হার্টব্লকের উপসর্গ

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০৬:০০:৫৮

হার্টব্লকের উপসর্গ

হার্টের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য কী পরিমাণ রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন তা খুব সহজে নির্ণয় করা যায় না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের প্রতি মিনিটে সারা শরীরে ৫ লিটারের মতো রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন, সে মতে এ সময়ে হার্ট প্রতি মিনিটে ৫ লিটার রক্ত পাম্প করবে। একজন মানুষ যখন যুদ্ধক্ষেত্রে থাকে অথবা প্রতিযোগিতামূলক কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করে অথবা কখন কোনরূপ দুর্ঘটনায় পতিত হয় তখন শারীরিক রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট তার পাম্পিং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ৫ লিটারের পরিবর্তে মিনিটে ১০০ লিটার পর্যন্ত রক্ত পাম্প করতে পারে।

এবার ধরুন ৫ লিটার রক্ত পাম্প করা আর ১০০ লিটার রক্ত পাম্প করার মধ্যে শক্তি খরচের মাত্রা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায় ফলশ্রুতিতে ওই সময়ে হার্টে জ্বালানি ও অক্সিজেনের চাহিদা ১০ থেকে ৫০ গুণ বৃদ্ধি পায়। তার মানে দাঁড়ালো হার্টের নিজস্ব রক্ত সরবরাহের প্রয়োজন শারীরিক কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে অনেক কমবেশি হয়ে থাকে। এখান থেকে আরও একটি ব্যাপার নির্ণয় করা যায় যে, প্রয়োজনের সময় অত বেশি পরিমাণ রক্ত সরবরাহের জন্য হার্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্তনালি বিদ্যমান থাকে।

 বিশ্রামকালীন সময়ে খুবই অল্প পরিমাণ রক্তনালি খোলা থাকলেই চলে তাই অল্প কিছু রক্তনালি খোলা থাকে এবং বাকিগুলো চুপসানো অবস্থায় থাকে এবং চুপসানো নালিগুলো প্রয়োজনে আবারও রক্ত সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। রক্তনালির ভিতর দিকে চর্বিজাতীয় পদার্থ খুব ধীরে ধীরে জমা হতে হতে রক্তপ্রবাহের পথ আটকে ব্লকের সৃষ্টি করে। ব্লক সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্রামকালীন এবং স্বাভাবিক পরিশ্রম যেমন পথ হাঁটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা ইত্যাদি কাজে, ব্লক থাকা সত্ত্বেও রক্ত সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় রোগী ব্লকের কোনো উপসর্গে আক্রান্ত হয় না।

 তবে দ্রুত দৌড় দেওয়া অথবা প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের সময় রোগী হাঁপিয়ে উঠা, বুক ধড়ফড় করা, বুকে চাপ, ব্যথা জ্বালা করার মতো উপসর্গে আক্রান্ত হয়। এই সমস্যাগুলোকে একত্রে এনজিনা নামে অবিহিত করা হয়, মানে এসব কাজের সময় রোগী এনজিনায় আক্রান্ত হয়। কাজ শেষে খুব দ্রুত এনজিনা কমে গিয়ে ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

 ব্লকের তীব্রতা ও সংখ্যা  বৃদ্ধি পেলে দ্রুত হাঁটতে গেলে এবং সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গেলে এনজিনায় আক্রান্ত হন এবং কাজ শেষে খুব এনজিনা কমে যায়। ব্লকের তীব্রতা ও সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে রোগী সামান্য কাজ করতে গেলে এনজিনা আক্রান্ত হয়।

 এ ধরনের রোগীদের ব্লকের তীব্রতার জন্য হার্ট শারীরিক চাহিদা মতো রক্তপাম্প করতে না পারায় রোগীর হার্ট ফেইলুর দেখা দেয়। যার ফলে রোগীর শরীরে পানি জমা হতে থাকে কাজেই বিছানায় শুতে গেলে শুকনো কাশির উদ্রেগ হয়, পেটে বদহজম ও অত্যধিক গ্যাসের সৃষ্টি হয়, সব সময় পেটে ভরা ভরা ভাব অনুভূত হয়। ব্লকের পরিমাণ এবং হার্ট ফেইলুরের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে রোগী বিশ্রামকালীন যেমন শুয়ে বসে থাকাকালীন এনজিনায় আক্রান্ত হয় এবং হার্ট ফেইলুরের উপসর্গ বৃদ্ধি পায়।

 এত কিছু বিবেচনা করে চিকিৎসক এনজিওগ্রামের আগেই রোগীর ব্লকের তীব্রতা অনুমান করেন এবং অনুমান শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় সঠিক হয়ে থাকে।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

প্রজন্মনিউজ২৪/সোহেল সানি

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ