খুলনায় ১৩তম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ২১ অক্টোবর, ২০১৮ ১২:৫৪:৪৬

খুলনায় ১৩তম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা খুলনায় ১৩তম নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা

মোঃ মুস্তাইন কবির,খুলনা প্রতিনিধি: হেমন্তের পড়ন্ত বিকালে একটু বিনোদন কে না চাই! আর সেটা যদি হয় পরিবার নিয়ে উপভোগ্য ঐতিহ্যবাহী কোন খেলা, তাহলে তো কথায় নাই।

আজ শনিবার ২০ অক্টোবর,খুলনার রুপসা নদীতে গ্রামীণফোনের সৌজন্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক বিরাট নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা।বেলা ২টায় ১নং কাস্টমঘাট থেকে শুরু করে রুপসা ব্রিজে  গিয়ে শেষ হয় এ প্রতিযোগিতা।

খুলনা ও খুলনার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে লাখো লোকের সমাগম লক্ষ্য করা যায়।নদীর দুই পাড়ে,ব্রিজের উপর দাড়িয়ে তারা এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি উপভোগ করে।এছাড়া আরো অনেকে ট্রলার, স্পীড বোডে করে নদীতে ঘুরে দেখেন এই খেলা।

উক্ত বাইচ প্রতিযোগীতায় সারাদেশ থেকে ছোট বড় ২৪টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। নৌকার সাইজ বিবেচনায় বড়,মাঝারি এবং ছোট তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়।তারপর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। প্রতিটি দল থেকে বিজয়ী ১ম, ২য় এবং ৩য় দল জিতে নেয় নগদ পুরস্কার। এ পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় খুলনায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে রয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। খুলনা ও এর আশে পাশের এলাকার লাখ লাখ মানুষ রূপসা নদীর দুই পাড়ে উপস্থিত থেকে এই বাইচ উপভোগ করেন।

এবারের প্রতিযোগিতায় কয়রা, পাইকগাছা, তেরখাদা, কালিয়া, নড়াইল থেকে নয়টি বড় এবং সাতটি ছোট বাইচ দল অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর এলাকার আটটি মাঝারি নৌকা নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছিল।

বড় দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে এক লাখ টাকা জিতে নেয় খুলনার কয়রার সুন্দরবন টাইগার। দ্বিতীয় হয়ে পুরস্কার হিসেবে ৬০ হাজার টাকা পান খুলনার তেরখাদার ভাই ভাই জলপরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ৩০ হাজার টাকা পান একই এলাকার আল্লাহ ভরসা নামের নৌকা।

ছোট গ্রুপে প্রথম হয়ে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পান খুলনার পাইকগাছার ভাই ভাই দুরন্ত। দ্বিতীয় বিজয়ী দল কয়রার সোনার তরী পায় ৩০ হাজার টাকা। আর তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাইকগাছা, খুলনার দুরন্ত পায় ২০ হাজার টাকা।

বিশেষ মাঝারি দলের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে ৫০ হাজার টাকা জিতে নেয় খুলনার সোনাডাঙ্গার ফলিয়া এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় হিসেবে ৩০ হাজার টাকা পায় গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ার সোনার তরী। আর তৃতীয় পুরস্কার ২০ হাজার টাকা পায়  একই এলাকার মা-বাবার আশীর্বাদ।

সকালে এই আয়োজনকে ঘিরে মহানগরীতে আয়োজন করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি । খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এই র‌্যালি উদ্বোধন করেন।

পরবর্তীতে বিকেলে রূপসা ১ নং কাস্টম ঘাটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাইচ প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সভাপতি হিসেবে ছিলেন খুলনা জেলা প্রশাসক মো. হেলাল হোসেন। গ্রামীণফোনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির খুলনা সার্কেল বিজনেস হেড মো. আওলাদ হোসেন, হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং নাফিস আনোয়ার চৌধুরী, খুলনা সার্কেল মার্কেটিং হেড আবুল হাসনাত, খুলনা রিজিওনাল হেড আহসান হাবিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান রহিম, প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামানসহ অন্যরা।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান, খুলনা জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ।

অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের মো. আওলাদ হোসেন বলেন, গ্রামীণফোন সবসময়ই বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষক। গ্রামীণফোন মনে করে যে একটি দেশের উন্নয়নে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিরাট ভূমিকা আছে।

নগর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে-এই স্লোগান নিয়ে আমরা র্দীঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি।তাই আসুন নদীকে ভালোবাসি।

প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের উপ-পরিচালক বিল্লাল হোসেন খান, খুলনা সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রেজাউল করিম, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি নিজাম উর রহমান লালু, ও খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য মো. মোতালেব হোসেন মিয়া।

সন্ধ্যায় রূপসা ফেরি ঘাট চত্বরে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পুরো আয়োজনটি খুলনা সিটি করপোরেশন, খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বন বিভাগ, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, বিআইডব্লিউটিএ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি, রূপসা সেতু কর্তৃপক্ষ ও ট্রলার মালিক সমিতির তত্ত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নিরব

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ