ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করব:মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১০:৫০:২৫

ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করব:মির্জা ফখরুল

পাকিস্তান হাইকমিশন ও আইএসআইয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমানের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদকের মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন।

এ বক্তব্য শুধু অপ্রত্যাশিত ও অনাকাক্সিক্ষতই নয়, এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রতি জঘন্য আঘাত বলে আমরা মনে করি।এ ধরনের কোনো বৈঠক কখনোই আমাদের সঙ্গে হয়নি। লন্ডনেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কোনো সংস্থার কোনো রকমের বৈঠক হয়নি।এ বক্তব্য শুধু বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।আওয়ামী লীগের এ প্রবণতা আছে যে বিএনপিকে এমন সংস্থা বা দেশের সঙ্গে যুক্ত করে বিপদে ফেলতে চায়।আমরা সবসময় জনগণের মতামত নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছি।

কোনো সংস্থা বা দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই।রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।মির্জা ফখরুল বলেন, রোববার বিভিন্ন পত্রিকায় সিন্ডিকেটেড নিউজ ছাপানো হয়েছে, পাকিস্তানের দূতাবাসের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি এবং তথাকথিত আইএসআইয়ের সঙ্গে লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বৈঠক করেছেন।আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

সরকার পরিকল্পিত ও সুচিন্তিতভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপপ্রচারে মেতে উঠেছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারি অর্থ ব্যয় করে তারা জঘন্য মিথ্যাচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়াকে ব্যবহার করছে।সরকারি দল ও মন্ত্রীরা জঘন্য মিথ্যাচার শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তিন শতাধিক ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলেছে, যার একমাত্র উদ্দেশ্য বিরোধী দল ও খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা, নোংরা ছবি ছড়ানো এবং মিথ্যা ও বানোয়াট গল্প তুলে ধরা।

এ অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা এখন থেকে মামলা করব।বিএনপির সমর্থিত সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেফতার করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছে, আইসিটি অ্যাক্ট, ৫৭ ধারা করেছে।এসব করতে গিয়ে তারা সব স্বাধীন চিন্তা, মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতাকে হরণ করেছে। তারা শীর্ষ নিউজসহ ৫৮টি নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব করেছে।এভাবে তারা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে।দেশকে রক্ষা করতে হলে মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে।

৫৮টি অনলাইন পোর্টাল বন্ধের সুপারিশের নিন্দা জানান মির্জা ফখরুল।এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল করব।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভেরিফাইড পেইজে ড. কামাল হোসেনের একটি কার্টুন দেখিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কার্টুন দিতেই পারেন। সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক নেতাদের কার্টুন আসতেই পারে।যখন আওয়ামী লীগের নেতা, প্রধানমন্ত্রী অথবা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কার্টুন দেয়া হয় তখন তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রামের মহিলা, তাকেও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার একটি ছবি দেখেন।যখন আমি রাঙ্গামাটি যাচ্ছিলাম সেই পথে আমার ওপর আক্রমণ করা হয়।আমাদের গাড়ি ভেঙে দিয়ে আমার কাপড়-চোপড়গুলো ছিঁড়ে যায়, রক্তাক্ত হয়। তখন একটি ছবি আপনারা (সাংবাদিকরা) নিয়েছিলেন। গত শনিবার গুলশান কার্যালয়ে কিছু কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশীর সমর্থকরা বিক্ষোভ করছিলেন।তাদের মধ্য দিয়ে আমি বেরিয়ে যাই।

তখন ওই রাঙ্গামাটির ছবি দিয়ে বলেছে সেদিন নাকি আমার এ অবস্থা হয়েছে।এই যে চরিত্র হনন করা, এসব তাদের স্বভাবজাত। এদের বিরুদ্ধে কিন্তু মামলা হয় না। তিনি বলেন, এখন আমরা মামলা শুরু করব। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।দেখব সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের দুর্নীতির ওপর পোস্ট দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার হওয়া অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লায়ন আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির, কেএম হারুন,

রেজোয়ানুল হক শোভন, ওয়াসীম ইফতেখার, রাজন ব্যাপারী, মো. ইভান, ফসিউল আলম, জাহিদ হাসান, ইকবাল চৌধুরী, সজীব পাইলট, মাহফুজুল হকসহ গ্রেফতার সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।মিডিয়াকে নিরপেক্ষ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কিছু নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে বিক্ষোভ করলে সেগুলো বড় করে ছাপা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নিজেদের দ্বন্দ্বে অনেক খুন হলেও মিডিয়ায় সেগুলো ফলাও করে প্রচার হয় না।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে দেশ গণতান্ত্রিক থাকবে কি থাকবে না। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায় কোনো সমতল ভূমি নেই।আমরা ভয়াবহ প্রতিকূলতা ও খানাখন্দে ভরা অসমতলভূমিতে নির্বাচন করতে যাচ্ছি। এখনও আগের মতোই মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করছে।এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

খালেদা জিয়া জামিন পাওয়া সত্ত্বেও মুক্তি দেয়া হয়নি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, যে ভয়াবহ ভূমিকা আপনারা পালন করছেন তা থেকে ফিরে আসুন। যদি দেশকে সত্যিকার অর্থে রক্ষা করতে চান নির্বাচনকে উন্মুক্ত করুন, যেন সব দল সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।অন্যথায় দেশ আবারও দীর্ঘকালের জন্য সংঘাতের দিকে যাবে, স্বাধীনতা হারাবে।দেশকে এমন অবস্থার দিকে নিয়ে যাবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল, আবদুল আউয়াল খান, এসএম জিলানী, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাবিথ আউয়াল, শামসুজ্জামান সুরুজ প্রমুখ।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ