ঝর্ণা পাহাড়ের লীলাভূমি জাফলং ভ্রমণে

প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০৩:৩০:১৯

(১ম পর্ব)

গত ৩১ অক্টোবর ঢাকা অনলাইন র্জানালিস্ট ইউনিট কর্তৃক আয়োজিত তিনদিনের শিক্ষা সফরে রওয়ানা দিয়েছিলাম হযরত  শাহজালাল (রহ:) এর দেশ পুণ্যভূমি সিলেটের উদ্দেশ্যে। এই সফরের প্রধান আয়োজক ছিলেন স্বপন ভাই এবং তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন আমাদের অতি প্রিয় নুর ভাই ও সজীব ভাই।

৩১ অক্টোবর রাত ১০.৩০ মিনিটে ঢাকা রাসেল স্কয়ার থেকে, মিডিয়া কাঁপানো ৪০ জনের একটি সাংবাদিক দল শ্যামলী গাড়ি যোগে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই।

ঢাকার যানজট ও কোলাহলমুক্ত পরিবেশে একটু বিনোদনের উদ্দেশ্যে ছিল আমাদের এই যাত্রা। গাড়ি যাত্রা শুরু করার  মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বড় ধরনের জ্যামের মুখে পড়ে। সেখানে প্রায় একঘন্টা বিলম্ব হয় । ভ্রমণে বিনোদন এবং প্রয়োজনের তাগিদে একটি হ্যান্ডমাইক ক্রয় করা হয়েছিল। গাড়িতে যাত্রা শুরুর কিছুক্ষন পর বিনোদনের পসরা নিয়ে হাজির হন নুর ভাইয়ের নেতৃত্বে একটি জোকার দল।

দারুণ-দারুণ সব উপস্থাপনায় তারা মাতিয়ে তোলেন গাড়ির ভিতরের পরিবেশ। সেখানে গান পরিবেশন করেন বেশ কয়েকজন অপেশাদার কোকিলকন্ঠি গায়ক। সেফুদা,হাজী সেলিম এবং মাহফুজুর রহমানদের মত বিখ্যাত সব শিল্পীদের গানে মাতোয়ারা হয়ে যাচ্ছিল চারিদিক।

কৌতুক পরিবেশনের জন্য আমাদের সাথে ছিলেন কৌতুকজগতের মুকুট হীন সম্রাট রেদোয়ান খান। তার মজার মজার সবকৌতুক শুনে হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যাচ্ছিল। গাড়িতে ‍উঠার পর সিট প্লান বন্টন করে দিয়েছিলেন নুর ভাই। প্রথমে যারা সামনের দিকে বসবে অর্ধেক রাস্তা যাওয়ার পর তারা আবার পেছনের দিকে বসবে।

দুর্ভাগ্যক্রমে আমার প্রথমে সিট পড়েছিল এক নম্বর ।পরবর্তী বাকি রাস্তা পাড়ি দিতে সিট পেয়েছিলাম লাস্ট নম্বর।

র্দীঘ কয়েক ঘন্টার ভ্রমণ শেষে সকাল ৬ টায় আমরা পৌঁছায় দ্বিতীয় লন্ডন খ্যাত পূণ্যভূমি সিলেট শহরে। অবাক হয়ে লক্ষ করি যে আমরা র্দীঘ র্জানি শেষে আবার গুলশানে পৌঁছেছি। তবে সেটা ঢাকা গুলশান নয় সিলেটের স্বনামধন্য গুলশান হোটেলে।

গুলশান হোটেলে আমাদের অবস্থান করার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। সেখানে পৌছে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে ছিলেন বাংলানিউজ পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি রনি ভাই। গুলশান হোটেলে আমাদের রেস্টের জন্য দুই ঘন্টার বিরতি দেয়া হয়। সকাল ৯টায় আমরা তালতলীর বিখ্যাত পানসী হোটেলে ব্রেকফাস্ট সারি।

ব্রেকফাস্ট শেষে আমরা হোটেল গেটে এসে লক্ষ করি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ঝকঝকে একটি গাড়ি একেবারে ইনটেক। ঝপাঝপ উঠে দখল করে ফেললাম একটি করে বসার সিট। আমাদেরকে বহনের মাধ্যমেই তার পথচলা আরম্ভ হল।

সিলেট শহর ছাড়িয়ে আমাদের গাড়িটি এগিয়ে চলে জাফলং এর উদ্দেশ্যে। পথের দুপাশে চোখে পড়ে বিস্তৃন সব মাঠ। কোথাও চায়ের বাগান কোথাও আবার বিস্তৃন জলাভূমি। কিছুদুর যেতে চোখে পড়ে ধূধূ করা বিখ্যাত তামাবিল।

ঘন্টাখানেক চলার পর হঠাৎ লক্ষ করি, আকাশ ছুঁয়ে দাড়িয়ে আছে সুবিশাল পাহাড় আর হাতছানি দিয়ে ডাকছে,‘‘এসো, এসো, কাছে এসো, আমার অফুরন্ত সৌর্ন্দয্য উপভোগ কর’’।

আরো কিছুক্ষন পর পাহাড়ের কাছাকাছি এসে পড়ি। আমরা তো আনন্দে আত্নহারা পাহাড়ের গায়ে অরোহন করব রোমাঞ্চকর একটা অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু আমাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে যখন শুনলাম ওই পাহাড় গুলো আসলে আমাদের (বাংলাদেশের ) না ওগুলো ইন্ডিয়ার অর্থাত পাহাড় যেখানে শেষ সেখান থেকে বাংলাদেশের সীমানা।

আমার মাথায় ঢুকলো না এ ক্যামন দেশ বিভাজন যেখানে আমরা শুধু সমতল ভূমি পেলাম আর সীমান্ত জুড়ে সুউচ্চ বিশাল-বিশাল পাহাড়গুলো সব ইন্ডিয়ার।  দুপুর বারোটায় আমরা গিয়ে পৌছায় প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের অপরুপ লীলাভূমি জাফলং এর পাদদেশে।

জাফলং এর মায়াবী  সৌর্ন্দয্যে দেখে অভিভূত হয়ে যায়। ভারত সীমান্তের পাহাড়গুলো থেকে নেমে আসা অনেকগুলো ঝর্ণাধারা মিলিত হয়েছে দুই পাহাড়ের মাঝখানে সেখান থেকে নদীর সৃষ্টি হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বাংলাদেশে ।

এখানকার অপরুপ দৃশ্য দেখে মনের অজান্তে বার-বার মহান আল্লাহর প্রতি মাথানত হয়ে আসে ।

যিনি এতসুন্দর করে এই প্রকৃতিকে সাজিয়েছেন তিনি কতই না সুন্দর! এখানে নদীর পানি এতই স্বচ্ছ যে এক কোমর অবধি নিচে পড়ে থাকা বস্তু স্পষ্ট দেখা যায়। পানির নিচে ছোট-বড় ঝকঝকে অজস্র পাথর থরে-থরে সাজানো রয়েছে। পাথরের কোনে লুকিয়ে থাকা ছোট-ছোট বিভিন্ন প্রজাতির মাছ স্পষ্ট দেখা যায়।

দুপুরের কড়া রোদের মুহূর্তে সেই পানিতে গোসল দেয়ার কোন তুলনায় হয় না । ভয়ানক ধারালো পাথরের উপর দিয়ে আমরা সকলে খুব সাবধানে সেই নদী পার হয়। নদীর ‍ওপারে বালুচরে গিয়ে উঠি। উদ্দেশ্যে বল খেলার। তপ্ত বালুর উপরে শুরু হয় আমাদের ফুটবল খেলা। খেলা পরিচালনা করেন স্বনামধন্য রেফারি নুর ভাই।

২২ জন খেলোয়ার দুটি দলে ভাগ হয়ে খেলা শুরু হয়। বাকী আঠারো জনকে অতিরিক্ত হিসেবে রাখা হয়।

খেলা শুরুর মিনিট পাঁচেক যেতে না যেতেই দেখি অর্ধেক খেলোয়ার উধাও। সূর্যের তাপ সহ্য করতে না পেরে নদীতে গিয়ে ডুব দিয়েছে। আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে খেলা দারুণভাবে জমে ওঠে।  র্দীঘ ১০ মিনিট চলার পর খেলা গোলশূন্য ড্র হয়। ট্রাইবেকারে খেলার নিষ্পত্তি হয়।

উভয় দলের খেলোয়ারদের মূল্যবান পুরস্কার বিতরণ করা হয়। ফুটবল পর্ব শেষে শুরু হয় বেলুন খেলা । বেলুন খেলায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ শেষে সবাই ঝাঁপ দেয় নদীতে। শুরু হয় সাতাঁর কাটা এবং ফটোশেসন পর্ব ।

র্দীঘ দুই ঘন্টা সাতাঁর কাটা এবং গোসল শেষে সকলে পাড়ে ‍উঠে আসে। আমরা কয়েকজন বাংলাদেশের সীমানা পার হয়ে ইন্ডিয়ার সীমান্তে কয়েক ধাপ যেতেই বেজে ওঠে বিএসএফ এর সতর্ক বাশিঁ । আমরা দ্রুত ফিরে আসি।

খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আকাশ ছোঁয়া পাহাড়ের চুড়াই উঠবো । পাহাড় বেয়ে প্রবহমান ঝর্নাধারায় গোসল করবো।  তা আর সম্ভব হয় নি। কারন, পাহাড়গুলো ছিল সীমান্তের ওপারে।আমরা সকলে পাশের একটি মসজিদে গিয়ে জোহর নামাজ আদায় করি।

ইতিমধ্যে স্বপন ভাই জাফলং এর একটি রেস্টুরেন্টে আমাদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা করেন। নামাজ শেষে আমরা সবাই পরিপূর্ন তৃপ্তি সহকারে দুপুরের লাঞ্চ সারি।

বিকেল ৩টায় আমরা রির্জাভ বাসে উঠে পড়ি । জাফলং এর রোমাঞ্চকর ভ্রমণ শেষে আমাদের বাস রওয়ানা দেই চা এর রাজধানী শ্রীমঙ্গল এর উদ্দেশ্যে।(চলবে)

লেখক:-মো:-নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান

 

 

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ