আফগানিস্তানের মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০২:৩৬:১৮ || পরিবর্তিত: ০৮ নভেম্বর, ২০১৮ ০২:৩৬:১৮

আফগানিস্তানের মহাসড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ

ভাগ্য ভাল থাকলে গজনী থেকে গাড়িতে করে কাবুল পৌঁছাতে মোহাম্মদের তিন ঘন্টারও কম সময় লাগবে। কিন্তু যেসব এলাকায় তালেবান জঙ্গিদের তৎপরতা রয়েছে সেখান দিয়ে বিপদ সংকুল যাত্রার প্রস্তুতি নিতেই তার কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।

আফগানিস্তানে দূরপাল্লার যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এমনকি তা প্রাণঘাতি হয়ে দাঁড়ায়। কারণ মহাসড়কে প্রায়ই হতাহতের ঘটনা ঘটে। সড়কপথের যাত্রীদের তালেবান চেকপয়েন্ট, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ডাকাতি, অপহরণ, সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপাত্তাকর্মীদের লক্ষ্য করে রাস্তায় পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে চলাচল করতে হয়। খবর এএফপি’র।

কাবুল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চীয় নগরী গজনীতে যাওয়ার মহাসড়কটি অন্যতম মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক। আগস্ট মাসে তালেবান জঙ্গিরা এই পথেই হামলা চালায়। মোহাম্মাদ বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত ভ্রমণ তো কল্পনার বাইরে।

তার বয়স ২০ এর কোঠায়। তিনি নিয়মিত কাবুলে যাত্রা করেন। মোহাম্মাদ তার আসল নাম না। তালেবানরা যেন তার পরিচয় জানতে না পারে সেজন্য তিনি এই প্রতিবেদককে তার নাম গোপন রাখতে বলেছেন।

 তিনি অন্তত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই পরবর্তী ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। তিনি তার দাঁড়ি লম্বা করছেন। তিনি সাধারণত দাঁড়ি ছোট করে ছেঁটে রাখেন। দাঁড়ি লম্বা হয়ে গেলে তিনি তার মক্কেলদের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি তার বিশ্বস্ত আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের ফোন করেন। এরা কাবুলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সড়কে তালেবানদের গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে তালেবানদের ঘাঁটি। সেখানে তালেবানদের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

 তিনি বলেন, কাকে আপনি ফোন করছেন সে ব্যাপারে আপনাকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আপনাকে তালেবানদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতে পারে। অনেকেই তালেবানদের পক্ষে এ ধরনের কাজ করে থাকে। যাত্রা শুরুর দিনে মোহাম্মাদ পরিষ্কার ইস্ত্রি করা জামাকাপড় ছেড়ে পায়জামার মতো নোংরা সালওয়ার কামিজ পরে নেন, যাতে করে তাকে গ্রামের বাসিন্দা মনে হয়। তিনি তার মোবাইলের কলের তালিকা মুছে ফেলেন। কারণ নম্বরগুলো দেখে তালেবানরা তাকে সন্দেহ করতে পারে।

 তিনি বলেন, আপনি গাড়িতে চড়া মাত্রই নিরাপদে ও ঝামেলামুক্তভাবে কাবুলে আসতে পারবেন না। আফগান সৈন্যরা রাস্তায় চেকপয়েন্ট বসানোয় তালেবানরাও রাস্তায় ফাঁদ পেতে রাখতে পারে। তালেবান জঙ্গিরা প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র বা তাজকিরা চেক করে দেখে। মোহাম্মাদ বলেন, যদি তাজকিরাটা গজনির হয় তবে আপনি ঠিক আছেন। কিন্তু যদি না হয় তবে তারা আপনাকে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে সন্দেহ করবে। তারা তখন ধরে নেবে আপনি অন্য প্রদেশ থেকে সরকারের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছেন। ২০ অক্টোবর পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর মোহাম্মাদ দুটি তাজকিরা সাথে রাখেন। তালেবানের হুমকির মুখে গজনীতে নির্বাচন হয়নি।

তিনি বলেন, আমার ভীত শঙ্কিত হওয়ার অনেক কারণ আছে। মোহাম্মাদ বলেন, আপনি তালেবানের হাতে ধরা পড়লে,তারা আপনাকে প্রাণে না মারলেও জিম্মি করে মুক্তিপান আদায় করবে। যদি তারা আমাকে এক রাতের জন্যও আটকে রাখে, তবে আমার মা মারা যাবেন।

একটি টয়োটা করোলা ট্যাক্সিতে করে কাবুল থেকে গজনীতে যেতে মোহাম্মদের খরচ পড়ে প্রায় ৩ মার্কিন ডলার। এই মডেলের গাড়ি আফগানিস্তানের সর্বত্র দেখা যায়। আফগানরা একে গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহার করে। তিনি পরিচিত চালকদের গাড়িতেই সাধারণত ভ্রমণ করেন।

 মোহাম্মাদ সোম ও বুধবার ভ্রমণ করেন না। এই দুটি দিন আফগান সেনাবাহিনী প্রদেশগুলোতে সৈন্যদের জন্য রসদ সরবরাহ করে। রসদ নিয়ে আসার পথে মহাসড়কগুলোতেই মূলত তাদের ওপর তালেবান জঙ্গিরা হামলা চালায়।বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের শেষ সাপ্তাহিক কর্মদিবস। জঙ্গিরা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। কারণ সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতে তারা গজনী ছেড়ে অন্য প্রদেশে যায়। মোহাম্মাদ বলেন, যখনই সম্ভব হয় তিনি বোরকাপড়া নারীদের সাথে ভ্রমণ করেন। এজন্য নয় যে তিনি তাদের সঙ্গ পছন্দ করেন। কারণ এটা নিরাপদ। তালেবানরা সন্দেহ করে না।

কট্টর রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের প্রকাশে মেলামেলা নিষিদ্ধ। তালেবানরা নারীদের স্পর্শ করে না। তারা আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা থাকে। তালেবানরা তাদের তল্লাশী না করায় তারা তাদের মোবাইল ও অন্যান্য স্পর্শকাতর জিনিস বোরকার নিচে লুকিয়ে রাখতে পারেনপ্

প্রজন্মনিউজ২৪/জহুরুল

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ