মূল সমস্যার দিকে নজর নেই সরকারের

লেখা ‘সিটিং সার্ভিস’ বাস্তবে ‘লোকাল’

প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯ ০২:৪৯:১৭ || পরিবর্তিত: ২৫ জানুয়ারী, ২০১৯ ০২:৪৯:১৭

লেখা ‘সিটিং সার্ভিস’ বাস্তবে ‘লোকাল’

রাজধানীতে চলমান ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের ১৩ ধরনের কার্যক্রমের দুটি হলো যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধ করা এবং চলন্ত অবস্থায় বাসের দরজা বন্ধ রাখা। কিন্তু নানা পদক্ষেপের পরেও তা বন্ধ হচ্ছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘সিটিং সার্ভিসের’ নামে বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাসে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী তোলা। এসব বাসও নির্ধারিত স্থানের (স্টপেজ) বাইরে যত্রতত্র যাত্রী তুলছে। ফলে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না যাত্রীরা।

অথচ, এই ‘সিটিং সার্ভিস’ নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধে সরকার গঠিত কমিটি এক বছরের বেশি সময় আগে ২৬টি সুপারিশ জমা দিয়েছিল। এসব সুপারিশের মধ্যে ছিল শর্ত সাপেক্ষে সিটিং সার্ভিস রাখা, বাসে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি ও যত্রতত্র বাস থামানোর মতো পদক্ষেপ। কিন্তু এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেই। উপরন্তু গত ১৩ মাসে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দুই মাসের বেশি সময় নানা কর্মসূচি পালন করেছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।

সড়ক বিশেষজ্ঞ ও নগরবাসীর মতে, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে মূল সমস্যার দিকের সরকারের তেমন মনোযোগ নেই, মামলা ও জরিমানার দিকেই বেশি আগ্রহ। এতে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলার অন্যতম হলো গণপরিবহনে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া। বাড়তি ভাড়া নিয়েও আছে নৈরাজ্য। ঢাকা মহানগরে বিআরটিএ-নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া বাসের জন্য ৭ টাকা আর মিনিবাসের জন্য ৫ টাকা। মহানগর পরিবহন নীতিমালায় লোকাল বা সিটিং ভেদে ভাড়ার কোনো হেরফের নেই। মোটরযান আইনেও সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। অথচ, সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোতে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ২৬ টাকা পর্যন্ত নিতে দেখা যায়। প্রতিটি বাসে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানোর নিয়ম আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিভিন্ন পথে চলাচলকারী অন্তত ২০টি পরিবহনের বাসে উঠে দেখা যায়, নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো নেই।

রাজধানীতে ১৫ জানুয়ারি থেকে চলছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ, চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধে প্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না। বাসচালকদের পাশাপাশি যাত্রীদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর ৯৬ শতাংশ বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলাচল করে। সংগঠনটি ঢাকার ২১টি পথের ১ হাজার ৫৩টি বাসের ওপর এই জরিপ চালায়। জানতে চাইলে সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, আইন প্রয়োগের দায়িত্বে যারা আছে, তারা ঠিকমতো তা করছে এমন প্রতিফলন সড়কে দেখা যাচ্ছে না। পরিবহনমালিকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। গত এক বছরে এই সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য আরও খারাপ হয়েছে।

রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধে ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পরিবহন মালিক সমিতি ও পুলিশ অভিযান শুরু করে। এ সময় পরিবহনমালিকেরা বাস বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। এরপর সিটিং সার্ভিস পুনরায় চালু করে এই বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বিআরটিএ, মালিক-শ্রমিক সংগঠন, নাগরিক প্রতিনিধি ও পুলিশের সমন্বয়ে আট সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ২৬ দফা সুপারিশ–সংবলিত প্রতিবেদন ২০১৭ সালের নভেম্বরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

এই সুপারিশগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আটকে আছে ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটিতে (মেট্রো আরটিসি)। ঢাকায় বাস চলাচলের অনুমতি দেয় এই মেট্রো আরটিসি। জানতে চাইলে আরটিসির সদস্য বিআরটিএর উপপরিচালক মাসুদ আলম বলেন, আরটিসিতে সিটিং সার্ভিসের বিষয়ে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। আগামী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

কমিটি সুপারিশ করেছিল, রাজধানীতে চলাচলকারী কিছু বাস সিটিং আর কিছু হবে লোকাল। দুই শ্রেণির বাসের রং হতে হবে আলাদা। সিটিং সার্ভিসে দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, স্টপেজ থাকবে কম। আর লোকাল বাসকে কোনো অবস্থাতেই সিটিং সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিল কমিটি। ভাড়া-নৈরাজ্য, যাত্রী হয়রানি ও একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধে বেসরকারি মালিকদের অনুমতি বন্ধ রেখে বিআরটিসির দ্বিতল বাস বেশি করে চালুর পরামর্শ দিয়েছিল।

প্রজন্মনিউজ২৪/মোস্তাফিজুর রহমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ