প্রকাশিত: ০৮ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:৩৮:৫১
হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এলাকা হলেও ঠাকুরগাঁও-১ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। ১৯৯৬ সাল থেকে দলের প্রার্থী হয়ে চার নির্বাচনের তিনটিতেই আওয়ামী লীগকে জয় এনে দিয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতে চান। তবে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ‘মূল্যায়ন’ না করার অভিযোগ এনে মাঠে নেমেছেন আরও ছয় নেতা।
সদর উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্য থেকে একজন প্রার্থী বেছে নিতে হবে আওয়ামী লীগকে। সে ক্ষেত্রে মনোনয়ন বঞ্চিতদের ক্ষোভের মুখে পড়তে পারেন দলীয় প্রার্থী। এই আসনে বর্তমানে মোট ভোটার ৪ লাখ ২১ হাজার ৬২। এক লাখের ওপরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে।
নৌকা চান সাত নেতা
১৯৮৬, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের খাদেমুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে তাঁর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০১ সালে তিনি মির্জা ফখরুলের কাছে হারলেও ২০০৮ সালে আসনটি উদ্ধার করেন। সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরীকে হারিয়ে আবারও নির্বাচিত হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।
রমেশ চন্দ্র সেন এলাকায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবে সাংসদকে নিয়ে অসন্তোষ আছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। দলে সৃষ্টি হয়েছে বিভক্তিও। এ কারণে নৌকার মাঝি হতে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী তৎপরতা শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কোনো প্রয়োজনে সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনের কাছে গেলে তিনি গ্রাহ্য করেন না। এ কারণে অনেক নেতা-কর্মীর সঙ্গে সাংসদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছেন তিনি। এ দূরত্ব ঘোচাতে সাংসদ প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
ছাত্রলীগ, যুবলীগের রাজনীতি করে উঠে আসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মু. সাদেক কুরাইশী এই আসন থেকে এবার মনোনয়ন চান। ২০০৫ সাল থেকে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। আর ২০১৬ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
সাদেক কুরাইশী বলেন, ‘সমর্থকেরা সংসদ নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী হতে অনুরোধ করছেন। আমিও এটা অনুভব করে এ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। তবে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’
রমেশ চন্দ্র সেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মকবুল হোসেন। তিনিও এবার মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সাংসদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। তিনি এখন জাতীয় পর্যায়ের বড় পদে থাকায় এলাকায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। তাঁকে নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমাকে চাইছেন বলে আমি প্রার্থী হতে চাচ্ছি।’
২০১৪ সালের সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন সাবেক জেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুণাংশু দত্ত। নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১৯ হাজার ভোট পেলেও হেরে যান। তিনিও সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
অরুণাংশু দত্ত বলেন, দলের তৃণমূল কর্মিসভায় সাংসদ কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়ছেন। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাংসদের ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের তরুণ-যুবক ও মুরব্বিরা তাঁর সঙ্গে আছেন। তাঁকে প্রার্থী করা হলে তিনি যেকোনো প্রার্থীর চেয়ে বেশি ভোট পাবেন। তবে মনোনয়ন না পেলেও দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে যাবেন।
এ ছাড়া মনোনয়ন দৌড়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় ও আইনবিষয়ক সম্পাদক ইন্দ্রনাথ রায়ও রয়েছেন। গত পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক তহমিনা মোল্লাও প্রার্থী হতে চান।
সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘আমি মাঠপর্যায়ে সব সময় সক্রিয় আছি। এলাকায় অনেক উন্নয়নকাজ করেছি। আমার বিশ্বাস, এসব বিচারে দল আমাকেই এবারও নির্বাচন করার সুযোগ দেবে। আর নির্বাচন করার সুযোগ পেলে এখানে অবশ্যই নৌকা জয়ী হবে।’
বিএনপিতে শুধুই ফখরুল
পুরোপুরি রাজনীতি শুরুর আগে ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর বেশ সুনাম ছিল। ফলে নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে তাঁর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছেন।
১৯৮৯ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ফখরুল। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান। তবে ২০০১ সালে জয়ী হওয়ার পর বিএনপি সরকারের কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ফখরুল। পাঁচ বছর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের পর ভারমুক্ত হন মির্জা ফখরুল। এবারের নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তিনি সুযোগ পেলেই এলাকায় এসে ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। মতবিনিময়ও করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে। তবে মামলা ও পুলিশি হয়রানির কারণে সেভাবে মাঠে নামতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, ‘বিএনপির মহাসচিব আমাদের অভিভাবক। এই আসনে তাঁর কোনো বিকল্প নেই। সুষ্ঠু ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। আর মামলার কারণে তাঁকে যখন নির্বাচনে অযোগ্য করা হবে, তখন বিকল্প প্রার্থী নিয়ে ভাবা যাবে।’
অন্য দলগুলোও তৎপর
ঠাকুরগাঁও-১ আসনে জামায়াতের বেশ কিছু সমর্থক রয়েছে। জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনের কারণে তারা বরাবরই বিএনপির প্রার্থীকে সমর্থন দেয়। জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন হলে এবারও বিএনপি দলটির সমর্থন পাবে। তবে জোট না হলে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. দেলাওয়ার হোসেন এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেলাওয়ার হোসেনের বড় ভাই ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর।
এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রাজী চৌধুরী। তিনি এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইমরান হোসেন চৌধুরী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জেলা সভাপতি মনসুর আলীও দলের পক্ষে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রজন্মনিউজ২৪/নিরব
রোজাদারের জন্য হাদিসে যেসব সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে
উচ্চমূল্যের মুঠোফোন প্যাকেজ গ্রাহকদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে
ভারত বিষয়ে কৌশল ঠিক করছে বিএনপি
ঈশ্বরদী জংশনে সাহরিতে ট্রেন যাত্রীদের পকেট কাটলো দোকানিরা
প্রধানমন্ত্রী মোদির বাড়ি ঘেরাও কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত দিল্লি
শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদে ১নং ব্যালটে দোয়া ও সমর্থন প্রার্থী..আনোয়ার
সেনেগালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পাচ্ছেন বিরোধী প্রার্থী ফায়ে
ব্যবসা-বাণিজ্যেই বেশি আগ্রহ বিসিবির!