মোহনীয় বাঁশির সূর

প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর, ২০১৮ ০২:০৬:৫৯

মোহনীয় বাঁশির সূর

পাহাড়ের গা বেয়ে ঝিরিঝিরি শব্দে অবিরাম বয়ে যাচ্ছে ঝর্ণাধারা । তার বয়ে যাওয়ার কোন শেষ নেই। সেই পাহাড়ের নিকটবর্তী শ্যামল-শোভায় ছেয়ে আছে সফেদ বাগান।

সেই বাগানে সারি-সারি সাজানো হরেক রকমের গাছ, বহুদিন দিন ধরে দাড়িয়ে আছে মহাকালের সাক্ষী হয়ে। বাগানের অদূরে পাহাড়ের কাছাকাছি অসংখ্য ডালপালা মেলে আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশালাকৃতির এক বটগাছ।

আসে-পাশের গাছ থেকে প্রতিমুর্হুতে ভেসে আসে অসংখ্য পাখপাখালির মধুর গান। আর এই বট গাছের নিচু হয়ে থাকা একটি ডালে বসে প্রতিদিন মধুর-মোহনীয় সূরে বাঁশি বাজায় রাখাল বালক রাসু।প্রতিদিন গরু চরাতে এসে এই গাছের ডালে বসে একমনে বাঁশি বাজায় রাসু। অর্পূব সে বাঁশির সূর, আলোড়ন তুলে পুরো জঙ্গল জুড়ে এবং অদূরে অবস্থান করা পাহাড়ি ঝর্নার সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়।

সেই বাঁশির সুর শুনে মোহিত হয়ে যায়, আশে-পাশের গাছগুলোয় অবস্থান করা সকল পাখ-পাখালি।উড়োউড়ি বন্ধ করে তারা নিবীড় মনে উপভোগ করে রাখালের সুধা মেশানো সুর।সেই পাহাড়ের পাশে ধানক্ষেতে কাজ করা কৃষক-কৃষাণীরা তন্ময় হয়ে শুনে রাখালের বাঁশির মধুর সূর আর ভাবে, এ যেন তাদের চির বঞ্জিত জীবনের গান, তাদের বিরহ-ব্যাথার গান।

মনে পড়ে যায় আপনজনদের হারানো পুরনো দিনের কথা। নিজেদের অজান্তেই চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে চোখের লোনা জল।প্রায়শই বাঁশি বাজাতে বাজাতে রাখালের সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যেত সে টের পেত না। এবং গভীর রাতে সে বাড়ি ফিরত। তার গরুগুলো সন্ধ্যে হলেই বাড়ি ফিরে যেত রাখালকে ছাড়াই।

সেই বোনের শেষপ্রান্তে ছিল এক শিমুল গাছ সেই শিমুল গাছে বাস করত একদল পরি। পরীর দল প্রতিদিন এসে রাখালের বাঁশির মোহনীয় সূর উপভোগ করত।রাখাল যদি কোনদিন বনে না আসতো তাহলে বনের পাখিদের,পরীদের সারাটা দিন ক্যামন যেন নীরবে, বেদনার সাথে অতিবাহিত হত।

একবার বনের ভিতর বাঁশি বাজাতে বাজাতে রাখালের অজান্তে গভীর রাত হয়ে ‍যায়। সে রাতটি ছিল পূর্ণিমার রাত।আকাশে ছিল ঝকঝকে একটা থালার মত হাসি মাখা চাঁদ।দুহাত মেলে জ্যোছ্না ছড়িয়ে দিচ্ছিল পুরো বন জুড়ে।

সমস্ত বন জুড়ে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল।এমনি উপভোগ্য মুর্হূতে পরীর দল এসে দাঁড়ায় রাখাল বালকের সামনে। এবং তারা তাকে আমন্ত্রণ জানায় পৃথিবীর শেষপ্রান্তে পরীদের দেশে ভ্রমণে যাওয়ার জন্য।

প্রথমে রাখাল বালক তাদেরকে দেখে কিছূটা ভয় পেয়ে যায়, কিন্তু পরীদের সুন্দর ব্যবহার দেখে সে তাদের দেশে ভ্রমনে যেতে রাজি হয়।এবার পরীর দল রাখাল বালককে তাদের ডানার উপরে নিয়ে ভাসতে থাকে এবং বন-পাহাড় ছাড়িয়ে অসীম আকাশের দিকে রওয়ানা হয়

কয়েক ঘন্টা পর তারা মহাকাশে পরীদের দেশে পৌঁছে যায়। সে দেশে পরীরা তাকে দেখে অবাক হয়ে লক্ষ্ করে, এ আবার ক্যামন প্রাণী আমাদের মত ডানা নেই।পরীদের রাজদরবারে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।রাজা-রাণী তার হাতে থাকা বাঁশিটি বাজাতে অনুরোধ করেন।

রাসু তার হাতে থাকা বাঁশি অতি মধুর সূরে বাজাতে আরম্ভ করে। তার বাঁশির সূর শুনে তন্ময় হয়ে ওঠে পরীদের রাজ্য।লক্ষ লক্ষ পরী তার চারপাশ জুড়ে ভীড় জমাতে থেকে। পরীরা তাকে অতি যত্নের সাথে আদর-আপ্যায়ন করে।

পরীদের রাজা-রাণীর ছিল এক সুদর্শনা,গুনবতী-রুপবতী রাজকুমারী। সে রাখাল বালক রাসুর প্রেমে মগ্ন হয়ে যায়, এবং পরীদের রাজার পক্ষ থেকে রাসুকে প্রস্তাব জানায় তাদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে করার জন্য।

কিন্তু রাসু তাতে অসম্মতি জানায়, এবং সে পৃথিবীতে ফিরে আসতে চায়। পরীরা রাসুকে অত্যন্ত দামী এবং মূল্যবান,হীরা-জহরত উপঢৌকন হিসেবে দিতে চায়।কিন্তু রাসু সেসব উপঢৌকন নিতে অসম্মতি জানায়।সে শুধূ পরীদের রাজ্য থেকে হীরের একটি বাঁশি নিতে সম্মত হয়।

পরীরা আবার তাকে ডানার উপর ভাসিয়ে নিয়ে পৃথিবীতে তার প্রিয় বাশিঁ বাজানোর সেই বনে নামিয়ে দেয় এবং আবার দেখা হবে বলে নিজ দেশের পানে উড়াল দেয়।রাখাল আবারো তার মোহনীয় সূরের মূর্ছনায় পুরো বনকে মোহিত করে তুলে ।

লেখক:-মো:নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান         

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ