফন সম্পন্ন হাসপাতাল ও স্বজন সূত্রে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে আজিমপুর কবরস্থানে ১৪টি লাশ, নোয়াখালীতে ১৩ জন, চাঁদপুরের তিনজন, কুড়িগ্রামে তিনজনসহ শনাক্ত হওয়া অন্যদের লাশ তাদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে।

 গতকাল দুপুরে ঢামেক মর্গের সামনে বাবা সুমনের কোলে করে মাকে খুঁজতে এসেছেন ৫ বছরের সন্তান সানিন। সে তারা মা শিলা বেগমকে খুঁজছিল। অগ্নিকান্ডের সময় ওষুধ কিনতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন শিলা বেগম। কয়েকজন স্বজন তাদের পরিবারের নিহত তিন সদস্যকে খুঁজতে এসেছেন। নিহতরা হলেন- নাসরিন জাহান (২৪), তার স্বামী সালেহ মো. লিপু (৩২) ও সন্তান আবু তাহিরের লাশ শনাক্ত করতে পারেনি স্বজনরা। তারা গতকালও লাশ শনাক্ত করতে না পেরে ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন দুই পরিবারের সদস্যরা। নাসরিনের ভাই আনোয়ার হোসেন রনি বলেন, লাশ খুজে না পেয়ে আমরা দু’জনের ডিএনএ স্যাম্পল দিয়েছি।

 ঘটনায় নিখোঁজ ব্যবসায়ী মো. ফয়সালের স্বজনরাও ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে গেছেন। তারা গতকালও বাবার লাশ শনাক্ত করতে পারেন নাই। বাবাকে খুজতে ফয়সালের শিশু কন্যা ফারিহা তাসনিমও মর্গের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। ১৮ লাশের পরিচয় শনাক্তে ৩০ স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ নিহতদের মধ্যে পরিচয় শনাক্তহীন থাকা ২১টি লাশের মধ্যে ১৮ লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য ৩০ জন স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। বাকি আরও ৩টি লাশের পরিচয় শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ নমুনা দিতে গতকাল পর্যন্ত কোন স্বজন আসেননি।

 সিআইডির সহকারী ডিএনএ অ্যানালিস্ট নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, আমরা সকাল ১১টা থেকে স্বজনদের ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করি। ১৮ লাশের জন্য মোট ৩০ জন স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বজনদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাই বোন এসেছেন। কিন্তু ডিএনএ টেস্টের ক্ষেত্রে বাবা-মা’র স্যাম্পল বেশি কার্যকরী। তাই এরপরে যারা আসবেন তাদের বাবা-মাকে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএনএ টেস্টের ফলাফল সম্পূণরূপে নির্ভর করে ডিএনএ স্যাম্পলের ওপর।

 অনেক সময় ১ থেকে ৩ মাস লেগে যায়। তবে, এক্ষেত্রে কত সময় লাগবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ মরদেহগুলো পুড়ে গেছে। এছাড়া ভাই- বোনদের স্যাম্পল বেশি কার্যকর না হলে সিআইডির ল্যাবে গিয়ে নিহতদের বাবা মাকে স্যাম্পল দিয়ে আসতে হবে। অশনাক্ত ২১ লাশ বিভিন্ন হাসপাতালের ফ্রিজে নিহত ৬৭ জনের মধ্যে শনাক্ত হওয়া ৪৬ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া শনাক্ত না হওয়া অন্য লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যালের মর্গের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় বিভিন্ন মেডিক্যালের ফ্রিজে রাখা হয়েছে।

 ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ঢাকা মেডিকেল মর্গেল ফ্রিজ নষ্ট থাকায় শনাক্ত না হওয়া ২১টি লাশের মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫টি, সোহরাওয়ার্দীতে ৫টি, কুর্মিটোলায় ৩টি, হৃদরোগ হাসপাতালে ৫টি ও ঢামেকের জরুরি বিভাগের ফ্রিজে ৩টি লাশ পাঠানো হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে লাশগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মিটফোর্ড ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোর সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে লাশগুলো তারা বুঝে পেয়েছে।

 বার্ন ইউনিটের ৯ জনই ঝুঁকিতে অগ্নিকান্ডে দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ৯ জনই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জনের অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক। গতকাল বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বার্ন ইউনিটে থাকা সর্বশেষ ৯ জনের মধ্যে পাঁচজন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এই পাঁচজন সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছেন। বাকি চারজনও ঝুঁকিতে। তিনি বলেন, বাকী চারজনের প্রত্যেকের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। শ্বাসনালী পুড়ে গেলে রোগীরা ঝুঁকিতে থাকেন।

 আইসিইউতে থাকা পাঁচজন হলেন- আনোয়ার হোসেন, রেজাউল করিম, মো. সোহাগ, জাকির হোসেন ও মোজাফফর হোসেন। এছাড়া পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি থাকা চারজন হলেন- মাহমুদুল হক, মো. সেলিম, মো. হেলাল ও মো. সালাউদ্দিন।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ