ধূসর জীবনের গল্প

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৪:৪৬:০১

ধূসর জীবনের গল্প

ফুল হয়ে সুরভি ছড়ানোর আগেই অকালে ঝরে যাচ্ছেন অনেক নারী। এ দেশের অজস্র নারী এখানো বিভিন্নভাবে পারিবারিক, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে নির্যাতিত হচ্ছেন। যা কখনোই কাম্য নয়।

রাজধানীর রায়ের বাজারের মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ীর স্ত্রী মহুয়া সেন (ছদ্মনাম) বলেন, ‘দীর্ধ পাঁচ বছরের প্রেমে বসেছিলাম বিয়ের পিঁড়িতে। অথচ বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই দুচোখ ভরা স্বপ্নগুলো ভেঙে গেল বালির বাঁধের মতো। যৌতুকের জন্য স্বামীর কাছে থেকে পেতাম অশ্রাব্য ভাষার গালি আর শারীরিক নির্যাতন। এতে তার মা, ভাইবোনদেরও সমর্থন ছিল। অথচ প্রেম করে, পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিলাম। আমার পঙ্গু বাবার সংসারে আমিই বড় সন্তান।

আমার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আমার মা তার শাশুড়ির দেওয়া একমাত্র সীতাহারটি (গলার মালা) গোপনে বিক্রি করে দিয়েছেন। সীতাহারের পুরো টাকাটা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছি। তবু লোভের শেষ নেই, আরও চায়। আমার স্বামীর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বাসায় কাজের বুয়া রাখতে দেয় না, দোতলা বাড়ির পুরো কাজ আমাকেই করতে হয়।

রাতে খাই দুপুরের খাবার আর গভীর রাতে খাই স্বামীর মার। লজ্জায়-দুঃখে মুখ গুঁজি বালিশে। আমার কান্না দেখে তিন বছরের কন্যাসন্তানটিও কাঁদতে থাকে। এমন অত্যাচারী মানুষের কাছে আমার একদিনও ইচ্ছা করে না, শুধু আমার সন্তানের জন্যই থাকি। আমি অষ্টম শ্রেণি পাস। চাকরিও তো পাব না, পঙ্গু বাবার সংসারে আমি আর বোঝা হতে চাই না। আমি চাই, আমার মেয়েটা লেখাপড়া শিখে শক্ত-সমর্থ হোক, এ সমাজ তাঁকে সম্মান করুক। কোনো নারীকে যেন আমার মতো নির্যাতন সহ্য করতে না হয়।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে নির্যাতিতা মহুয়া সেনের দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল শ্রাবণধারা। দুচোখের রক্তিম বর্ণ কপালের সিঁদুরকেও হার মানিয়েছিল।

আজকের নারী আগামী দিনের মা, একটা পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। জাতির স্বার্থেই নারী নির্যাতন রোধ করতে হবে। আমরা চাই নারী নির্যাতনমুক্ত বাংলাদেশ এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকার। সমাজের সঠিক বিকাশ।’

বিশেষজ্ঞের মতামতের ভিত্তিতে নির্যাতন প্রতিরোধে আমার করণীয় :

১. সরকারি ও বেসরকারি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর হতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন ও তার প্রতিকার বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করতে হবে।

২. নারী নির্যাতন বিষয়ে গবেষণা বাড়িয়ে জনমত তৈরি করতে হবে। নারীর জীবনের নানা তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করে সমাজে নারীবান্ধব নীতি বাড়াতে হবে।

৩. গণযোগাযোগ মাধ্যম যেমন- টিভি, রেডিও, সংবাদপত্রগুলোকে প্রচুর পরিমাণে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

৪. অশিক্ষিত ও দরিদ্র নারীরাই নির্যাতনের শিকার হন বেশি। তারা যেন বিনামূল্যে নির্যাতনের প্রতিকার ও আইনের সুবিধা পায় তার জন্য সরকারকে আরও কর্মতৎপর হওয়া প্রয়োজন।

৫. জাত, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে প্রতিটি নারীকে শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়া একান্ত জরুরি। প্রতিটি মানুষের উচিত নারীকে সর্বপ্রথমে মানুষ হিসেবে গণ্য করা এবং পুরুষের সমপর্যায়ে সুযোগ দেওয়া।

৬. আজকাল পাঁচ বছরের শিশুও নির্যাতিত হচ্ছে। ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মধ্যে প্রতিরোধমূলক মনোভাব গড়ার জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ বইয়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক পাঠ্যসূচি থাকা অপরিহার্য।

৭. স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে নিয়মিত গোলটেবিল বৈঠক হওয়া প্রয়োজন, এতে দ্রুত গণসচেতনতা বাড়বে।

এদেশ থেকে নির্মূল হোক নারী নির্যাতন, আমরা কোনো নারীর ধূসর জীবন চাই না। প্রতিটি নারীর সাফল্য হোক আগামী সূর্যোদয়ের মতো উজ্জ্বল। নারী পুরুষের সম্মিলিত সফলতায় গড়ে উঠুক সোনার বাংলাদেশ।

লেখক : চিকিৎসক।

প্রজন্মনিউজ২৪.কম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ