থেরেসা মে কে ‘স্টুপিড নারী বলার অভিযোগ, অস্বীকার করবিনের

প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০৪:৪৬:৩৩

থেরেসা মে কে ‘স্টুপিড নারী বলার অভিযোগ, অস্বীকার করবিনের

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-র প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন তাকে ‘স্টুপিড নারী’ বলেছেন বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ এমপিরা। এ ঘটনায় করবিনের ক্ষমা চাওয়ার দাবিও তুলেছেন তারা। তবে লেবার নেতার দাবি, তিনি এ ধরনের কোনও শব্দ উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি বলেছেন, ‘স্টুপিড পিপল’।

এই অভিযোগ ওঠার পর হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো বলছেন, ঘটনাটি তিনি দেখতে পাননি এবং সব এমপিকে বক্তব্যের ভিত্তিতে গ্রহণ করা উচিত।

জেরেমি করবিন জানিয়েছেন, তিনি সবসময়ই যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ বা নারীদের প্রতি বিদ্রূপমূলক ভাষা ব্যবহারের বিরোধী। তবে কনজারভেটিভ এমপিরা বলছেন, তারা করবিনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন। তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।

হাউস অব কমন্সে দেওয়া বক্তব্যে করবিন বলেন, আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার সময় আমি তাদের কথাই বলছিলাম, যারা দেশের এই সংকট নিয়ে চলা একটি বিতর্ককে কৌতুকে পরিণত করতে চাইছে, তাদেরকেই আমি ‘স্টুপিড পিপল’ বলেছি। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে ‘স্টুপিড উইমেন’-এর মতো কোনও শব্দ ব্যবহার করিনি।

কনজারভেটিভ এমপি র‍্যাচেল ম্যাকলিন অবশ্য করবিনের এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ঠোঁটের ভাষা পড়ে দেখুন। আমি তাকে বিশ্বাস করি না।

অভিযোগ উঠার পর এক পর্যায়ে হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকো বলেন, করবিনের বিরুদ্ধে যে আচরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে, তিনি সেই ভিডিও পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেখানে মাইক্রোফোনে কোনও শব্দ আসেনি। তবে এটি দেখে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, কেন বিরোধী নেতার শব্দকে ‘স্টুপিড ওম্যান’ হিসেবেও বর্ণনা করা যায়।

আদালতে যারা ঠোঁটের ভাষা অনুবাদের কাজ করেন, এমন একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েছেন স্পিকার। তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত উপসংহারে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

স্পিকার বলেন, কারও পক্ষেই শতভাগ নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। এমনকি পেশাদার ঠোঁটের ভাষা বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও নয়। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আমি একজন সম্মানিত সদস্যের বক্তব্যকেই গ্রহণ করবো, যা আসলে করা উচিত। এটাই হবে যৌক্তিক পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, করবিন পুরো সময় ধরে বসেছিলেন এবং হাউসকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেননি। তাই তার বক্তব্য 'অন রেকর্ড' হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।

এর আগের একটি ঘটনায় স্পিকার জন বারকোর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি টোরি এমপি ভিকি ফোর্ডকে 'স্টুপিড ওম্যান' বলেছেন। ফলে এমপিরা স্পিকারের নিজের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে অ্যান্ড্রিয়া লেডসোম এমপি বলেছেন যে, এ বছরের শুরুর দিকের ওই ঘটনার জন্য তিনি এখনও ক্ষমা চাননি। জবাবে স্পিকার বলেছেন, এর মধ্যেই ওই ঘটনা নিয়ে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

লেডসোম বলেন, করবিনের বিবৃতির পর দর্শক ও এমপিদের পক্ষে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে।

যেভাবে এই ঘটনার সূত্রপাত :

থেরেসা মে-র বেক্সিট চুক্তি নিয়ে জেরেমি করবিনের সঙ্গে প্রথম সংঘাত শুরু হয় গত সপ্তাহ থেকে, যখন ভোটাভুটি পিছিয়ে দেওয়াকে স্বার্থপর কৌশল বলে মন্তব্য করে থেরেসা মে-কে ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিহিত করেন জেরেমি করবিন। পাল্টা আঘাত করতে গিয়ে মে বলেন, তিনি (জেরেমি করবিন) তার প্রতিশ্রুত অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেননি এবং এরপরে যা করেছেন তাও অকার্যকর।

থেরেসা মে বলেন, আমি জানি এটা হচ্ছে কৌতুক-নাট্যের সময়। তিনি কি অনাস্থা ভোট আনবেন? ওহ, তিনি আনবেন। ওহ না, তিনি আনবেন না।

লেবার নেতার দিকে তাকিয়ে থেরেসা মে বলেন, আপনার পেছনে তাকিয়ে দেখুন, তারা আপনার কাজে মুগ্ধ নন এবং দেশের লোকজনও নয়। এ সময় জেরেমি করবিনকে নিশ্বাস ফেলার সঙ্গে কিছু একটা বলতে দেখা যায়।

এই অভিযোগের বিষয়ে টোরি এমপি পল স্কুলি থেরেসা মে-র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মনে করি, হাউসের প্রত্যেক সদস্যের, বিশেষ করে যখন নারীদের ভোটাধিকারের শতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে। এমন সময়ে সবার নারীদের রাজনীতিতে আসাকে উৎসাহিত করা উচিত এবং যথাযথ ভাষা ব্যবহার করা উচিত।

প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বের পরেও এই বিতণ্ডা চলতে থাকে এবং বেশ কয়েকজন নারী কনজারভেটিভ এমপি করবিনের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাতে থাকেন।

সাবেক মন্ত্রী অ্যানা সুবরি স্পিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, যদি লেবার পার্টির কোনও নারী এমপির প্রতি কনজারভেটিভ পার্টির কোনও এমপি এমন মন্তব্য করতেন তাহলে স্পিকার আরও দ্রুত ব্যবস্থা নিতেন।

প্রবীণ লেবার এমপি মার্গারেট বেকেট বলছেন, এই অভিযোগ হচ্ছে দলীয় রাজনীতি।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এমপি ভিরা হবহাউজ বলেন, দেশের সব জায়গা থেকেই আজকের এই ঘটনা মেয়েরা দেখেছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, যদি এরপর তাদের অনেকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়। এই অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে জেরেমি করবিনের অবশ্যই ক্ষমা চাওয়া উচিত। সূত্র: বিবিসি।

প্রজন্মনিউজ২৪/আরমান হেকিম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ