সরকার আর বিরোধীদল বলে কোন শব্দ নেই: দুদক

প্রকাশিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৫:৫৪:৫৬ || পরিবর্তিত: ১৫ জানুয়ারী, ২০১৯ ০৫:৫৪:৫৬

সরকার আর বিরোধীদল বলে কোন শব্দ নেই: দুদক

নতুন বছরের শুরুতেই দেশবাসী পেয়েছে নতুন সরকার। দায়িত্বের প্রথম দিনেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন সরকারের মন্ত্রীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও দুর্নীতি নির্মূলের অঙ্গীকার ছিল। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি মাথায় নিয়েই মাঠে নামবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

শুধু বিরোধী দল নয়, বরং সরকারি দলের এমপিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে দুদক। এ ছাড়া আমলা, ব্যাংকার ও সরকারি বিভিন্ন সেবা খাতসহ সব জায়গায় দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নতুন করে সক্রিয় হবে সংস্থাটি। এ ছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তো রয়েছেই।

দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদকের জিরো টলারেন্স প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ঘোষণা করেছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) নীতি অবলম্বন করবে। তিনি বলেছেন, দুদকে সরকার আর বিরোধী দল বলে কোনো শব্দ নেই। দুদকের কাছে সবাই সমান। যার বিরুদ্ধেই অভিযোগ আসবে, অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুদক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দল থেকে সাংসদ প্রার্থী হওয়াদের হলফনামা আমলে নিয়ে এরই মধ্যে পর্যালোচনা শুরু করেছে দুদক। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের জমা দেয়া হলফনামায় মন্ত্রী-সাংসদ ও আলোচিত নেতাদের পেশা, সম্পদের পরিমাণ ও আয়-ব্যয়ের তথ্যে অনেকেই চমকিত হয়েছেন। প্রার্থীদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ ১০ বছর আগের তুলনায় কয়েকশ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। প্রায় একই হারে বেড়েছে তাদের ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদও।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, হলফনামা অনুযায়ী যারা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন, তাদের সম্পদ অনুসন্ধানে শিগগিরই মাঠে নামবে দুদক। এ জন্য শিগগিরই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে হলফনামার তথ্য ও এনবিআর থেকে আয়কর নথি সংগ্রহ করবে।

দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াদের হলফনামা ও আয়কর নথির সম্পদ মিলিয়ে দেখা হবে। হলফনামার সম্পদের হিসাব যাচাই করে যাদের নামে-বেনামে অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়া যাবে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে। তাদের আয়ের বৈধ উৎস খতিয়ে দেখা হবে। যাদের হিসাবে গরমিল ও অসামঞ্জস্য পাওয়া যাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হবে এবং অনুসন্ধানে যাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচনের আগে দুদক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, প্রার্থীদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা খতিয়ে দেখা হবে। হলফনামায় সম্পদের মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সেখানে আলোচনায় দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন তিনি।

এরপরই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামা সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে গত মঙ্গলবার দুদক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে কালো টাকা ও অনিয়ম চিহ্নিত হবে তাদের সম্পদের তথ্যানুসন্ধান করা হবে। একই সঙ্গে হলফনামা যাচাই-বাছাই করে সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী-সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমনে সরকারের যে নির্বাচনী অঙ্গীকার রয়েছে, তাতে দুদক আত্মবিশ্বাসী হয়ে নতুনভাবে আরো দৃঢ়তার সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করবে। এ ছাড়া সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সাংসদ মেহজাবিন মোর্শেদ ও তার স্বামী চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। ময়মনসিংহের এক সাংসদের বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকার জিআর চাল আত্মসাতের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জের এক সাংসদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ, শরীয়তপুরের এক সাংসদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ এবং সরকারের আমদানি করা সার পরিবহনে অনিয়ম, গুদামে সার সরবরাহ না করে বাইরে পাচার ও বিক্রির অভিযোগে নরসিংদীর এক সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে।

এ ছাড়া ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ফারমার্স ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতিসহ (বাবুল চিশতি) ১৭ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে দুদক। এর আগেও একইভাবে এবি ব্যাংকের ১২ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

বিশেষ টিম গঠন করে এসব অভিযোগের অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। বিশেষ টিমগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন দুদকের আট পরিচালক। প্রতিটি টিমে একজন করে উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক সদস্য রয়েছেন। দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) আসাদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে এসব টিম কাজ করছে। ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন, সংস্থাপন ও অর্থ) মুনির চৌধুরীও টিমগুলোর তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/রাশেদ মোবারাক

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ