অবৈধ পেশা ও পণ্য থেকে উপার্জন

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী, ২০১৯ ০১:২৭:০২

অবৈধ পেশা ও পণ্য থেকে উপার্জন

পৃথিবীতে দু’ধরনের উপার্জন পরিলক্ষিত হয়। একটি হলো বৈধ পন্থায় উপার্জন। আর অপরটি হলো অবৈধ পন্থায় উপার্জন। মানবজীবনে এ অবৈধ পন্থায় উপার্জনকে কুরআন ও হাদীসে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজদের হত্যা করো না।

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু।’’ রসূল স. বলেছেন ‘‘এক ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধুলিধুসরিত দেহ নিয়ে আকাশের দিকে হাত তুলে ‘‘ হে প্রভু! বলে মুনাজাত করে, অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারাই সে পুষ্টি অর্জন করে। তার মুনাজাত কীভাবে কবুল হবে?’’ সাদ রা, বলেন, আমি বললাম: হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন আমার দুআ কবুল হয়।

রসূল স. বললেন: হে সাদ! তোমার উপার্জনকে হালাল রাখ, তোমার দুআ কবুল হবে। মনে রেখ, কেউ যদি হারাম খাদ্যের একগ্রাসও মুখে নেয়, তাহলে চল্লিশ দিন যাবৎ তার দুআ কবুল হবে না।’’ অপর এক হাদীসে উল্লেখ আছে : ‘‘যে ব্যক্তি দশ দিরহাম দিয়ে কোন কাপড় কিনলো এবং তার মধ্যে এক দিরহাম অসৎ উপায়ে অর্জিত, সে যতদিন ঐ কাপড় পরিহিত থাকবে ততদিন তার নামায কবুল হবে না।’’

ইমাম ইবনুল ওয়ারদ বলেন, তুমি যদি জিহাদের ময়দানে যোদ্ধা অথবা প্রহরী হিসেবে নিয়োজিত থাক, তাতেও কোন লাভ হবে না, যতক্ষণ তুমি যা খাচ্ছ তা হালাল না হারাম, তা বিবেচনায় না রাখ।’’ এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আবু বকর রা.-এর একজন গোলাম ছিল। সে আবু বকরকে মুক্তিপণ হিসাবে কিছু অর্থ নেয়ার শর্তে মুক্তি চাইলে তিনি তাতে সম্মত হন। অতপর সে প্রতিদিন তার মুক্তিপনের কিছু অংশ নিয়ে আসতো।

আবু বকর রা. তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এটা উপার্জন করে এনেছ? সে যদি সন্তোষজনক জবাব দিত তবে তিনি তা গ্রহণ করতেন, নচেত করতেন না। একদিন সে রাতের বেলায় তাঁর জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। সেদিন তিনি রোযা ছিলেন। তাই তাকে ঐ খাদ্যের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেলেন এবং এক লোকমা খেয়ে নিলেন। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার তুমি কীভাবে সংগ্রহ করেছো?

সে বললো, আমি জাহেলিয়াত যুগে লোকের ভাগ্য গণনা করতাম। আমি ভালো গণনা করতে পারতাম না। কেবল ধোঁকা দিতাম। এ খাদ্য সেই ভাগ্য গণনার উপার্জিত অর্থ দ্বারা সংগৃহীত। আবু বকর রা. বললেন ঃ কী সর্বনাশ! তুমি তো আমাকে ধ্বংস করে ফেলার উপক্রম করেছো। তারপর গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমি করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বমিতে খাদ্য বের হবে না। উপস্থিত লোকেরা তাকে বললো, পানি না খেলে খাওয়া জিনিস বের হবে না।

তখন তিনি পানি চাইলেন। পানি খেয়ে খেয়ে সমস্ত ভুক্ত দ্রব্য পেট এক লোকমা খাওয়ার কারণেই কি এত সব? আবু বকর রা. বললেন: খাদ্য বের করার জন্য যদি আমাকে মৃত্যুবরণও করতে হতো, তবুও আমি বের করে ছাড়তাম। কেননা আমি রসূলুল্লাহ স. কে শুনেছি: ‘‘যে দেহ হারাম খাদ্য দ্বারা গড়ে ওঠে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই উত্তম।’’

সুদ : অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জনের বহুল প্রচলিত একটি প্রধান মাধ্যম হলো সুদের আদান প্রদান, যা আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় অর্থনীতির শিরা উপশিরায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। সুদ অর্থনীতির সবচেয়ে পুরাতন ও জটিল একটি বিষয়। মিসর, রোম, গ্রীস ও ভারতবর্ষ প্রভৃতি দেশে প্রাচীনকালে সুদ সম্পর্কে আইন রচনার প্রয়োজন হয়। বেদ, তাওরাত ও ইঞ্জিলে সুদকে একটি সমস্যা হিসেবে আলোচনা করা হয়েছে।

সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টেটলের মতো প্রাচীন গ্রীক দার্শনিক এবং হিন্দু ও ইয়াহুদী সংস্কারকগণ সুদী কারবারের নিন্দা করেছেন। আর এটি ইসলামের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া। সুদ অর্থনৈতিক শোষণ ও জুলুমের অন্যতম হাতিয়ার। এটি মানুষের মানসিকতাকে সংকীর্ণ করে দেয়, মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, অর্থনৈতিক গতিকে শ্লথ করে দেয়, অর্থবণ্টনে বৈষম্য সৃষ্টি করে। যদিও বিভিন্ন প্রাচ্যবিদ বিভিন্ন ধরণের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত সুদকে বৈধ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সুদের আরবী প্রতিশব্দ হলো ‘রিবা’। যার আভিধানিক অর্থ কয়েকটি হতে পারে। যেমন: বৃদ্ধি, বিকাশ, সংখ্যাধিক্য ও ক্ষমতা ভূপৃষ্ঠ থেকে উঁচুস্থান, শিশুর বেড়ে ওঠা ইত্যাদি। সুদ যে কোন অবস্থাতেই হোক না কেন ইসলামের অর্থনৈতিক দর্শনে হারাম। জাহিলী যুগে কাফির, ইয়াহুদী এবং মুশরিকরা সুদকে ব্যবসা মনে করতো, অথচ ব্যবসা ও সুদ এক জিনিস নয়, যা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ৭টি আয়াতের মাধ্যমে সুদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সুদের সাথে সংশ্লিষ্টদের মন্দ পরিণতি, হাশরের ময়দানে তাদের লাঞ্জনা, ভ্রষ্টতা ও কঠোর শাস্তির বাণী শুনিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘যারা সুদ খায়, তারা সে ব্যক্তির ন্যায় দ-ায়মান হবে, যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দিয়েছে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলে, নিশ্চয় ব্যবসা তো সুদেরই অনুরূপ, অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম। সুদ খাওয়া আল্লাহর সাথে যুদ্ধ করার নামান্তর। পবিত্র কুরআনে মোট ৭টি আয়াত, আর ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদ হারাম প্রমাণিত।

সম্পদ আত্মসাৎ ও ঘুষ : সম্পদ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণ করা বা কাউকে ঘুষ দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘ তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের অর্থ আত্মসাৎ করো না, শাসকদের কাছে অর্থ নিয়ে যেও না, যাতে তোমরা মানুষের অর্থের একাংশ অন্যায় পন্থায় ভোগ করতে পার, অথচ তোমরা জান।’’ অর্থাৎ তোমরা শাসকদের উৎকোচ দিয়ে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার ব্যবস্থা করো না অথচ তোমরা তো জান যে, এ রকম করা বৈধ নয়।

রসূল স. বলেছেন: আল্লাহ ঘুষদাতা ও ঘুষখোর উভয়কে অভিশম্পাত দিয়েছেন’’। রসূল স. আরো বলেছেন : ‘‘যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করলো, অতঃপর যার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, সে তাকে কোন হাদিয়া বা উপহার দিল, সে যদি এই হাদিয়া গ্রহণ করে, তবে তা হবে একটি বড় ধরণের সুদ খাওয়ার পর্যায়ভুক্ত’’। ইবনে মাসউদ রা, বলেন: ‘‘ তোমরা ভাই-এর প্রয়োজন পূরণ করে দিয়ে তার কাছ থেকে যদি উপহার গ্রহণ করো তবে তা হবে হারাম।’’

যে ব্যক্তি কোন কাজের জন্য বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসাবে নিযুক্ত হয়, সে যদি তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত কোন কাজ করে দিয়ে যার জন্য কাজ করেছে তার কাছ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করে, তবে সেটা সর্বসম্মতভাবে ঘুষ বিবেচিত হবে, তা উপহার, উপঢৌকন, হাদিয়া বা বখশিশ যে নামেই প্রদত্ত হোক না কেন। আর যদি দায়িত্বের অতিরিক্ত হয় এবং চাকরির সময়ের বাইরে করা হয় তবে সে জন্য পারিশ্রমিক নিলে তা ঘুষ হবে না।

জুয়া : জুয়াকে ইসলাম অবৈধ উপার্জন হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু ভাগ্যগণনা শয়তানের কাজ। সুতরাং এসব থেকে দূরে থাক। যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। যে কোন ধরণের জুয়াই এ আয়াতের ঘোষণার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা দাবা, তাস, পাশা, গুটি অথবা অন্য কোন জিনিসের দ্বারা খেলা হোক। এটা আসলে অবৈধ পন্থায় মানুষের সম্পদ আত্মসাত ও লুণ্ঠন করার আওতাভুক্ত। রসূল স. বলেছেন: ‘‘কেউ যদি এরূপ প্রস্তাব দেয় যে, এসো তোমার সাথে জুয়া খেলবো, তবে তার সদকা করা উচিত।’’

চাদাবাঁজি : চাদাবাঁজি করে সম্পদ উপার্জন করা ও এক ধরণের জুলুম এবং ইসলামী শরীয়তে এ জাতীয় উপার্জনকে কটোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বলা হয়েছে: “কেবল তাদের বিরুেেদ্ব ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়কআযাব রয়েছে।”

যারা জোর করে চাঁদা আদায় করে তারা নিজেরাও জুলুমবাজ এবং তারা জুলুমবাদের  সবচেয়ে বড় সাহায্যকারীও। চাঁদাবাজরা যে চাঁদা আদায় করে, তা যেমন তাদের প্রাপ্য নয়, তেমনি যে পথে তা ব্যয় করে তাও বৈধ নয়। জোরপূর্বক চাঁদা আদায়কারী আল্লাহর বান্দাদের ওপর জুলুম ও শোষণ চালায়। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ কেড়ে নেয়। এ ধরনের লোকেরা কিয়ামতের দিন মজলুমদের প্রাপ্য দিতে পারবে না।

যদি তাদের কবুলকৃত কোন সৎকর্ম থাকে, তবে তাই দিতে হবে। অন্যথায় মজলুমদের পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। রসূল স. বলেছেন, ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে প্রকৃত দরিদ্র হলো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন প্রচুর নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত নিয়ে আসবে। কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়ে আসবে, প্রহার করে আসবে অথবা কারো সম্পদ আত্মসাৎ করে আসবে। এরপর এই সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের একে একে তার পুণ্যকর্ম দিয়ে দেয়া হবে। যখন পুণ্যকর্ম ফুরিয়ে যাবে, তখন মজলুমদের পাপ কাজ তার ঘাড়ে চাপিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এ জন্য রসূল স. বলেছেন: ‘‘অবৈধ চাঁদা আদায়কারী জান্নাতে যাবে না।’’

ডাকাতি : ডাকাতি বড় ধরণের অপরাধ। ডাকাতি চুরির চেয়ে অধিকতর ভয়াবহ। পরকালীন শাস্তি ছাড়াও এ অপরাধের জন্য ইসলাম পার্থিব দন্ডবিধি দিয়েছে। মানব জীবনে অর্থ-সম্পদ থাকা অপরিহার্য। ইসলাম এ ধন-সম্পদ অর্জন ও ব্যয় ভোগের জন্য পূর্ণাঙ্গ বিধান পেশ করেছে। হলাল পথে উপার্জিত ধন-সম্পদকে হালাল ঘোষণা করেছে আর হারাম পথে অন্যায় ও জুলুমের মাধ্যমে আহরিত ধন-সম্পদকে হারাম করে দিয়েছে এবং পরকালে কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তিকে নিপতিত হওয়ার ভয় দেখিয়েছে।


ডাকাত শব্দের অর্থ দস্যু, লুণ্ঠনকারী, বলপূর্বক অপহরণকারী, অসম সাহসী ও নির্ভীক এবং ডাকাতি শব্দের অর্থ হল: দস্যুবৃত্তি, দস্যু দ্বারা লুণ্ঠন, অসম সাহসিক ও বিস্ময়কর দুষ্কর্ম ইত্যাদি। যেসব লোক সশস্ত্র হয়ে পথে-ঘাটে, ঘরে-বাড়িতে, নদীতে-মরুভূমিতে নিরন্ত্র মানুষের উপর হামলা চালায় এবং প্রকাশ্যভাবে জনগণের সম্মুখে জনগণের ধন-মাল হরণ করে নিয়ে যায়, তাদেরকেই বলা হয়েছে ডাকাত, লুণ্ঠনকারী বা মুহারিবুন।

যারা ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ ছিনিয়ে নেয় এবং ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের জীবন ও সম্ভ্রমহানী ঘটায় তাদের ক্ষেত্রে আল-কুরআনের সরাসরি শাস্তির ঘোষনা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন: ‘‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ করে বেড়ায়, তাদের আযাব কেবল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। এটি তাদের জন্য দুনিয়ায় লাঞ্জনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।’’

ওজনে কম দেয়া : ওজনে কম দিয়ে সম্পদ উপার্জন করা ইসলামে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে এবং যারা এমন জঘন্যতম কাজে লিপ্ত থাকবে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আল-কুরআনে ঘোষণা করেন: ‘‘যারা ওজনে ও মাপে কম দেয়, তাদের জন্য সর্বনাশ। যারা মানুষের কাছ থেকে মেপে আনার সময় ঠিকমত আনে, আর মেপে দেয়ার সময় কম দেয়।

তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে? যে দিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ জগত সমূহের প্রতিপালকের সম্মুখে। কখনও না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে আছে। সিজ্জীন সম্পর্কে তুমি কী জান? তা চিহ্নিত আমলনামা। সেই দিন দুর্ভোগ হবে অস্বীকারকারীদের, যারা কর্মফল দিবসকে অস্বীকার করে, কেবল প্রত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারী এটি অস্বীকার করে।’’

জবর দখল : জবর দখল করা ইসলামী আইন নিষিদ্ধ। এ নিষিদ্ধ কাজটি সমাজে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। জোরপূর্বক মানুষের সম্পদ হরণ, জোর পূর্বক অন্যের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া, মানুষকে প্রহার করা, গালিগালাজ করা, বিনা উসকানিতে কারো ওপর আক্রমণ চালানো এবং আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন এবং দুর্বলদের ওপর নৃশংসতা চালানো ইত্যাদিকে জবর দখল বলে। এটি ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: ‘‘জালিমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে উদাসীন মনে করো না। আল্লাহ তাদেরকে শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করেন, যেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা নিচু করে দৌঁড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবেনা এবং তাদের হৃদয়সমূহ দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আযাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও।

সেদিন জুলুমবাজরা বলবে : হে আমাদের প্রভূ! অল্প কিছুদিন আমাদেরকে সময় দিন তাহলে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করবো এবং রসূলদের অনুসরণ করবো। তোমরা কি ইতঃপূর্বে কসম খেয়ে বলতে না যে তোমাদের পতন নেই। যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করেছ এবং সেই সব জালেমের সাথে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্ত আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’’

রসূল স. বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও অন্যের জমি জবর দখল করবে, কিয়ামতের দিন তার ঘাড়ে সাতটি পৃথিবী চাপিয়ে দেয়া হবে।’’  প্রচলিত আইনে, অন্যায়ভাবে অন্যের ভূমিতে প্রবেশ করা অথবা ভূমির দখলে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করাকে ভূমিতে অনধিকার প্রবেশ বা ভূমি ট্রেসপাস বলে।

পতিতাবৃত্তি : স্বাভাবিক যৌনকার্য মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের অন্যতম। এর সমাধান না হলে মানুষ তার জীবনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অবৈধ পন্থায় যৌনকার্য সম্পাদন করা গর্হিত কাজ। কোনো নারী স্বেচ্ছায় নিজেকে দেহ ব্যবসায় নিয়োজিত করতে পারবে না। এটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্য কেউ তাকে দিয়ে দেহ ব্যবসায় পরিচালনা করতে চাইলে তাও নিষিদ্ধ।

আল-কুরআনে এসেছে, “তোমরা যুবতীদের দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হতে বাধ্য করো না।’’ কুরআনের আরো ঘোষণা, “তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। কেননা তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।’’ মহানবী স. বলেন, “কোন ব্যক্তি মু’মিন থাকা অবস্থায় ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।’’

ইসলাম ব্যভিচার ও দেহ ব্যবসায়কে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পর্ণোগ্রাফি ছবি তৈরি অশ্লীলতা ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পরিচায়ক। তরুণ-যুব-শিশু চরিত্র হনন করাই এর মূল উদ্দেশ্য। ইসলাম যে কোন প্রকার অশ্লীলতার নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছে। আল-কুরআন বলেন, ‘‘তোমরা কোনো ধরণের প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হয়ো না।’’

রসুল স. বলেছেন, ‘‘আমার নিকট থেকে নিয়ে নাও, আল্লাহ্ ঐ সকল মহিলার জন্য পথ বের করে দিবেন। যুবক-যুবতী যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও একবছর নির্বাসন। আর বিবাহিত মহিলা ও পুরুষ যেনা করলে তাদের শাস্তি একশত বেত্রাঘাত ও পাথর দ্বারা রজম।’’ এমনিভাবে আরো অনেক হাদীস রসূল স. থেকে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের সকলের উচিত যে, এসকল খারাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখা এবং অপরকে বিরত থাকা।

আমানতের খিয়ানত : আমানতের খিয়ানত একটি জঘণ্য কাজ এবং এর দ্বারা উপার্জিত সম্পদও হারাম। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের কাউকে যদি কোন ব্যক্তি কোন কিছুর আমানতদার বানায় বা কোন বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে সে যেন উক্ত আমানত প্রাপককে পরিশোধ করে দেয় এবং সে যেন (এ ব্যাপারে) তার রব আল্লাহকে ভয় করে। তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, যে কেউ তা গোপন করে অবশ্যই তার অন্তর পাপী।

তোমরা যা কর আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত। অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তোমাদের ওপর ন্যস্ত আমানতের খেয়ানত করো না। অথচ তোমরা জান।’’ অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, “আর কোন নবীর জন্য কোন কিছু আত্মসাৎ করা মানানসই নয়, আর যে ব্যক্তি কোন কিছু আত্মসাৎ বা গোপন করবে, কিয়ামতের দিন সে উক্ত আত্মসাৎকৃত বস্তুসহ উপস্থিত হবে; অত:পর প্রত্যেককে তার পরিপূর্ণ বদলা দেয়া হবে এবং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না।’’

মডেলিং : মডেলিং একটি পেশা। এটি যদি ইসলাম পরিপন্থী না হয় তাহলে তা জায়েয, অন্যথায় তা হারাম। কেননা বর্তমান মডেলিংয়ের মধ্যে যে সকল বেপর্দা ও অর্ধ-উলঙ্গ এবং বেহায়াপনা চিত্র দেখা যায় কোন ক্রমেই তা ইসলামে সমর্থিত নয়। আর এ উপার্জিত সম্পদও হালাল হতে পারে না।

বিজ্ঞাপন সংস্কৃতির সহযোগী অনুষঙ্গ হিসেবে মডেলিং ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। আধুনিক অর্থনীতি বলে বিজ্ঞাপন ব্যতীত কোনো পণ্যের বাজারজাতকরণ সম্ভব নয়। আর বিজ্ঞাপনের সাথে মডেলিংয়ের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তারকা খ্যাতিকে পণ্যের সঙ্গে সংয্ক্তু করে পণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলা এবং তা চাহিদা সৃষ্টির কৌশল সর্বজনবিদিত।

তেমনি পণ্যের বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে অনেক ব্যক্তি প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হতে পারে। মডেলিং একটি স্বতন্ত্র পেশায় পরিণত হয়েছে। পণ্যের বাজার সম্প্রচারিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে মডেলিংয়েরও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। প্রায় সারা বিশ্বে মডেলিংয়ের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। আমাদের দেশেও সে রকমের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। বিদেশে ৬০% অর্থ বিজ্ঞাপন খাতে ব্যয় হয়। সেখানে মডেলদের পারিশ্রমিক উচ্চমূল্যের। ইসলাম অপ্রয়োজনীয়ভাবে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সমর্থন করে না, কারণ মডেলিংয়ের দ্বারা পণ্যের গুণগতমান বাড়ে না।

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

 

এ সম্পর্কিত খবর

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটারের তালিকা চান হাইকোর্ট

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

চুয়াডাঙ্গায় সকালে ইসতিসকার নামাজ আদায়, রাতেই নামল স্বস্তির বৃষ্টি

গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েলের ভেতর গভীরতম হামলা হিজবুল্লাহর

আদালত অবমাননা : বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীর বিষয়ে আদেশ পেছাল

গুচ্ছের হাবিপ্রবি কেন্দ্রে তিন ইউনিটে পরীক্ষার্থী ১২৩৪১ জন

বিশ্ব বই দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিতে রাবিতে 'মলাট' চালু

ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ৭ কেএনএফ সদস্য কারাগারে

জলবায়ু পরিবর্তনের মূল আঘাত যাচ্ছে এশিয়ার ওপর দিয়ে: জাতিসংঘ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ