ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে না ,সংসদেও যাবে না বিএনপি

প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৩:১৩:০৭

ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে না ,সংসদেও যাবে না বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চান না তার দল বিএনপির সাংসদরা শপথ নিক, বা সংসদের যাক। একই সঙ্গে তিনি চান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি থাকুককারাগারে আটক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংসদে যাচ্ছে না বিএনপি। পাশাপাশি একযোগে ৩০০ সংসদীয় আসনে নিবার্চনে অনিয়মের অভিযোগে নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলার করার সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসছে তারা।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৮টি আসনে জয় পায়। এরপর ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে নিবার্চন প্রত্যাখ্যান করে তারা। পাশাপাশি নিবার্চন কমিশনে পুননির্বার্চনের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেয়।

এ ছাড়া নিবার্চনের তিনদিন পর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ঢাকায় বিএনপির গুলশান অফিসে ডেকে নিবার্চন নিয়ে তাদের বিস্তারিত অভিজ্ঞতা শোনা হয়। সেখানেই ৩০০ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রাথীর্রা নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। পরে জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠান, নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা দায়ের ও নিবার্চনী সহিংসতাকবলিত এলাকাসমূহ ফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সফরসহ তিন কমর্সূচি ঘোষণা করে তারা। এই তিন কমর্সূচির মধ্যে জাতীয় সংলাপের প্রস্তুতি চলছে।

আর নিবার্চনী সহিংসতাকবলিত এলাকাসমূহ ফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সফরও চলছে। তবে নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলা সিদ্ধান্ত থেকে তারা সরে এসেছে। এদিকে মাত্র ৮টি আসন নিয়ে সংসদে যাওয়ার পক্ষে ঐক্যফ্রন্টে ক্ষুদ্র একটি অংশের মত থাকলেও শেষ পযর্ন্ত তা হচ্ছে না। কারণ কারাগারে আটক বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চাচ্ছেন না তার দল বিএনপি সংসদে যাক। খালেদা জিয়া তার দলের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের যে আটজন সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, তারা যেন শপথ না নেন। পাশাপাশি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে তার দল বিএনপি থাকুক, এটাই চান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

গত সোমবার নাইকো দুনীতি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি তার আইনজীবী ও দলীয় নেতা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা এবং মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগে মামলার শুনানির সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গেও কথা বলেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন এমন দু’জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শতের্ বলেন, খালেদা জিয়া চান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত ব্যক্তিরা শপথ না নিক, ঐক্যফ্রন্ট অটুট থাকুক। এ ছাড়া সরকারের বিরুদ্ধে থাকা দলগুলোকে নিয়ে সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি। ওই দুই নেতা বলেন, মামলাসংক্রান্ত আলোচনার মধ্যেই খালেদা জিয়া রাজনীতি নিয়ে তার মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। অবশ্য ১৩ জানুয়ারি খালেদা জিয়া নাইকো মামলার শুনানির সময় আদালতকে বলেছিলেন, ‘বিরোধী দল শুধু পার্লামেন্টের ভেতরে থাকলেই হয় না, বাইরে থাকলেও হয়।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই বক্তব্যে সাংসদ হিসেবে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত ৮ সদস্যের শপথ নেয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলেও ওই নেতারা মনে করছেন। বিএনপি সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার নিদের্শনা অনুযায়ী সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবে বিএনপি। অন্যদিকে আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার শঙ্কা এবং আইনিভাবে ৩০ ডিসেম্বরের নিবার্চনকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনায় এনে নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলার করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিবার্চনের পরে সবকটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা।

সব প্রার্থিই মামলার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন। এ জন্য প্রস্তুতি নেয়ার কথাও বলা হয় প্রার্থীদের। মামলা করার জন্য সব প্রাথীর্র কাছে অনিয়মের সব ধরনের দালিলিক প্রমাণ চাওয়া হয়। এরমধ্যে অনেক প্রাথীর্ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জমা দিয়েছেন। নিবার্চনের অনিয়ম, কারচুপি, এজেন্ট ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, নিবার্চনী সহিংসতায় আহত ও নিহতদের তালিকা, প্রতিটি কেন্দ্রের অস্বাভাবিক ভোটের হিসাবসহ ৮টি বিষয়ে তথ্য-প্রমাণসহকারে প্রতিবেদন দেন প্রাথীর্রা। এ ছাড়া নিবার্চন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ফল প্রকাশ পযর্ন্ত কি ধরনের প্রতিবন্ধতার মধ্যে পড়তে হয়েছে এ সব বিষয়ের ভিডিও ফুটেজও দেন অনেক প্রাথীর্।

অনিয়মের পযার্প্ত দালিলিক প্রমাণ পাওয়ার পরে মামলা করার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নিবার্চন বিষয়ে আইনজীবীসহ অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অনেকেই বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে মামলা করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন। সঙ্গত কারণে মামলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন তারা। নিবার্চনে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বপালন করা দলের সিনিয়র এক নেতা বলেন, মামলা করার প্রায় সব ধরনের দালিলিক প্রমাণ তারা হাতে পেয়েছেন। প্রার্থীদের নিজস্ব প্রমাণ ছাড়াও দেশি ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও নিবার্চনের অনিয়মের অনেক প্রমাণ তাদের কাছে আছে। এই অবস্থায় ট্রাইব্যুনালে মামলা করাই সমীচীন ছিল।

কিন্তু চেয়ারপারসনের ক্যান্টমেন্টের বাড়ি নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আদালতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে ঘায়েল করেছে। এ জন্য আদালতের ওপর বিএনপি আর আস্থা রাখতে পারছে না। নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার বিষয়ে আইনজীবী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না বরং আইনিভাবে ৩০ ডিসেম্বরের প্রশ্নবিদ্ধ নিবার্চনকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। তাদের পরামর্শ এবং নানা বিবেচনায় ট্রাব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

এই নেতা আরো বলেন, ‘যে দেশে প্রধান বিচারপতি বিচার পাই না, অন্যায়ভাবে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে জামিনে পযর্ন্ত মুক্তি দেয়া হয় না সেখানে বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আর আস্থা রাখা যায় না।’ পযার্প্ত তথ্য-প্রমাণের অভাবে মামলার কমর্সূচি থেকে সরে এসেছেন কিনা জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, শুধু ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না, এই অশঙ্কা থেকে মামলা করা হবে না। মামলা না করলেও অনিয়মের তথ্য জাতিকে জানানো হবে। নিবার্চনে অনিয়মের দালিলিক তথ্য-প্রমাণসহ একটি বই প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া ভিডিও ফুটেজের একটি সিডি প্রস্তুত করে জাতিকে দেখানো হবে। এ ছাড়া মামলা কেন করা হলো না ভবিষ্যতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পযার্য় থেকে কথা উঠতে পারে বিবেচনায় কুমিল্লা-৩, বি-বাড়িয়া-৩, চাঁদপুর-৩, ঢাকা-৪, ঢাকা-১১, সিরাজগঞ্জ-৫সহ দেশের অধর্শতাধিক আসনে যেগুলোতে ব্যাপক কারচুপি ও প্রাথীর্র ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে, সে সব আসনে ট্রাইব্যুনালে প্রতীকী কিছু মামলা করা হতে পারে। ট্রাইব্যুনালে মামলা করার কমর্সূচির বিষয়ে জানতে চাইলের বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যায়যায়দিনকে বলেন, কমর্সূচি দেয়া হয়েছে ঠিক।

এ ব্যাপারে বিচার-বিশ্লেষণ চলছে। এর ভবিষ্যৎ কি হতে পারে তাও ভাবা হচ্ছে। অনেক ধরনের মত এসেছে। সব বিষয়ে আলোচনা করে দলীয় ফোরাম মামলা করা না করার বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। প্রসঙ্গত, নিবার্চনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে হাইকোটের্র নিবার্চনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে হয়।

প্রজন্মনিউজ২৪/মো্স্তাফিজুর রহমান

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ