জাপার কৌশল নাকি বিদ্রোহ

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:১৭:৪০

জাপার কৌশল নাকি বিদ্রোহ

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেও দলটির বিপক্ষে ১৪৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাপা মোট ১৭৪ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে ২৬টিতে নৌকা নেই। এসব আসনে জাপার প্রার্থীরাই মহাজোটের প্রার্থী। বাকি ১৪৮ আসনে নৌকার বিপক্ষে লড়াইয়ে থাকছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের লাঙ্গলও। মহাজোটের শরিক হয়েও সারাদেশের ৩০০টির প্রায় অর্ধেক আসনে জাতীয় পার্টি কেন আওয়ামী লীগের 'প্রতিদ্বন্দ্বী' হয়েছে? এ প্রশ্নের দুই রকম উত্তর পাওয়া গেছে দলটির নেতাদের কাছ থেকে। এরশাদের দলের কয়েকজন নেতা দাবি করেছেন, কৌশলের অংশ হিসেবেই জাপা এত আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

বিএনপি শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে ভোট থেকে সরে গেলে নির্বাচনকে 'প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ' করতে আওয়ামী লীগের পরামর্শেই এ কৌশল। যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা এ কৌশলের কথা স্বীকার করেননি। আবার দলটির কয়েকজন নেতা  বলেছেন, প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন না পেয়ে আওয়ামী লীগকে 'শিক্ষা' দিতে ১৪৮ আসনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী রেখেছেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। আসন্ন নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬ আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। সংসদে ৩৬ আসন দখলে থাকা জাতীয় পার্টির জন্য এ সংখ্যাটি অপ্রত্যাশিত আঘাত বলে মনে করছেন এরশাদ।

এরশাদের একজন উপদেষ্টা  জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যাশা ছিল আওয়ামী লীগ তাদের অন্তত ৪০টি আসন ছাড়বে। প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন না পেয়ে নৌকা ডুবাতে 'বিদ্রোহী' হয়েছেন এরশাদ। গতকাল সোমবার রাতে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন তিনি। এরশাদের ওই উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করে  বলেন, জাপাকে কখনও মূল্যায়ন করেনি আওয়ামী লীগ।এবার নিজের ভোটের শক্তি দেখাবেন এরশাদ। যে ১৪৮ আসনে নৌকার বিপক্ষে লাঙ্গলের প্রার্থী রয়েছে এর কয়েকটিতে এককভাবে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে জাপার। বাকি আসনগুলোতে জিততে না পারলেও দুই হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত ভোট রয়েছে।

 এ ভোটগুলো আওয়ামী লীগ না পেলে তাদের খেসারত দিতে হবে।এরশাদের অনুপস্থিতিতে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে জাতীয় পার্টি ১৭৪ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, কারও ক্ষতি করার জন্য নয়। শুধু জাতীয় পার্টি নয়, মহাজোটের শরিক বিকল্পধারা, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ নৌকা আছে এ রকম মোট ২৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে এসব দলের প্রার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন নয় বলে জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির এ সদস্য

গতকাল বলেছেন, ১৪৮ আসনে নৌকার বিপক্ষে জাপা প্রার্থী দিলেও তাতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হবে না। নৌকার পাশাপাশি একই আসনে শরিকদের থাকা প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা  বলেছেন,বিকল্পধারা, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের প্রার্থীরা খুব একটা ক্ষতির কারণ হবে না। তবে জাপার প্রার্থী নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলে। সারাদেশে না হলেও বৃহত্তর রংপুরে জাতীয় পার্টির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। বৃহত্তর রংপুরের ২১টি আসনের ১১টিতে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী দিয়েছেন এরশাদ।

এরশাদের দুর্গ খ্যাত রংপুরের ২১ আসনে ৭টিতে ছাড় পেয়েছে জাপা। বৃহত্তর রংপুরে জাপার দু'জন বর্তমান এমপি মহাজোটের মনোনয়ন পাননি। রংপুরে ১৯৯১ সালে ১৮, ১৯৯৬ সালে ২১ ও ২০০১ সালে ১৪ আসনে জয়ী হয় জাপা। নিজ দুর্গে ছাড় না পেয়ে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির নেতারা। রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ এন আশিকুর রহমানের বিপক্ষে লাঙ্গল নিয়ে ভোটে আছেন জাপার ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর। তিনি  বলেছেন, ফল যাই হোক ভোটে থাকবেন।প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন না পেয়ে অসন্তোষের কথা প্রকাশ্যেই বলেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান। তিনি গতকাল সোমবার বলেছেন,

জাতীয় পার্টিকে যে ক'টি আসন দেওয়া হয়েছে তাতে দলের নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট নন। তবে মহাজোটের স্বার্থে তারা বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। মহাজোটভুক্ত যে প্রার্থী শক্তিশালী, তাকেই সমর্থন দেওয়া হবে। উন্মুক্ত নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।গত রোববার সকালে জাতীয় পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলটি মহাজোটের হয়ে ২৯টি আসনে লড়বে। এর বাইরে জাতীয় পার্টির আরও ১৩২ জন প্রার্থী থাকবে। তবে তারা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে গণ্য হবেন না। এসব আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থী থাকবেন। তবে এ হিসাব পাল্টে যায় রাতে। জাপাকে ছেড়ে দেওয়া ২৯ আসনের তিনটি

কুড়িগ্রাম-১, টাঙ্গাইল-৫ ও বরিশাল-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত জাপার ভাগে জোটে ২৬ আসন। বরিশাল-৩ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে লাঙ্গলের বিপক্ষে লড়াইয়ে আছেন।জাতীয় পার্টি ২৯ আসনে মহাজোটগত ও ১৩২ আসনে দলীয়সহ ১৬১টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে ১৭৪ আসনে ১৭২ প্রার্থীর নাম জমা দেয়। এরশাদ রংপুর-৩ ও ঢাকা-১৭ আসনে প্রার্থী। বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ ও ময়মনসিংহ-৭ আসনে প্রার্থী। এরশাদ রংপুর-৩ আসনে, রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ দুই আসনে নৌকার প্রার্থী নেই। তবে এরশাদকে ঢাকা-১৭ আসন এবং রওশন এরশাদকে ময়মনসিংহ-৭ আসনে নৌকার বিপক্ষে লড়তে হবে।জাপার নেতারা বলেছেন, ঢাকা-১৭ আসনে ছাড় না পেয়ে ক্ষুব্ধ এরশাদ। কুড়িগ্রাম-১ আসনে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন থেকে টানা সাতবার জয়ী হয়েছে জাতীয় পার্টি। জাপার এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান এ আসনে টানা চারবার জয়ী হয়েছেন। তিনি এবারও প্রার্থী। এ আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। মোস্তাফিজুর রহমান সমকালক বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে তার জয় নিশ্চিত। তাকে মহাজোটের মনোনয়ন না দেওয়া হাস্যকর সিদ্ধান্ত। তিনি ভোটে আছেন, থাকবেন।

কুড়িগ্রাম-৩ আসনে জাপার এমপি ডা. আক্কাস আলী সরকার  বলেন, তার লড়াই নৌকার বিপক্ষে। নৌকা-লাঙ্গলের লড়াইয়ে ধানের শীষ যদি জয়ী হয়ে যায়, এই দায় তার নয়। টাঙ্গাইল-৫ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাপার শফিকউল্লাহ আল মুনির। গত রোববার নির্বাচন কমিশনে আওয়ামী লীগের দেওয়া প্রার্থী তালিকায় এ আসনটি ফাঁকা ছিল। কিন্তু গতকাল এ আসনে নৌকা প্রতীক পান ছানোয়ার হোসেন। শফিকউল্লাহ আল মুনির সমকালকে বলেছেন, যা হয়েছে তাতে তিনি বিস্মিত। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিলেও তিনি ভোট থেকে সরবেন না; জয়-পরাজয় যা-ই হোক না কেন।

আওয়ামী লীগ মহাজোটের বাকি শরিকদের ছেড়েছে ১৬ আসন। ওয়ার্কার্স পার্টি পাঁচটি (একটি উন্মুক্ত), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) তিনটি, বিকল্পধারা তিনটি, তরীকত ফেডারেশন দুটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) দুটি (একটিতে উন্মুক্ত) এবং বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) একটিতে ছাড় পেয়েছে। জেপি বাদে বাকি দলগুলো মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোটে অংশ নিচ্ছে। তবে বিকল্পধারা ২০টি আসনে দলীয় প্রতীক কুলা এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ চারটি করে আসনে হাতুড়ি ও মশালের প্রার্থী দিয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/রবিউল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ