আন্তঃমহাদেশীয় চোরাচালান চক্রের ২৪ সদস্য চিহ্নিত

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী, ২০১৯ ১২:০২:৩৮ || পরিবর্তিত: ১২ জানুয়ারী, ২০১৯ ১২:০২:৩৮

আন্তঃমহাদেশীয় চোরাচালান চক্রের ২৪ সদস্য চিহ্নিত

আন্তঃদেশীয় চোরাচালান চক্রের অন্তত ২৪ জনকে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।তাদের মধ্যে চারজনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে আনা হয়েছে।যে কোনো সময় তাদের আটক করা হতে পারে।কয়েকদিন আগে চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ডিএইচএলের একজন সাবেক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।তার নাম রবিন বলে জানা গেছে।

এদিকে শ্রীলংকার কলম্বোয় ২৩০ কেজি হেরোইন ও পাঁচ কেজি কোকেনসহ দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতারের ঘটনায় রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় মাদক পাচারচক্রের তৎপরতা রোধের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।৩১ ডিসেম্বর কলম্বোর মাউন্ট লাভিয়ানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বগুড়ার জামাল উদ্দিন ও জয়পুরহাটের দেওয়ান রফিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে শ্রীলংকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ঘটনার পর ঢাকার কাছে সহায়তা চেয়েছে দেশটি।অপরদিকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনায় ঢাকায় গ্রেফতার চয়েজ রহমানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের রুট নিয়ন্ত্রণের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।তার সঙ্গে বিভিন্ন দেশের মাফিয়া চক্রের জড়িত থাকার তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।জানা গেছে, মাদক কারবারিদের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় অপরাধী চক্রের যোগসূত্র রয়েছে।

যেমন- পাশের দেশ ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার ছাড়াও দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের দেশেও মাদক চোরাচালানের তথ্য আছে গোয়েন্দাদের কাছে।সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা চারজনের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করে।যাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস এবং ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেছে।চক্রের সদস্যদের গতিবিধির তথ্য পর্যালোচনা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, পাকিস্তানের লাহোর হয়ে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে সিলেট পর্যন্ত তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুরে আকমল হোসেন ও মিরপুরে রিয়াজ উদ্দিন নামে দুই চোরাকারবারি থাকে।তারা নতুন কৌশলে বাংলাদেশে হেরোইনের চালান আনছে।যেহেতু পাকিস্তান থেকে ঢাকায় আসা যাত্রীদের নিরাপত্তা তল্লাশির ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ রয়েছে, সেজন্য তারা থাইল্যান্ড, দুবাই অথবা মালয়েশিয়া হয়ে ঢাকায় হোরোইনের চালান এনে থাকে।

তাদের কাছে ঢাকা হচ্ছে অন্য দেশের জন্য নিরাপদ রুট।গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকার নিউমার্কেট ও মিরপুরে আকমল ও রিয়াজ পাকিস্তানি কাপড়, শেরওয়ানি, লেহেঙ্গা ও বুটিকের ব্যবসা করে।আর এর আড়ালে তারা হেরোইনের অসংখ্য চালান ঢাকায় এনেছে।বড় দাগে নাম এসেছে লন্ডন বার্মিংহামের বাসিন্দা ও ইন্টারপোলের তালিকায় নাম আসা চোরাচালানি সুমন ও তার আত্মীয় শামছুল আরেফিন তুহিনের।

সুমনের সঙ্গে অ্যারামেক্স নামে আন্তর্জাতিক একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সাদেকুল আলম, সোহাগ রহমান ও শ্রীবাস পোদ্দারের যোগসাজশ রয়েছে।পুলিশ তাদের আগেও গ্রেফতার করেছিল।কিন্তু সুযোগসন্ধানী এ চক্রটি আবারও সক্রিয় হয়ে একই কারবার করছে।সাদেকুল একসময় আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ডিএইচএলে কাজ করত।সে লন্ডনে বহুবার হেরোইন পাঠিয়েছে।এছাড়া যাদের খোঁজা হচ্ছে তাদের মধ্যে আছে মাইকেল ও মিখাইল।এ দু’জন গুলশান এলাকায় থাকে।

পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি সিন্ডিকেটের কাছ থেকে হেরোইনের চালান কিনে চক্রটি অন্যদেশে বেশি দামে ওই চালান বিক্রি করে থাকে।সম্প্রতি একটি দূতাবাসের কাছ থেকে গোয়েন্দারা এ দু’জন সম্পর্কে তথ্য পেয়েছেন।তবে তাদের সম্ভাব্য স্থানে পাওয়া যাচ্ছে না।ধারণা করা হচ্ছে, ছদ্মবেশে আছে তারা।এছাড়া পুলিশের নজরদারিতে আছে মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পের মোহাম্মদ আলী।

এই ব্যক্তি পাকিস্তানে ঘন ঘন যাতায়াত করে থাকে।একটি বিদেশি সংস্থার সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে।মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে সিলেটের বাদশা মিয়া, টেকনাফের সেলিম ও রফিকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায়।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার(ডিসি)মো. মশিউর রহমান বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস বা পার্সেলের মাধ্যমে হোরোইন চোরাচালান করে এমন চক্রকে শনাক্ত করার কাজ চলছে।

কয়েকজনের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।তাদের আইনের আওতায় আনাতে অভিযান চলছে।পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান থেকে আমীর আবিদ ও সিরাজ সাঈদ নামে দুই ব্যক্তি বাংলাদেশে হেরোইনের চালান পাঠিয়ে থাকে।ঢাকা ও সিলেটে তাদের চালান গ্রহণ করে জাকির, গোরাল, জামিল ও বাবুল।

তাদের সঙ্গে হাবিবুর রহমান নামে ডাক বিভাগের এক কর্মকর্তা জড়িত।এ চক্রের সঙ্গে লন্ডনি সুমনের মামা হোসেন আহমেদ মানিকও রয়েছে।হাবিবুর চোরাকারবারিদের বিদেশ যাওয়ার টিকিট করে দেয়।সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় চয়েজ রহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ কারণে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করা হতে পারে।

এ তালিকায় আছে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস অ্যারামেক্স, ডিএইচএল, টিএনটি, ইউপিএস ও ফ্যাডেস্কসহ ফেডারেল এক্সগ্রেস, ডিটিডিসি, দ্য প্রফেশনাল কুরিয়ার, অনডট কুরিয়ার, এএনএল পার্সেল, ব্লেসফ্লাস কুরিয়ার, আইসিএল কুরিয়ার, গ্লোবাল এক্সপ্রেস, ডিপিইএক্স, টিসিআইএক্সপিএস’র নাম।জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, মাদক চোরাচালানে জড়িত একটি সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।তারা ঢাকাকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ