বাঘের ভয়ঙ্কর গর্জন

প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর, ২০১৮ ০২:২৫:৪৬

বাঘের ভয়ঙ্কর গর্জন

ষাটের দশকের কথা।ঘন জঙ্গলে আবৃত পাহাড় ঘেষা প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যে ভরপুর,অপরুপ একটি গ্রাম নাম শ্যামপুর। গ্রামে মোট দশ ঘর লোকের বাস।

সেই গ্রামে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে ছিল না কোনরকম দ্বন্দ্ব-কলহ।সখ-দু:খ,হাসি-কান্নায় সকলে মিলে এক হয়ে থাকত। একজনের বিপদে অন্যসকলে এগিয়ে আসত কোনরকম দ্বিধা-দ্বন্দ ছাড়াই।

সেই গ্রামের পশ্চিমে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল কয়েকটি ছোট পাহাড়। আর পাহাড় সংলগ্ন শাল এবং ঝাউ  গাছের ঘন জঙ্গল।বনের উত্তরে বয়ে চলছিল ছোট্ট  একটি নদী। শ্যামপুর গ্রামের লোকেরা সকলেই কৃষি কাজ করে জীবিকা র্নিবাহ করত।কেউ কেউ আবার জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে কোনরকমে জীবন-যাপন করত।

সেই জঙ্গলে বিভিন্ন রকম প্রাণীর দেখা মিলত। তারা প্রায়ই লক্ষ করত যে পাশের ছোট নদীতে হরিণের ছোট-ছোট দল এসে পানি পান করছে।বাঘ সেই সব হরিণের উপর হামলা করত এবং তাদের ধরে নিয়ে যেত।

শেয়াল,পাহাড়ি শেয়াল,বাঁদর,বেজি,শূকর বিভিন্ন প্রজাতির ভয়ঙ্কর সাপ ছাড়াও অনেক রকমের প্রাণী সেই জঙ্গলে বসবাস করত।এবং সবচেয়ে যে বিষয়টিতে তারা ভীত থাকত সেটি হচ্ছে পাহাড়ের অপর পাশে ঘন ঝাউবনে কয়েকটি বাঘ তাদের ছোট-ছোট বাচ্চা নিয়ে বসবাস করত।

আর এই বাঘের দলের প্রত্যেক দিনের খাদ্য ছিল হরিণ,গরু,ছাগল ইত্যাদি প্রাণীর তরতাজা মাংস। গ্রামের লোকেরা বাঘের উপস্থিতি টের পেলেও সহজে বাঘের দেখা মিলত না।কিন্তু প্রায়ই তাদের পোষা গৃহপালিত প্রাণীগুলো বাড়ির আশেপাশের মাঠ থেকে হারিয়ে যেত। আর গভীর রাতে পাহাড়ের ওই ধার থেকে প্রায়ই শোনা যেত বাঘের ভয়ঙ্কর গরজন । সেই শব্দ শুনে গ্রামের লোকজনের ভয়ে হ্রদকম্পন শুরু হয়ে যেত।

তারা বাঘের ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিত, এবং তাদের বাড়ির আশে-পাশে বিভিন্ন জায়গায় শুকনো কাঠ দিয়ে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে রাখত।

একদিন সন্ধ্যাবেলা জমির শেখ তার বাড়ির ভিতরে অবস্থান করছিলে এমন সময় হঠাৎ করে বাঘের তীব্র আঁষটে গন্ধ পান।এবং তিনি বুঝতে পারেন বাঘ তার বাড়ির নিকটে অবস্থান করছে।

এ ঘটনায় তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন এবং বাড়ির লোকজন সহ ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দেন।এসময়বাড়ির বাহিরে তার একটি বলদ গরু খুঁটিতে বাধাঁ ছিল।বাঘ গরুটির উপর হামলা করে এবং গরুটিকে মেরে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যায়।

গরু বিকট শব্দে চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায়নি। সেই জঙ্গলের পাশ ‍দিয়ে একটি রাস্তা বয়ে গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে লোকজন দুর-দুরান্তে যাতায়াত করত।

একরাতে একজন ঘোরসওয়ার সেই রাস্তা দিয়ে গমন করছিল।ওই মুহূর্তে ঝোপের ধারে লুকিয়ে থাকা একটি বাঘ তাদের উপর হামলা করে।এবং ঘোড়ার উপর থেকে লোকটিকে বিদ্যুৎবেগে টেনে নিয়ে যায়।লোকটির ঘাড় মটকে রক্ত পান করে আর সারারাত উল্লাশ করে।

একবার আষাঢ় মাসে তীব্র বৃষ্টি হয় এবং এতে বন জুড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়, সেই বন্যায় বাঘের একটি বাচ্চা ভেসে যায়।বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ার ফলে পুরো বন জুড়ে বাঘের ভয়ঙ্কর গরজন এবং দৌড়াদৌড়ি ‍শুরু হয়।এবং একটানা কয়েকদিন যাবত সেই চিৎকার অব্যাহত থাকে।

সেই সময়টায় গ্রামবাসী কয়েকদিনের জন্য অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ির ভিতরেই অবস্থান করে ।একদিন দুজন লোক জঙ্গলের ভিতর দিয়ে গরুর গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিল হঠাৎ বাঘ তাদের উপর আক্রমন করে এবং একজন লোককে টেনে নিয়ে যায়।অপরজন কোনমতে প্রাণনিয়ে ফিরে আসে।মাঝে-মাঝে একটি বাঘ পাহাড়ের উপরে শিমুল গাছের উপরে উঠে ভয়ঙ্কর চিৎকার দিত।

সময়ের ব্যবধানে সেখানে দুর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসে জঙ্গল কাটতে শুরু করে এবং ইট ভাটা তৈরী করে। এতে ওই এলাকার বন জঙ্গলের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে এবং ধীরে ধীরে বাঘসহ অন্যান্য প্রাণী সেখান থেকে অন্যত্র পালাতে শুরু করে।

একপর্যায়ে সেখানকার সকল বাঘ বিলুপ্ত হয়।

লেখক:মো:-নুরুজ্জামান

প্রজন্মনিউজ২৪/জামান

  

 

  

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ