কৃষকের নাকে আজও পৌছায়নি কৃষি দিবসের ঘ্রান

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০৫:৫৬:৫২

কৃষকের নাকে আজও পৌছায়নি কৃষি দিবসের ঘ্রান

আসিফ ইকবাল, খুলনা প্রতিনিধিঃ মো: জামির শেখ।খুলনার তেরখাদা থানার মোকামপুর গ্রামের একজন কৃষক। পঞ্চাশোর্ধ বয়সে তিনি মাঠে কাজ করেন।এত দীর্ঘ কৃষি কাজের অভিজ্ঞতায় শিখেছেন অনেক কিছুই। নিজ হাতে যত্ন করে ফলান সোনার ফসল। দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

কিন্তু এই কৃষক জানেন না কৃষি দিবস কি?কবে পালিত হয়?? কেন ই বা কৃষি দিবস পালিত হয়??

যে কৃষি আর কৃষকের জন্য এই কৃষি দিবস সেই কৃষক ই কৃষি দিবস সম্পর্কে কিছু জানেন না, তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে কিসের জন্য আর কাদের এই দিবস পালন করা হচ্ছে? যে দেশের ৮৫% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবুও সেই দেশে কৃষক এখনও অবহেলিত।

জামির শেখ বলেন, আজ পর্যন্ত কোন দিন কৃষি দিবস এর কথা তিনি শোনেন নি। উপজেলা বা থানা পর্যায়ের কৃষি দিবস এর কোন  অনুষ্ঠানে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তার।

যদিও গ্রামের একজন প্রান্তিক কৃষক কৃষি দিবস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতেই পারেন আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু আমাদের কৃষি দিবস পালনের উদ্দেশ্য যেখানে কৃষকদের সংগঠিত করে দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো সেখানে যখন শুনবেন জমির শেখ এর গ্রামে কোন কৃষি সমবায় সমিতি নেই তখন আশ্চর্য হওয়াই স্বাভাবিক।

আরো কথা আছে জামির শেখ এর!তিনি বলেন, কখনো কৃষি অফিস থেকে তাদের জমির ফসল এর খোজ খবর নিতে কোন লোক আসে না, বরং কোন প্রয়োজনে কৃষি অফিস এ গেলে ঠিকঠাক সহযোগীতাও পাওয়া যায় না।

তিনি আরো বলেন, সারের ক্ষেত্রে পান না কোন ভর্তুকি। বরং বাকিতে সার-কীটনাশক কিনলে গুনতে হয় বাড়তি দাম। এত ঝক্কি ঝামেলার পর যখন ভাল ফসল উৎপাদন করেন তখন শুরু হয় আর এক বিপদ, ফসল বিক্রি করে পান না ন্যায্য মূল্য।

পিছনে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং মূল্য বেড়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ অর্থ দিয়েও চাল কিনতে পারেনি। প্রতিবেশী দেশ ভারত চাল রপ্তানির ক্ষেত্রে নজিরবিহীন টালবাহানা শুরু করে তখন আমাদের জাতীয় নেতাদের বোধোদয় হয়। তারা বুঝতে পারে জাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য কৃষিকে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৫ ই নভেম্বর, পহেলা অগ্রহায়ণ জাতীয় কৃষি দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ওই বছর সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। তারপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতা নেয়ার পর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পহেলা অগ্রহায়ণ পালিত হয় জাতীয় কৃষি দিবস।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় গত ৯ বছর ধরে কৃষিদিবস পালিত হচ্ছে তবুও কৃষকের কাছে নেই কৃষি দিবসের খবর। যে জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় কৃষির বিকল্প নেই তার উপর আমাদের অর্থনীতি কৃষি নির্ভর তবু ও আমাদের কৃষকরা আজও অবহেলিত।

বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ অর্জিত হয় কৃষি খাত থেকে। তার চেয়েও বড় কথা কৃষি এ দেশের জনমানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা প্রদানের প্রধানতম এবং অন্যতম উৎস। এখনও এ দেশের বিপুল জনসংখ্যার কর্মসংস্থানও হয়ে থাকে কৃষিকে অবলম্বন করেই।

২০০৮-২০০৯ সনে আমাদের চাল, গম ও ভুট্টার মোট উৎপাদন ছিল ৩৩৩.০৩ লাখ টন। গত ২০০৯-১০, ২০১০-১১, ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ সনে যথাক্রমে ৩৪৫.৯৬, ৩৬০.৬৫, ৩৬৮.৩৩৯ ও ৩৭২.৬৬ লাখ টনে উন্নীত হয়। আলু উৎপাদনের কথা যদি ধরা হয় তাহলে দেখা যায় যে, ২০০৮-০৯ থেকে ২০১২-১৩ সনে এর উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭.৪৬ লাখ টন থেকে ৮৬.০৩ লাখ টনে। এর পরবর্তি সময়কালে পেঁয়াজ, গম ও সবজির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ আরও গতিশীল হয়েছে। ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে ২৫% কম মূল্যে ৩৫টি জেলায় ৩৮ হাজার ৩২৪টি বিভিন্ন প্রকার কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। তাছাড়া বিএআরআই এবং বিআরআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতি মোট মূল্যের ৬০% পর্যন্ত ভর্তুকি মূল্যে কৃষকের নিকট সরবরাহ করে যাচ্ছে।

কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার জন্য সরকার বিদ্যুতের রিবেট প্রদান করেছে এবং বীজ, সারসহ ইক্ষু চাষিদের সহায়তা ভর্তুকি বছর বছর বৃদ্ধি করেছে।

সরকার বন্যা, আইলা, সিডর, মহাসেনসহ নানা রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফসল উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদান করেছে ও কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

কৃষি ক্ষেত্রে সাফল্য কম না। ফসল উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই কিন্তু কৃষি ক্ষেতে এতো এতো সাফল্যের ঢেউ কত খানি কৃষকের ঘরে গিয়ে লেগেছে? তাদের অবিস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয় নি।যে কৃষক এর কষ্ট করে ফলানো ফসলের ঘ্রানে আমরা মেতে উঠি নবান্ন উৎসবে। ঘরে ঘরে চলে পিঠা পুলি বানানোর প্রতিযোগিতা। সেই কৃষক এর নাকেই এখনও পৌছায়নি নবান্ন উৎসব এর ঘ্রান। কৃষক এর কাছেই পৌছায়নি কৃষি দিবস।

কৃষক বাচলে ই বাচবে কৃষি।  আর কৃষি বাচলে বাচবো আমরা। তাই নিজেদের স্বার্থে ই আমাদের কৃষি ও কৃষক এর দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ।

প্রজন্মনিউজ২৪/এম বিল্লাহ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ