প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর, ২০১৮ ১১:১৯:৩৮
ফাদার মারিনো রিগনের নিজ হাতে লাগানো 'সোনা ঝুড়ি' গাছটি ফুল দিতে শুরু করেছে কয়েক দিন আগে থেকেই। এ ফুলের গন্ধে ম-ম করছে চারপাশ। যেন প্রিয় মানুষটিকে স্বাগত জানাতেই সৌরভ বিলিয়ে দিয়েছে গাছটি। অবশেষে সেই প্রিয় গাছটির সান্নিধ্যে, তার প্রতিষ্ঠিত গির্জার পাশেই চিরশায়িত হলেন ফাদার রিগন। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর ৩৬৫ দিন পর প্রিয় বাংলার পলল মাটিতে আশ্রয় নিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভিনদেশি এই মানুষটি।এর আগে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্বপ্রাপ্ত ইতালির খ্রিষ্ট ধর্মযাজক ফাদার মারিনো রিগনকে মোংলায় সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন তিনি। তার শেষ যাত্রায় মোংলা উপজেলা পরিষদ মাঠে মানুষের ঢল নামে।
রোববার সকালে ঢাকা থেকে একটি হেলিকপ্টারে করে তার দেহাবশেষ মোংলার শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম চত্বরে আনা হয়। সেখান থেকে বিশেষ লাশবাহী ট্রাকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদ মাঠে নেওয়া হয়। এখানে ফাদার রিগনের মরদেহকে 'গার্ড অব অনার' দেওয়া হয়। পরে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত মারিও পালমা, মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম, প্রবীণ শিক্ষক ফ্রান্সিস সুদান হালদার, শেহলাবুনিয়া ধর্মপল্লীর পালক পুরোহিত শেরাফিন সরকারসহ অসংখ্য ভক্ত ও মোংলার সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এর পর ফাদার মারিনো রিগনের কফিন নেওয়া হয় শেহলাবুনিয়ার সেন্ট পলস হাসপাতাল ও সেন্ট পলস স্কুলে। সর্বশেষ শেহলাবুনিয়ায় রিগনের দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত ক্যাথলিক গির্জায় নেওয়া হয়। ধর্মীয় রীতিনীতি শেষে দুপুরের পর সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদান রাখার পাশাপাশি এদেশের মানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই মহান ব্যক্তি ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ইতালিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাংলাদেশ সরকার ফাদার রিগনের শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তার দেহাবশেষ বাংলাদেশের মাটিতে তারই স্থাপিত শেহলাবুনিয়া চার্চের পাশে সমাহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিন্নাভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
খ্রিষ্ট ধর্মযাজক হিসেবে তিনি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে ঘুরে শেষে তিনি মোংলার শেহলাবুনিয়া গ্রামে একটি চার্চ ও একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই গ্রামেই তার স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাসহ অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় এবং সেবা দেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত গোপালগঞ্জের এক চার্চে গোপনে চিকিৎসা ক্যাম্প স্থাপন করেছিলেন। তার এই ক্যাম্পে চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধা সুস্থ হয়ে পুনরায় রণাঙ্গনে গেছেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত উদ্দিন বীরবিক্রমও ছিলেন।দেশ স্বাধীনের পর তিনি মোংলার শেহলাবুনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।
এ সময় তিনি এ এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়াতে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানকার দরিদ্র মানুষের আবাসন, দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করতে ও আর্থ-সামাজিক জীবন উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন এই ধর্মযাজক। মুক্তিযুদ্ধে ফাদার মারিনো রিগনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৯ সালে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেয়। এর পর ২০১২ সালে দেওয়া হয় 'মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা'।বাংলাদেশে বসবাসের পর ফাদার রিগন বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার কৌতূহল ও নিবিড় ভালোবাসার জন্ম হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনাবলি, লালনের সঙ্গীত ও দর্শনের প্রতি বিশেষভাবে অনুরক্ত হন। তার মাধ্যমে ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গীতাঞ্জলি'সহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, জসীম উদদীনের 'নপীকাঁথার মাঠ' ও অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ, লালনের গানসহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম।
ফাদার মারিনো রিগন ২০১৪ সালে শেষবার অসুস্থ হয়ে খুলনার বিচিত্রা নামে একটি সেবা কেন্দ্রে ভর্তি থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা এসে তাকে ইতালিতে নিয়ে যান। সে সময় তিনি বারবার বলতে থাকেন আমি বাংলাদেশে থাকব। ভক্ত-অনুরাগীরা সে সময় ফাদার মারিনোকে কোথায় যাবেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, 'আমি স্বর্গে যাচ্ছি।' জবাবে ভক্তরা তাকে আবার বললেন, 'ফাদার, এ কথা বলতে হয় না, আর কখনো এ কথা বলবেন না।' তখন ফাদার বললেন, 'তোমরা জান না আমার স্বর্গ কোথায়? শোলাবুনিয়া আমার স্বর্গ, আমি শেহালাবুনিয়ায় যাব।'মিনা হালদার নামে ফাদারের ঘনিষ্ঠ এক অনুরাগী এসব কথা জানিয়ে বলেন, ফাদার তার স্বর্গের ঠিকানা শোলাবুনিয়ায় ঠিকই এসেছেন, তবে কফিনে চড়ে, নিথর দেহে।
প্রজন্মনিউজ২৪/রাকিব
কণ্ঠের সুরক্ষায় ঝাল-তৈলাক্ত খাবার পরিহারের পরামর্শ
আগামীকাল ফিটনেস পরীক্ষা, থাকছেন কি সাকিব?
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন, এলাকাবাসীর পিটুনিতে নিহত ২
সেভ দ্য রোডের ১৫ দিনব্যাপী সচেতনতা ক্যাম্পেইন সমাপ্ত
খালেদা জিয়া ডাল-ভাত খাওয়াতেও ব্যর্থ হয়েছিল : শেখ হাসিনা
তুরস্কে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন
জৌলুশ হারাচ্ছে বাংলা নববর্ষের হালখাতা
খুবিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে: কাদের
মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once