ক্যারিবীয় ক্রিকেটের নিখাদ ভক্ত বারমুডা থেকে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর, ২০১৮ ০৬:২৯:২১

ক্যারিবীয় ক্রিকেটের নিখাদ ভক্ত বারমুডা থেকে চট্টগ্রাম

জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হঠাৎ চোখে পড়ল ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক দর্শককে। পুরোপুরি ক্যারিবীয় নন তিনি, তবুও ক্যারিবীয় ক্রিকেটের নিখাদ ভক্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখতে হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতেও তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

হাতে একটা হাওয়াই চুরুট। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকে নিরাপত্তা কর্মীদের জানাচ্ছেন, মধ্যাহ্ন ভোজের বিরতিতে চুরুট টানতে বাইরে এসেছেন। এটা রেখে আবার তিনি ঢুকতে চান। নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে সহায়তা করলেন।

ভদ্রলোকের পরনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জার্সি, চোখে রোদচশমা, গলায় রুপালি চেইন। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দেখতে আসা এই উইন্ডিজ দর্শকের নাম মারভিন ডগলাস। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন খেলা দেখতে। এসেছেন সাত-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে, ১৩ হাজার কিলোমিটার দূরের বারমুডা থেকে।

ষাটোর্ধ্ব মারভিন পেশাগত জীবন পেছনে ফেলেছেন অনেক আগেই। এখন তাঁর কাজ একটাই, দেশ-বিদেশ ঘুরে খেলা দেখা। যদিও পেশাদার ক্রিকেটের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলেন না। তবে নিখাদ ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রিকেটের টানেই এ দেশ-ওদেশ করে বেড়ান। খেলা দেখছেন ১৯৬৬ সাল থেকে। স্যার গ্যারি সোবার্সের খেলা দেখেছেন মাঠে বসে। তাঁর প্রিয় খেলোয়াড় স্যার ভিভ রিচার্ডস। ক্যারিবীয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ মাঠে বসেই দেখা হয়েছে। সেই ক্রিকেটের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান ক্রিকেট মিলিয়ে দেখলে কখনো কখনো ভীষণ হতাশায় পোড়েন। তবুও ভালোবাসায় টান পড়ে না। এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা দেখতে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে মারভিনের আপত্তি নেই, ‘হতাশ হই, তবে খুব বেশি আশা এখন করি না ওদের কাছে। এই যে কিছুদিন আগে ভারতের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে হারল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হতাশ হলেও বাস্তবতা মেনে নিয়েছি। এই দেখেন না, বাংলাদেশে চলে এসেছি।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এই যে নিখাদ প্রেমী, অথচ মারভিনের দেশ বারমুডা মোটেও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে পড়ে না। তবে ক্যারিবীয় সংস্কৃতির অনেক প্রভাব আছে। বারমুডার জাতীয় দল তো বিশ্বকাপই খেলেছে। আরে মনে নেই, ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বারমুডার সেই বপু ফিল্ডারের দৌড়? স্লিপে রবিন উথাপ্পার ক্যাচ এক হাতে লুফে নিয়ে ডোয়াইন লেভরকের ভোঁ দৌড় বিশ্বকাপের এক আইকনিক ছবিই হয়ে আছে! মারভিন চমকে দিয়ে বলেন, 'ক্যাচ লুফে বিখ্যাত যাওয়া ডোয়াইন কিন্তু আমার স্ত্রীর কাজিন!'

মা্ঠে বসে মারভিন শুধু টেস্টই দেখেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেট দেখেন টিভিতে। চট্টগ্রাম টেস্টের পর যাবেন ঢাকায়। টেস্ট সিরিজ শেষে ফিরে যাবেন দেশে। বাড়িতে স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে তাঁর অপেক্ষায়। দেশ তাঁর বারমুডা বলেই আলাপে চলে আসে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল-প্রসঙ্গ। মারভিনের কাছে ট্রায়াঙ্গেল নিয়ে অবশ্য পুরোনো কথাটাই নতুন করে শোনা হলো, ‘আপনারা যেটা জানেন, আমরাও সেটাই জানি। খুব রহস্যময়, অতীতে অনেক প্লেন-জাহাজ হারিয়ে গেছে ওখানে।’

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এসে বেশ মুগ্ধ। অবশ্য মাঠে খেলা দেখতে একটু হিমশিমই খেতে হচ্ছে, তাঁকে, ‘হয়তো জানেন, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ মাঠে দর্শকদের জন্য বিনোদনের অনেক ব্যবস্থা থাকে। বিশেষ করে পানীয় তো থাকেই। এখানকার গ্যালারিতে সেটি নেই। হয়তো বাংলাদেশের সংস্কৃতি এটি অনুমোদন করে না। একেক দেশের সংস্কৃতি একেক রকম হবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে এখানকার খাবার দারুণ। একটু আগে চিকেন খেলাম, মজাই লাগল।’

‘আমার একটা প্রশ্ন আছে’, ঔৎসুক্য মনে মারভিন জানতে চান, ‘গ্যালারিতে সবাই কেন আমার সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলতে চাইছে?’ বাংলাদেশে রাজপথে আগুনে জ্বলতে থাকা গাড়ি পেছনে রেখে সেলফি তোলেন অনেকে, আর হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে আসা গ্যালারিতে উপস্থিত একমাত্র ক্যারিবিয়ান দর্শকের সঙ্গে ছবি-সেলফি তুলবে না, তা কেমন করে হয়!

স্বাগতিক দর্শকদের সঙ্গে ছবি তোলার চেয়ে মারভিনের কাছে যেটি বেশি ভাবাচ্ছে, দুই সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পারফরম্যান্স, ‘আমরা প্রথম সেশনে হেরেছি। দ্বিতীয়টিও সম্ভবত হারতে যাচ্ছি।’ তবে মনে করিয়ে দিলেন, গত জুলাইয়ে ক্যারিবীয় সফরে বেশির ভাগ সেশন জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ ক্যারিবীয়দের কাছে হেরেছিল যাচ্ছেতাইভাবে। এই সিরিজে কী হবে? মারভিন মুচকি হাসেন, ‘এখনই বলা কঠিন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজই হবে আশা করি।’

টিম হোটেলে আছেন বলে কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে কাল মারভিনের দেখা হয়েছে। বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের শাই হোপের খেলা তাঁর বেশি ভালো লাগে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ মুশফিকুর রহিমকে। মুশফিককে তিনি অবশ্য এখনো 'বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক' ভেবেছিলেন। ভুলটা ধরিয়ে দিলে চোখ টিপ দিলেন মারভিন। ভারী কণ্ঠস্বরে বললেন, 'ও আচ্ছা, সে এখন আর অধিনায়ক না থাকতে পারে, দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান, এটা তো ভুল বলিনি।'

মারভিনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছে চট্টগ্রাম টেস্টে তখনো ব্যাটিংয়ে নামেননি মুশফিক। ২২ গজে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন মুমিনুল হক। বাঁহাতি টপ অর্ডার যেভাবে ব্যাটিং করছেন, মারভিনের পছন্দের তালিকায় উঠে গেছেন তিনিও। 'আমি এই ছেলেটার কথা সেভাবে শুনিনি। তবে আজ ওর ব্যাটিং দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম'—মারভিন যখন মুগ্ধ নয়নে ২২ গজে তাকিয়ে, মুমিনুল তখন অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে সাগরিকার সুনীল আকাশে চেয়েছেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/ সোহেল সানি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ