মোনাজাতউদ্দিনের চলে যাওয়ার দিন

প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১০:৪৯:৩৫

মোনাজাতউদ্দিনের চলে যাওয়ার দিন

গ্রামের অন্ধকারে আলো ফেলার প্রয়াস। শুরুটা তিনি করেছিলেন সাংবাদিকতার মাধ্যমে। তাঁর অনুসন্ধানে উঠে আসতো গ্রামীণ জীবনের অন্ধকার, কুসংস্কার, যৌতুক, বাল্যবিয়ে, মানুষের নিম্নতম জীবনের কারণসহ নানাবিধ সংকটের কথা। তাঁর অসাধারণ কৌশলে খবরের পাতা ভরে যেত গ্রামীণ খবরে। তিনি আর কেউ নন, তিনি চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন।

খবর সংগ্রহে বের হলে তাঁর সাথে গ্রামের তরুণরা থাকতো। তরুণরা তাঁর খবর সংগ্রহের বন্ধু ছিল। তাদের সহযোগিতায় খুব গভীরের খবর কেন্দ্রের মূলধারার গণমাধ্যমে তুলে ধরতে সক্ষম ছিলেন। মফস্বল সাংবাদিকতায় তিনি চিরস্মরণীয় নাম।

মোনাজাতউদ্দিন ১৯৯৫ সালের এই দিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে ব্রহ্মপুত্র নদের কালা সোনাচরের কাছে শেরেবাংলা ফেরি থেকে পড়ে মারা যান। আজ তাঁর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের গ্রাম সাংবাদিকরা নানা আয়োজনে তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছেন।

বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে তাঁকে চেনেন সবাই। এ চারণ সাংবাদিক চষে বেড়াতেন গ্রামের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। খবরের খোঁজে মিশে যেতেন মানুষের মধ্যে। মানুষের কাছাকাছি থেকে, মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র সংগ্রহ করতেন। সে খবর পরের দিন পত্রিকার লিড নিউজ হতো। যা ছিল তাঁর ভিন্ন কৌশল। সে সময়ে কীভাবে গ্রামীণ জীবনকে আরো ফোকাসে আনা যায়, সে জন্য তিনি কিছু যোগ্য শিষ্যও তৈরি করে গেছেন।

১৯৪৫ সালের ১৮ জানুয়ারি রংপুরের গঙ্গাচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ষাটের দশকে বগুড়া থেকে প্রকাশিত বুলেটিনের মাধ্যমে সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি তাঁর। কর্মজীবনে ঢাকার দৈনিক আওয়াজ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক সংবাদ ও সর্বশেষে দৈনিক জনকণ্ঠে কাজ করেছেন। তার কাজের ক্ষেত্র ছিল বাংলার মেঠোপথ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

গ্রামের পথে পথে হেঁটে দীর্ঘ জীবনে সঞ্চয় করেছেন অনেক অভিজ্ঞতা। আর এসব অভিজ্ঞতার আলোকেই লিখেছিলেন ১১টি বই। দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন দৈনিক সংবাদে, সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন ‘দৈনিক রংপুর’ পত্রিকার। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৭ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) অর্জন করেছেন।

এছাড়া তিনি ১৯৮৭ সালে ফিলিপস পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে রংপুর নাট্য সমিতি সম্মাননা, ১৯৮৪ সালে পেয়েছেন সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী স্মৃতি পদক, ১৯৮৫ সালে আলোর সন্ধানে পত্রিকার সংবর্ধনা, ১৯৮৬ সালে ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব বগুড়ার সম্মাননা, ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে রংপুর পদাতিক গোষ্ঠীর গুণীজন সংবর্ধনা, ১৯৯০ সালে বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার, একই সালে কারিগর সম্মাননা, ১৯৯৫ সালে অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন।

মোনাজাতউদ্দিন সম্পর্কে মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘মোনাজাত ভাইকে সবসময় পড়ি। অনুপ্রেরণা পাই। কিভাবে মানুষের কাছ থেকে খবর সংগ্রহ করতে হয়, তা তিনি শিখিয়েছেন। তাঁর কাজের ধারা এখনও অনেকে ফলো করছেন।’

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ