অবৈধ ব্যাংকিং বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে  বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশিত: ০৭ নভেম্বর, ২০১৮ ০১:২৬:১৬

অবৈধ ব্যাংকিং বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে  বাংলাদেশ ব্যাংক

দি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডকে অবৈধ ব্যাংকিং ব্যবসা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানকে এসব কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লাইসেন্স ছাড়াই সারা দেশে সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া যায়।এরই মধ্যে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় এবং আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার আজমালুল হক কিউসির মতামত সংগ্রহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।আইন মন্ত্রণালয় বলেছে,অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১(সংশোধিত ২০১৩)-এ বর্ণিত বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন সাপেক্ষে ওই প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হক কিউসি বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটির বৈধ সমবায় কার্যক্রম অব্যাহত রেখে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিষয়টি দেখার আইনগত ক্ষমতা দেয়া আছে।প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইনগত দিক বিশ্লেষণ করে সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করি।

এরপরও প্রতিষ্ঠানটি নির্দেশনা না মানলে পরবর্তী যে পদক্ষেপ নেয়ার, বাংলাদেশ ব্যাংক তা নেবে।জানা গেছে, সমবায় সমিতির কার্যক্রম চালানোর লক্ষ্যে গঠন করা হয় দি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড।কিন্তু সমবায়ের আড়ালে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগও রয়েছে। পাশাপাশি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশে ১২০টি শাখার মাধ্যমে দেড় লাখ গ্রাহক থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে।

মাত্র তিন কোটি টাকার শেয়ার মূলধনের বিপরীতে হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী আমানত সংগ্রহের চিত্র উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে।এর আগে প্রতিষ্ঠানটির কাছে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জবাব চাইলেও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি।সূত্র বলছে,কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১১ অক্টোবর সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয়। উপমহাব্যবস্থাপক দেবাশীষ চক্রবর্তীর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে,

আপনাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য সঠিক প্রতিয়মান হয়নি।বাংলাদেশ ব্যাংক আপনাদের প্রধান কার্যালয়সহ কয়েকটি শাখা পরিদর্শন করেছে।এতে প্রাপ্ত তথ্য এবং আপনাদের দেয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক এই মর্মে অভিমতপোষণ করছে যে,আপনাদের কার্যক্রম ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫(৩) ধারা অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবসায় অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু ব্যাংক ব্যবসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো লাইসেন্স গ্রহণ করেননি, যা ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩২(১) ধারা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। চিঠিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৩(১) ধারার ক্ষমতাবলে দি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডকে সব ধরনের ব্যাংক ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়।কেবল সমবায় ব্যবসা সীমিত আকারে রাখতে পারবে বলে চিঠিতে বলা হয়।

সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামকে। চিঠিতে বলা হয়েছে, অবৈধ ব্যাংকিং পরিচালনাসহ কতিপয় অভিযোগ রয়েছে দি মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে।এর আগে প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধে করণীয় নির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সভা করে।

সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধন কার্যালয়, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ,মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি, সমবায় অধিদফতর, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন(বিটিআরসি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমবায় অধিদফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।পাশাপাশি জঙ্গি অর্থায়নের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে (বিএফআইইউ)।

পরবর্তী সময়ে সমবায় অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটির নাম থেকে ব্যাংক শব্দ বাদ দেয়ার নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি।উল্টো সমবায় অধিদফতরের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এটি বিচারাধীন। এছাড়া আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্রে, সাইনবোর্ডসহ কোথাও ব্যাংক শব্দ ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। জবাবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ নিয়ে মামলা চলছে।ফলে ব্যাংক শব্দটি এখন বাদ দেয়া যাবে না।

আজ পর্যন্ত ব্যাংক শব্দটি বাদ দেয়া হয়নি। একই সঙ্গে বিএফআইইউ ও কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়া অফিসের মাধ্যমে মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের কয়েকটি শাখা পরিদর্শনে গিয়ে অবৈধ ব্যাংকিং চালানোর প্রমাণ মেলে।একই অভিযোগে এর আগে বিধিগত ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সচিবকে চিঠি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সেখানেও এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ করা হয়। দুদক প্রতিষ্ঠানের নথিসহ অন্যান্য বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে।দেখা গেছে,প্র্রতিষ্ঠানটি সমবায় অধিদফতর থেকে ১৯৭৩ সালে দি বেঙ্গল কো-অপারেটিভ সোসাইটি অ্যাক্ট-১৯৪০এর বিধান অনুযায়ী সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধন নিয়েছে। এটি বাংলাদেশ ব্যাংক বা ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ অনুযায়ী কোনো ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত নয়।

এর আগে সর্বপ্রথম ১৯৮৯ সালে সমবায় অধিদফতর থেকে এই প্রতিষ্ঠানের নামের শেষে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার না করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। জানা গেছে, অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে প্রতিষ্ঠানটি আমানত সংগ্রহ করেছে সাড়ে ৯০০ কোটি টাকার ওপর। প্রায় দুই লাখ গ্রাহক রয়েছে।এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

প্রজন্মনিইজ২৪/ওসমান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ