মেঘনায় ট্রলারডুবি নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি দু’দিনেও

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী, ২০১৯ ১২:১৮:১৫

মেঘনায় ট্রলারডুবি নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি দু’দিনেও

মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে মাটিবোঝাই ট্রলারডুবির দুইদিন পরও নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় উদ্ধারকাজ স্থগিত করা হয়, যা আবার শ্রুবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরে শুরু হবে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া ও চাঁদপুর সীমান্তবর্তী কালিপুরায় একটি ট্যাংকারের ধাক্কায় ৩৪ জন শ্রমিক নিয়ে মাটিবোঝাই ট্রলারটি ডুবে যায়।

 এর মধ্যে ১৪ জন সাঁতরে তীরে উঠে। বাকি ২০ জন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। নৌ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকদের লাশ পাওয়ার আশায় মেঘনার তীরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মেঘনা নদীর চরঝাপটা থেকে সদরের কালীপুরা পর্যন্ত সীমানায় বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।

 বৃহস্পতিবার সকালে নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মুহম্মদ মারুফ হাসান ও বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান কমোডোর মোজাম্মেল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযান তদারকি করেন। পুলিশ জানায়, ট্রলারটি মাটি নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় যাচ্ছিল। পথে একটি ট্যাংকারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ৩৪ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। এতে নিখোঁজ ২০ জনের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে।

 নৌ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, নৌ দুর্ঘটনাটি রাতে হওয়ায় সঠিক স্থানটি শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে। সকল প্রকার টেকনিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। সাঁতরে কোন শ্রমিক পাড়ে উঠছে কি না সেটাও খেয়াল রাখা হচ্ছে। ডুবে যাওয়া ট্রলার এবং প্রায় ২০ জন নিখোঁজ ব্যক্তির উদ্ধারে বিআইডব্লিউটি এর সোনার (ঝঙঘঅজ) প্রযুক্তির স্ক্যানারের সাহায্য নেয়া হচ্ছে। ট্রলারের নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের মধ্যে ১৮ জনের পরিচয় জানা গেছে।

 এরা হচ্ছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুণ্ডুমালা গ্রামের গোলাই প্রমাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন, আবদুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নুর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে মো. নাজমুল, লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম,

 দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চণ্ডিপুর গ্রামের আমির খান ও আবদুল লতিফের ছেলে হাছান আলী এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী।

 ট্রলারে থাকা আরেক শ্রমিক মামুন আলী বলেন, আমরা ১৪ জন শ্রমিক বেঁচে গেলেও কেবিনের ভেতরে থাকা ২০ জনের কেউই বেরুতে পারেনি। কনকনে শীতে আন্ধার রাতের সেই বেঁচে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মামুন আলী আরও বলেন, তেলের ট্যাংকারটি তাদের ট্রলারের ওপরে উঠিয়ে দেয়। এরপরেই ট্রলারের বাইরে থাকা শ্রমিকরা ছিটকে নদীতে পড়ে যান। ডুবে যায় বড় আকারের ট্রলারটি। কিন্তু তেলের ট্যাংকারটি তাদের উদ্ধারে কোন ধরনের সাহায্য করেনি।

 চরঝাপটা গ্রামের লোকজন জানান, ট্রলারডুবির স্থলটি মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী। তাই মঙ্গলবার সকালের এ ঘটনার খবর না জানায় প্রশাসন ঘটনার পরই উদ্ধারকাজ শুরু করতে পারেনি। বুধবার সকাল থেকে নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা নদীর তীরে ভিড় জমাতে শুরু করলে তারা উদ্ধারকাজে নামে। মুন্সীগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান জানান, উদ্ধার তৎপরতা চলছে। এখন পর্যন্ত ট্রলারটি শনাক্ত করা যায়নি।

 নিখোঁজ শ্রমিকদের কারও খোঁজ মেলেনি। মেঘনার আশপাশের সব নৌ পুলিশ ও ফাঁড়িগুলোকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। নদীতে কোন লাশ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ