সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্য অবলোপন

প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯ ১২:০০:৩১

সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্য অবলোপন

মৃত্যুর কারণে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে সাড়ে নয় লাখ টাকা খাদ্য আত্মসাৎকারী গুদাম কর্মকর্তাকে।আত্মসাৎ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্য অবলোপন (হিসাবের তালিকা থেকে বাদ দেয়া) করা হয়েছে। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ৭ লাখ টন, গম ১ লাখ ৩৬ হাজার টন এবং চিনি ২৪ টন। সরকারি গুদাম থেকে আত্মসাৎ, পরিবহনের সময় চুরি-প্রতারণা ও বন্যার পানিতে নষ্টের কারণে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।

সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন আইনি প্রক্রিয়া পরিচালনা ও অভিযুক্ত ব্যক্তির মৃত্যুসহ নানা কারণে ঘাটতি খাদ্য বা খাদ্যের মূল্য বাবদ ক্ষতিপূরণ আদায় সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারের খাদ্য অবলোপন কমিটির বৈঠকে এর দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। খাদ্য অবলোপন কমিটির সভাপতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট ও হিসাব) সালমা মমতাজ শনিবার বলেন, বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছেন খাদ্য সচিব। তবে দুটি ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির মূল্য ৫ লাখ টাকার ওপরে। যে কারণে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

সেখান থেকে অনুমোদন দেয়া হলে তা অবলোপন করা হবে। এছাড়া বাকিগুলো বন্যায় নষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে অবলোপন করেছে কমিটি।জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর সরকারের খাদ্য অবলোপন কমিটির বৈঠক ডিসেম্বরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু কমিটি খাদ্যের ক্ষয়ক্ষতি সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অবলোপনের অনুমোদন দিতে পারে। ক্ষতির মূল্য ৫ লাখ টাকার বেশি হলে এটি অনুমোদনের জন্য অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়।অবলোপন কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা প্রস্তাব সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিচিত্র কুমার কৈবর্তার বিরুদ্ধে ১৯৮৯-৯১ সাল পর্যন্ত খাদ্য আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।

ওই সময় এ কর্মকর্তা ৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা চাল গুদাম থেকে আত্মসাৎ করেন। এ সময়ে বিচিত্র কুমার কৈবর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়।এ মামলার কারণে তার পেনশন আটকে দেয় সরকার। মামলা চলাকালীন এই কর্মকর্তা মারা যান। এরপর ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তার মৃত্যুর কারণে এ ঘটনা থেকে তাকে দায়মুক্তি দিয়েছে। বর্তমান বিচিত্র কুমার কৈবর্তার স্ত্রীও মৃত্যুশয্যায় এবং চিকিৎসাধীন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অবলোপন কমিটিও এ দায় থেকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে এ ঘটনার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মূল্য ৫ লাখ টাকার ওপরে থাকায় এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেখান থেকে অনুমোদন হলেই কেবল সে দায়মুক্তি পাবে।অপর ঘটনায় ভোলা সদরের খাদ্যগুদামে ২ হাজার টন চিনি পরিবহনকালে ঘাটতি দেখা দেয় ২৪ টন। পরিবহনকালে নৌকাডুবি দেখিয়ে এসব চিনি আত্মসাৎ করেন বিবিসিসি খুলনার মেসার্স মজিবুর রহমান মিয়া। ১৯৮০ সালে এ ব্যাপারে নিরীক্ষা বিভাগ আপত্তি তুলে। ওই সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায় করা হয়। এরপরও অনেক টাকা বকেয়া থাকে।বৈঠকে উপস্থাপনকৃত তথ্য থেকে জানা গেছে, এ ঘটনাটি স্বাধীনতার আগে।

যে কারণে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এ ঘটনার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সম্প্রতি হিসাবের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এদিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি সরকারি গুদামের ২ হাজার টন ঘাটতি গম অবলোপন করা হয় ওই বৈঠকে। ১৯৮৫ সালে ওই গুদামে ৯৮ হাজার টন গম মজুদ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন মজুদ থাকায় এর মধ্যে কীটপতঙ্গের জন্ম হয়। দ্রুত এসব গম বিলির পর অবশিষ্ট সাড়ে ২৩ হাজার টন গম যাচাই বাছাইকালে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ২ হাজার টন ঘাটতি পায়।

এ সময় ঘাটতি মূল্য ছিল ৯ হাজার ৯৮০ টাকা। বৈঠকে এ খাদ্য ঘাটতি অবলোপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এদিকে নৌবাহিনীর জাহাজে ভোলায় ৯৭ হাজার ৫২২ টন সিদ্ধ চাল পরিবহনকালে ঘাটতি দেখা দেয় ৩ হাজার ৩৭৪ টন। অবলোপন কমিটির বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের হালিশহরের সিএসডি থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ দুনদাসের মাধ্যমে ৯৮২ বস্তা চাল পরিবহন করা হয়।

ভোলা জেলার হাজিরহাট খাদ্যগুদামে এসব চাল পরিবহনকালে এ ঘাটতি দেখা দেয়। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, নৌবাহিনীর কাছ থেকে এ ঘাটতি চাল আদায় সম্ভব হবে না। ফলে বৈঠকে এসব চাল অবলোপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এদিকে ১৯৮৮ সালের বন্যায় ১১টি গুদামে পানি প্রবেশ করলে বিপুল পরিমাণ চাল ভিজে যায়। বন্যা-পরবর্তী এসব ভিজা চাল শুকানোর পর ১৬ হাজার ৩২০ টন ঘাটতি সৃষ্টি হয়। বৈঠকে এসব ঘাটতির চাল অবলোপন করা হয়।

অবশ্য ঘাটতি খাদ্যের মূল্য সেসময়ের হিসাবে ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।অবলোপন কমিটির বৈঠকে সর্বশেষ উত্থাপিত ঘটনায় বলা হয়, ১৯৮৮ সালের বন্যার পানিতে ১ লাখ ৩৬ হাজার টন গম এবং ৬ লাখ ৮১ হাজার ৯০৫ টন চাল নষ্ট হয়। সেসময়ের হিসাবে চালের মূল্য ৫৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং গমের মূল্য ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তবে ঘটনা দুটির আর্থিক মূল্য ৫ লাখ টাকার ওপরে হওয়ায় এই প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ